পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOOkS. in দিবারাত্রির কাব্য - Ꮤ) OᏋᏫ সুপ্রিয়া হেরম্বকে বাড়ির বাজে অংশ পার করিয়ে একেবারে তাব শোবার ঘরে নিয়ে হাজির করল। হেরন্ম লক্ষ করল ঘরখানা দোকানের মতো সাজানো নয়, শয়ন ঘরের মতোও নয়। বিদেশ বলে বোধ হয়, ঘরে আসবাব বেশি নেই, অস্থায়ী বলে সুপ্রিয়ার নেই ঘর সাজাবাব উৎসাহী। উৎসাহের অভাব ছাড়া অন্য কাবণও হয়তো আছে। এটা যদি সুপ্রিয়ারই শয়নকক্ষ হয় তবে সে এখানে একাই থাকে। ছোটো চৌকিতে যে বিছানা পাতা আছে সেটা একজনের পক্ষেও ছোটো। অশোক যদিও এখন বিছানায় চিত হয়ে পডে আছে, এ অধিকার হয়তো তার সাময়িক, হয়তো এ তার নিছক গায়ের জোর। এই সব পলকনিহিত অনুমানের মধ্যে হেরম্ব কিন্তু টের পাচ্ছিল অশোকের গায়ের জোর বড়ো আর নেই। সে দুর্ভিক্ষ-পীড়িতের মতো শীর্ণ হয়ে গেছে। অশোক উঠল না। বলল, হেরম্ববাবু যে! হেরম্ব বলল, আমিই। তোমাকে চেনা যাচ্ছে না, অশোক। যাবেও না। মবে ভৌতিক অবস্থা প্রাপ্ত হয়েছি যে ! এ যা দেখছেন, এ হল সূক্ষ্ম শরীর। সূক্ষ্ম সন্দেহ নেই। আজ্ঞে হঁ্যা। আপনার পত্রে জানা গেল এখানকার জল-হাওয়া ভালো। উনি মনে করলেন, আমার অবস্থা বুঝে পুরীতে আমাদের নেমস্তন্নাই বুঝি করছেন ওই কথা লিখে। তাই জোর করে টেনে এনেছেন। ছুটি জন্য বেশি লেখালেখি করতে গিয়ে চাকরিটি প্রায় গিয়েছিল, মশায়। আনন্দের সঙ্গে কথা বলার সময় সুপ্রিয়ার কণ্ঠস্বরে যে ব্যাঙগ স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল, অশোকের কথায় যেন তারই ভদ্র, গোপন-করা ধ্বনি শোনা যায়। হেরম্ব একটু সাবধান হল। তোমার আঙুল কি হল, অশোক ? অশোকের ডান হাতের মাঝের আঙুলদুটি কাটা। ঘা শুকিয়ে এসেছে কিন্তু আরক্তভােব এখনও যাযনি, শুকনো ঘায়েব মামড়ি তুলে ফেললে যেমন দেখায়। এ বিষয়ে অশোকের নিজের কৌতুহল বোধ হয় এখনও যায়নি, হাতটা চোখের সামনে ধরে সে কাটা আঙুলের গোড়া দুটি পরীক্ষা করে নিল। বলল, একজন ছোরা মেরে উড়িয়ে দিযেছে। ছোবা, অশোক ? উহু, দেশি দা--ভয়ানক ধার। আটকাতে গিয়ে আঙুল দুটাে উড়ে গেছে। উডে যাওয়া উচিত ছিল মাথাটাব, কেন যে গেল না ভাবলে মাথাটা আজও গরম হয়ে ওঠে। সুপ্রিয়া বলল, মাথা গরম কবে। আর কােজ নেই। দোষ তো তোমার। থানাভরা সেপাই জমাদার, তবু নিজে ডাকাতেব সামনে গলা এগিযে দেবে, বিবেচনা তো নেই। অশোক নির্মমভাবে হাসল। বলল, বিবেচনা করেই গলা বাড়িয়ে ছিলাম, কর্তবোর খাতিরে। তুমি যা ভেবেছিলে তা একেবাবেই সত্য নয। আমি, কিছুই ভাবিনি। ভাবোনি ? তবে যে ডাকাত ধরতে গেলেই বলতে জেনে-শূনে প্ৰাণটা দিতে যাচ্ছি নিজের, খুন হতে যাচ্ছি সাধ করে? আমনি করে অমঙ্গল ডেকে আনতে বলেই তো আঙুল দুটাে আমার গেল। সুপ্রিয়া বিবৰ্ণ মুখে বলল, কী সব বলছ তুমি ? চুপ করো। হেরম্ব এতক্ষণ ভেতরে ভেতরে রেগে আগুন হয়ে উঠেছে। মানুষকে বাঙ্গ করার যে ধারালো ক্ষমতা সে প্ৰায় পরিত্যাগ করেছিল, এবার তাই সে কাজে লাগাল । আহা বলুক না, সুপ্রিয়া, বলুক। অতিথিকে অশোক এন্টারটেন কবছে বুঝতে পারিস না ? গৃহস্বামীর এই তো প্রথম কর্তব্য। ওর কথা শুনো না, অশোক, তোমার যা বলতে ইচ্ছা হয় এমনি রস দিযে বলো। তোমার কর্তব্য তুমি করবে। বইকী!