পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in জননী। SS তিনটি ছেলে লইযা মন্দা বেশি দিন। এখানে থাকিলে বড়োই তাহারা অসুবিধায় পড়িবে। শ্যামা অবশ্য এ সব অসুবিধার কথা ভাবিত না, অত ছোটো মন তাহার নয়,--যদি তাহার খোকাটি না আসিত। মন্দার জন্য তাহারা স্বামী-স্ত্রী না হয় কিছুদিন কষ্টই ভোগ করিল, কারও খাতিরে খোকাকে তো তাহারা কষ্ট দিতে পরিবে না! ওর যে ভালো জামাটি জুটিবে না, দুধ কম পডিবে, অসুখে-বিসুখে উপযুক্ত চিকিৎসা হইবে না, শ্যামা তাহা সহিবে কী করিয়া ? নিজের ছেলের কাছে নাকি ননদ ও তাহার ছেলেমেয়ে! যতদিন সম্ভব ঠিক ততদিনই মন্দাকে সে এখানে থাকিতে দিবে। তারপর মুখ ফুটিয়া বলিবে, আমাদের খরচ চলছে না ঠাকুরঝি। বলিবে, অভিমান চলবে কেন ভাই ? মেয়েমানুষের এমনি কপাল। এবার তুমি ফিরে যাও ঠাকুরজামায়ের কাছে। হিসাবে শ্যামাব একটু ভুল হইয়াছিল। কয়েকদিন পরে রাখালের পত্ৰ আসিবামাত্র বনগা যাওয়ার জন্য” মন্দা উতলা হইয়া উঠিল। সে কোনোমতেই বিশ্বাস করিতে চাহিল না, রাখাল আবার বিবাহ কবিযাছে। বাবা-বাবা সে বলিতে লাগিল, সব মিছে কথা। সে বনগা যায় নাই বলিয়া রাগিয়া রাখাল এ রকম চিঠি লিখিয়াছে। এ কথা কখনও সত্যি হয় ? তবু, এ বকম অবস্থায় তাহার অবিলম্বে বনগা যাওযা দবকাব। আমায় আজকেই বেখে এসো দাদা, পায়ে পড়ি তোমার। এদিকে, সেদিন আবেক মুশকিল হইয়াছে। বাত্রে শ্যামার ছেলের হইয়াছিল জুব, সকালে থামোমিটার দিবা; "-"গা গিয়াছে জুব একশো দুই-এব একটু নীচে। ছেলে কোলে করিয়া শেষরাত্ৰি হইতে শ্যামা, ঠায় বসিয্য কাটাইয়াছে। ভাবিয়া ভাবিয়া সে বাহিব করিয়াছে যে বারোকে চার দিয়া গুণ করিলে য৩ হয়, ছেলের বযস এখন তাহাব ঠিক ততদিন। আগেব খোকাটি তাহার ঠিক বারোদিন বাচিযাছিল। বনগাঁ অনেক দূর, শীতলকে শ্যামা ছাপাখানায় পর্যন্ত যাইতে দিতে রাজি নয়। শীতল বলিল, দুদিন পরেই যাস মন্দা। চিঠিপত্র লেখা হােক, একটা খবর দিয়ে যাওয়াও তো দরকার। খোকার জুরাটাও ইতিমধ্যে হয়তো কমবে। মন্দা শুনিল না। বাড়িটা হঠাৎ তাহার কাছে জেলখানা হইয়া উঠিয়াছে। সে মিনতি করিয়া বলিতে লাগিল, আজ না পাের, কাল আমাকে তুমি রেখে এসো দাদা। সকালে রওনা হলে বিকেলের গাড়িতে ফিবে আসতে পারবে তুমি! শীতল বলিল, বাস্ত হোস কেন মন্দা, দেখাই যাক না কাল সকাল পর্যন্ত, খোকার জুব আজ দিনেব মধ্যে কমে যেতেও পাবে তো । বিকালে খোকব জ্বর কমিলি, শেষবাত্রে আবার বাডিয়া গেল। সকালে মন্দা বলিল, আমার তবে কী উপায হবে বউ ? আমি তো থাকতে পারি না। আর। দাদা যদি নাই যেতে পারে, আমায গাড়িতে তুলে দিক, ওদের নিয়ে আমি একাই যেতে পারব। শ্যামা রাত্রে ভাবিয়া দেখিয়াছিল, মন্দাকে আটকাইয়া ব্যাখা সংগত নয়। উদবেগ ও আশঙ্কায় সে এখন বনগী যাওয়াব জন্য ব্যাকুল হইয়াছে, পরে হয়তো মত পরিবর্তন করিয়া বসিবে, আব্ব যাইতেই চাহিবে না। বলিবে, আমন স্বামীর মুখ দেখার চেয়ে ভাইয়ের বাড়ি পড়িয়া থাকাও ভালো। বোনকে পুষিবার ক্ষমতা যে শীতলের নাই এ তো আর সে হিসাব করিবে না। তার চেয়ে ও যখন যাইতে চায়। ওকে যাইতে দেওয়াই ভালো। একদিনে তাহার খোকার কী হইবে? শীতল তো ফিরিয়া আসিবে রাত্রেই। এই সব ভাবিয়া শ্যামা শীতলকে বনগাঁ যাইতে বাধা দিল না। জিনিসপত্র মন্দা আগের দিনই বঁধিয়া-হাঁদিয়া ঠিক করিয়া রাখিয়াছিল। একচড়া আলুভাতে ফুটাইয়া কালু ও কানুকে খাওয়াইয়া, কোলের ছেলেটির জন্য বোতলে দুধ ভরিয়া লইয়া শীতলের সঙ্গে সে রওনা হইয়া গেল। গাড়িতে ওঠার সময় মন্দা একটু কঁদিল, শ্যামাও কয়েকবার চোখ মুছিল।