পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in দিব্যারাত্রির কাব্য। S) ՏԳ পারে না। এদিক দিয়ে বিচার করে হেরম্ব চিনতে পারে না নিজেকে। সে ছিল কঠিন, মানুষের ছোটো বড়ো সুখদুঃখের কোনো মূল্য তাব কাছে ছিল না, কারও বৃদয়কে সে কোনোদিন খাতির করে চলেনি। আজ শুধু কোমল হওযা নয়, গলিত বরফের মতো সে তরল হয়ে গেছে, যে যেখানে তুষার্ত আছে তারই অঞ্জলিতে নিজেকে সে বিলিয়ে দিতে চায়। ঘরে বসে উদবেগ ও অশান্তিতে হেরম্ব কাতর হয়ে পড়ে। আবার তাব পালিয়ে যেতে ইচ্ছে হয়। জীবন যখন রণক্ষেত্রে পরিণত হয়ে গেছে তখন আর দাঁড়িয়ে মার খেয়ে লাভ কী ? সুপ্রিয়াব আবির্ভাব হওযা মাত্র তাব যদি এই অবস্থা হয়ে থাকে, শেষ পর্যন্ত কী অবস্থা দাঁড়াবে কে বলতে পারে ? যে তেজ, সে প্রচণ্ড গতির অবসান হয়ে গেছে তার জন্য হেরম্বের মন হাহাকার করে। একদিন য়া দিযে সে মানুয্যের বুকও ভেঙেছে ঘর ও ভেঙেছে, আজ সে শক্তি থাকলে সে মহামানবের মতো ভাঙা বুক জোড়া দিতে পাবত, ভাঙা ঘর গড়ে তুলতে পারত। মনে জোর থাকলে জীবনে সমস্যা কোথায় ? মালতী, সুপ্রিযা ও আনন্দকে নিয়ে বিপুল পৃথিবীর এককোণে ঠাই বেছে নেওয়া কঠিন নয়, জীবনের দুটি প্রান্তে সুপ্রিয়া ও আনন্দকে ও এমনভাবে বেখে দেওয়া অসম্ভব নয় যাতে নিজস্ব সীমা তাদের কোনোদিন চোখে পড়বে না, খণ্ডিত হেরম্বকে দিয়েও জীবনের পূর্ণতা সাধিত হওয়ায় কোনোদিন তাবা অনুভব করতে পাববে না নিজেকে দুভাগে ভাগ কবে দুজনকেই সে ঠকিযেছে। একদিন হেরম্বের পক্ষে এ কাজ সম্ভব ছিল। আজ এ শুধু কল্পনা, অক্ষমের দিবাস্বপ্ন। সত্যই কল্পনা। আজ সারাদিন, বিশেষভাবে আনন্দের পিঠে বরফ ঘষে দেপাব সময, এই দিবাস্বপ্নই সে দেখেছি। সুপ্রিয়া থাকে জনপদেব একটি দ্বিতল গৃহে, তাব ছবিব মতো সাজানো ঘবে সাবাদিন হেব্বস্ব গৃহস্থ সংসাবী, সন্ধান্য সে ফিরে যায় আনন্দের স্বহস্তে বোপিত ফুলগাছে সাজানো বাগানে ঘেবা শান্ত নির্জন কুটিবে। সুপ্রিয়া তাকে রোধে খাওযায়, আনন্দ তাকে দেখায় চন্দ্ৰকলা নাচ । তার মধ্যে যে ক্ষুধিত অসন্তুষ্ট দেবতা আছেন হেবম্ব তাকে এমনি সব উদভ্ৰান্ত কল্পনাব নৈবেদা নিবেদন কবে । নিবেদন করে সসংকোচে, প্ৰায় সজল চোখে । তাব কি বুঝতে বাকি আছে যে, এই ভ্ৰান্ত আত্মপূজা তার বার্ধকোব পবিচয়, এইসব রঙিন কল্পনা তার কৈশোরে ফিবে আসাব লক্ষণ নয়, যৌবন-অপবাস্তুের মৃত্যু উৎসব। মালতী আজ হোিবশ্বকে বেদখল করেছে। দশ মিনিটেব বেশি একা থাকতে দেয় না। মালতী বলে, মিনসে যদি আর একটা দিন থেকে যেত, আমার জন্মদিনের উৎসবটা হতে পারত। যাক, কী আবি হবে, গেছেই যখন মবুকগে যাক। তারও শান্তি, আমাবও শান্তি। শান্তিই মানুষের সব। হেরম্ব সংক্ষেপে বলে। Y মালতী হেসে বলে, খুব একটা মস্ত কথা বললে তো! আসল কথাটা জান, হেরম্ব ? আমায আব দেখতে পাবত না। ও সব যোগটোগ মিছে কথা, ভণ্ডামি। একজনকে দেখতে না পারলেই মানুষের ও সব ভণ্ডামি আসে। কই, সংসারে বিরাগ না এলে সন্ন্যাসী হতে দেখলাম না তো কাউকে! ভোগ ভালো না লাগলে তখন তোমাদের ধর্মে মতি হয়। তোমরা পুরুষ মানুষেরা হলে কি বলে গিয়ে সুখের পায়রা। যখন যাতে মজা লাগে তাই তোমাদের ধর্ম। ঘেন্নার জাত বাপু তোমরা। শেষ পর্যন্ত মালতীকে সহ্য কবতে না পেরেই হেরম্ব পথে বেরিয়ে গেল। আনন্দ জিজ্ঞাসা করল, তুমি বুঝি তার বাড়ি যােচ্ছ ? হ্যা, তুমি বারণ করলে যাব না। বারণ করব কেন ? সন্ধার সময় ফিরে আসব, আনন্দ ।