পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in ○○br মানিক রচনাসমগ্ৰ হেরম্ব অভিভূত হয়ে লক্ষ করল, পরস্পবের চােখের দিকে চেয়ে তারা আর চােখ ফিরিয়ে নিচ্ছে না। সুপ্রিয়ার চোখে গভীর বিদ্বেষ, তাই দেখে আনন্দ অবাক হয়ে গেছে। দুজনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে হেরম্ব সসংকোচে বলল, আমার খিদে পায়নি আনন্দ, একটুও পায়নি। আনন্দ অভিমান করে বলল, পায়নি? তা পাবে কেন ? আমি কিছু বুঝিনে কিনা! হেরম্ব তখন নিরূপায় হয়ে জিজ্ঞাসা করল, এবার কী কর্তব্য সুপ্রিয়া ? তাকে মধ্যস্থ মেনে হেরম্ব একরকম স্পষ্টই ইঙ্গিত করল যে, সে যখন বয়সে বড়ো, আনন্দের কাছে হার স্বীকার কবে তারই উদারতা দেখানো উচিত। সুপ্রিয় রাগ করে বলল, আমি জানিনে। এখান থেকেই খেয়ে যাই, কী বলিস ? তাও আমি জানিনে । হেরম্ব নির্বাকি হয়ে গেল। আনন্দ একটু হেসে বলল, আচ্ছা, আপনি যে এত জোর খাটাচ্ছেন, আপনার কী জোর আছে বলুন তো? ও আমাদের অতিথি, আপনার তো নয়। আমি ওর বন্ধু। আনন্দ আবও ব্যাপকভাবে হেসে বলল, আমিও তো তাই! হেরম্ব কখনও কোনো কারণে সুপ্রিয়ার মুখে হিংস্ৰ-ব্যঙ্গ শোনেনি, আজ শূনল, হঠাৎ মুচকে হেসে সুপ্রিয়া বলল, তুমি ?—বলে, এই একটিমাত্র শব্দে আনন্দকে একেবাবে উড়িয়ে দিয়ে ক্ষণিকেব বিরাম নিযে সে যোগ দিল, ওব সঙ্গে, আমাব যেদিন থেকে বন্ধুত্ব, তোমাব তখন জন্মও হযনি। আনন্দ আশ্চর্য হয়ে বলল, যান ! আমার জন্মের সময় আপনার আর কত বন্যাস ছিল ?—একত আর বড়ো হবেন আপনি আমার চেয়ে ? আপনার বন্যাস উনিশ কুড়িব বেশি কখনও নয়। সুপ্রিয়া বুঝতে পারল না, হেরম্বই শুধু টেব পেল আনন্দেব এ প্রশ্ন কৃত্রিম নয়, সে পবিহাস করেনি। সুপ্রিযার মুখ অন্ধকাব হয়ে গেল। সে যেন হঠাৎ ধমক দিয়ে বলল, তুমি ছেলেমানুষ তাই তোমাকে কিছু বললাম না। বয়সে যাবা বড়ো আর কখনও তাদের সঙ্গে এ রকম ঠাট্টা কোবো না। সুপ্রিয়ার ধমকে মুখ স্নান করে আনন্দ যা রিলেছিল তার কোনো মানে নেই,--শুধু একটি “ আচ্ছ!”। হেরম্ব ভালো করেই জানে সুপ্রিয়ার কাছে সে যে অপমান পেয়েছে তার জন্য আনন্দ তাকেই দাবি করবে। দায়ি করে সে হয়ে থাকবে বিষঃ। আনন্দের বর্তমান মানসিক অবস্থায় সহজে এব। প্ৰতিকার ও করা যাবে না । গাড়িতে সুপ্রিয়ার সামনের আসনে বসে আনন্দের কথা ভাবা চলছিল। সে উঠে পাশে এসে বসায় হেরম্বের আবে সে ক্ষমতা রইল না। পাশে বসাই নিযাম, না ? হেরম্ব একটু বেসে বলল, অন্তত অনিয়ম নয়। - সুপ্রিয়া হেসে বলল, আসল কথা, কথা বলব। কে একটা লোক পিছনে উঠে বসেছে, শুনতে পাবে বলে সামনে এগিয়ে এলাম। তোর প্রগতিব অর্থ খুব গভীর, সুপ্রিয়া। সুপ্রিয়া একটু অসন্তুষ্ট হয়ে বলল, আপনার এই যে কথা বলার ঢং মন্ত্রদাতা গুরুর মতো, চিবকাল এই সুর শূনে “তুমাসছি। হালকা কথা বলেন, তাও উপদেশের মতো ভারী আওয়াজে। একটী কথা ভাবতে ভাবতে অনাকথার জবাব অমনি করেই দিতে হয়। ও, আচ্ছা, ভাবুন ; আমি চুপ করলাম। বাড়ির দাবজায় গাড়ি থামা পর্যন্ত সুপ্রিয়া, সত্যই চুপ করে রইল। যেখানে তারা বাড়ি নিয়েছে সেখান থেকে সমুদ্রের আওয়াজ শোনা যায় বটে, বাড়ির ছাদে না উঠলে সমুদ্র দেখা যায় না। এবারও