পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOOkS. in দিবারাত্রির কাব্য \ΟΣ Σ সুপ্রিয়া খুশি হয়ে বলল, সত্যি ? কখন ? এই মাত্র। খিদেয়। অন্ধকার দেখছিলাম। খিদেয় ? আমাকে না দেখে নয় ? হেরম্ব হাই তুলে বলল, একটা বালিশ এনে দে তো, ঘুমোব। সুপ্রিয়া একটি অত্যন্ত কুটিল প্রশ্ন করল। কেন ? রাত জাগেন বুঝি, ঘুমোবার সময় পান না ? হেরম্বও সমান কুটিলতার সঙ্গে জবাব দিল, সময় পাই বইকী। রাত দশটা বাজতে না বাজতে ওখানকার সবাই, আনন্দ সুদ্ধ, ঢুলতে ঢুলতে যে যাব ঘবে গিয়ে দবাজা দেয়। তারপব সারারাত নিষ্কৰ্মাম্বুম দিলে আমায় ঠেকায কে! সুপ্রিয়া লজঞ্জা পেল। বানিয়ে বানিয়ে এত কথা। আপনি বলতে পারেন। কিন্তু আপনার শরীর যে বেটে খাবাপ হয়েছে তাতে মনে হয় না। ঠিকমতো আহাব-নিদ্রা হয়। রেটটা তোবও কম নয়, সুপ্রিয়া। আমার অসুখ, ফিটের ব্যাবাম। আমার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আপনার শবীর খারাপ হবে কেন ? আমারও হযতো অসুখ, সুপ্রিয়া। সুপ্রিয়া হোেস বলল, তর্কে হারাবার উপক্ৰমেই অসুখ হয়ে গেল। বসুন, বালিশ এনে দিচ্ছি। — ওয়াড পবিয়ে আনতে হবে। এমন আলসে হয়েছি আজকাল, ময়লা বালিশে শুয়ে থাকি তবু ওয়াড় বদলাই না। এবার আমি মরব নাকি ? বালিশ নিয়ে সুপ্রিযা ফেবার আগে এল অশোক। দুপুরে এখানেই খাবেন, দাদা। তাব আমন্ত্রণের এই অমায়িক সুরে হেরম্ব বুঝতে পারল সুপ্রিয়া সত্যসত্যই অশোককে শান্ত করতে পেলেছে। সুপ্রিয়ার এ ক্ষমতা তার অভিনব মনে হল না। অশোকের প্রতি সুপ্রিয়ার যে গভীর ও আন্তরিক মমতা আছে, অশোকের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের প্রতি যে নিবিড় মনোযোগ ও অক্লান্ত সেবায় তার এই মমতা প্রকাশ পায়, অশোকের অতিরিক্ত দুঃখ ও অপমান মুছে নেবার পক্ষে তাই যথেষ্ট। সুপ্রিয়ার প্রকৃতি শান্ত, সে বিশ্বাস করে মানুষ মাথাপাগলা নয়, বাস্তব জগতে ভাব নিয়ে মানুষের দিন কাটে না। যাব জীবনে যা কিছু প্রয়োজন তার সে সমস্তই পাওয়া চাই। জীবন নষ্ট করবার জন্য নয়, নিজের জন্য চাইতে এবং নিতে, যতটা পারা যায় পর্যকে পাইয়ে দিতে, কারও লজা নেই। নিজের জীবন গুছিযে নেওযা চাই, পরের জীবন সাজিয়ে দেওয়া চাই। হেরম্বের জন্য অশান্তি, উদবেগ, সন্দেহ, ঈৰ্ষা প্রভৃতি যতগুলি পীড়াদায়ক অনুভূতি আছে তার প্রায সবগুলি অনুভব করে দিন কাটানোর ফলে ফিটের ব্যারাম জন্মে যাওয়া সত্ত্বেও উপরোক্ত মনোভাবের দরুন সুপ্রিয়ার কথায় ব্যবহারে সর্বদা এমন একটি কোমল ভাব ও সহানুভূতির সঙ্গে চারিদিক হিসাব করে চলবাের আন্তরিক চেষ্টা প্রকাশ পায় যে, তার সম্বন্ধেও মানুষকে সে বিবেচনা করে চলতে শেখায়। সে যাকে ব্যথা দেয়, নিদারুণ ক্ৰোধের সময়ও তাকে স্মরণ রাখতে হয় যে উপায থাকলে ব্যথা সে দিত না। সুপ্রিয়ার বিরুদ্ধে মনে নালিশ পুষে রাখা কঠিন। হেরম্ব অশোকের নিমন্ত্রণ গ্ৰহণ করল। বলল, বেশ তো। আর বিকেলে যদি পারেন। ওকে একবার মন্দির স্বৰ্গদ্বার-টার যা দেখবার আছে দেখিয়ে আনবেন। আমার নিজের তো ক্ষমতা নেই নিয়ে যাব। আচ্ছা। অশোক চুপিচুপি বলল, আমার কী ভীষণ সেবাঁটাই যে ও করছে, দাদা, বললে আপনার বিশ্বাস