পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in VOdbr মানিক রচনাসমগ্র আনন্দ স্নান মুখে বলল, তাই এসো। আমার আজ বড়ো মন কেমন করছে। হেরম্ব ইতস্তত করে বলল, তবে না হয় নাই গেলাম, আনন্দ। চল, আমরা সমুদ্রের ধার থেকে বেড়িয়ে আসি। আনন্দ বলল, না, আমি মার কাছে থাকব। হেরম্ব আর দ্বিধা করল না। থাক, আমি যাব না, আনন্দ। যেতে বলেছিল একবাব, কাল গেলেই হবে। কিন্তু আনন্দ তাকে মত পরিবর্তন করতে দিল না। বলল, না, যাও। না গেলে তিনি আবার এসে হাজির হবেন তো! এখন দেখা করে এসো, সন্ধ্যার পরে তুমি আর কোথাও যেও না, আমাব কাছে থেকে । হেরম্ব জানত সুপ্রিয়া তার জন্য প্রস্তুত হয়ে থাকবে। দেরি দেখে হয়তো মাঝে মাঝে পথের দিকেও তাকাবে। কিন্তু বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছানোমাত্র সুপ্রিয়া বেরিয়ে এসে তার সঙ্গে যোগ দেবে হেরম্ব তা ভাবতে পারেনি। সুপ্রিয়ার পক্ষে এতখানি অধীরতা কল্পনা করা কঠিন। সুপ্রিয়া নিজে থেকে কৈফিয়ত দিল। ওঁর দাদা-বিউদি এসে পড়েছে। চলুন আমরা পালাই। পালাই ? পালাই কিরে? সুপ্রিয ব্যাকুল হযে বলল, সরে চলুন। এখান থেকে, কেউ দেখতে পাবে। হেঁয়ালি বুঝবাব সমস্যা পাবেন ঢের । সে দ্রুতপদে এগিয়ে গেল। মূঢ়ের মতো তাকে অনুসরণ করা ছাড়া হেরম্বেব আবি উপায় বইল না। সমুদ্রের ধারে পৌছানোর আগে পর্যন্ত সুপ্রিয়া মুহূর্তের জন্য তার গতিবেগ শ্লথ করল না। সে যেন চুরি কবে পালাচ্ছে। বঙগনারীর এই অস্বাভাবিক জোর চলনে পথের লোক অবাক হয়ে চেযে আছে লক্ষ করে হেরম্বের লজা করতে লাগল। সুপ্রিয়ার পায়ে জুতো নেই, পবনের সাধারণ শাডিখানা ময়লা, তার আলগা খোপা খুলে গেছে। বয়সও তার কম হয়নি, চার বছর আগে একবাব সে মা श८ानि । তবু সমুদ্রতীর অবধি হেরম্ব চুপ করে রইল। সেখানে সুপ্রিয়া দাঁড়াতে সে মৃদু ও কড়া সুবে বলল, রাস্তাব লোক হাসালি, সুপ্রিয়া। হাসুক। মাগো, এইটুকু জোরে হেঁটে হাঁপ দিবে গেছে। বুক ফুলিয়ে ফুলিয়ে দুর্কিনীত ভঙ্গিতে সে নিশ্বাস নেয়। সমুদ্রের বাতাসে তার আলগা চুল, অনাবদ্ধ অঞ্চল প্রান্ত উড়তে থাকে। হেরম্ব সািভয়ে স্মরণ করে সুপ্রিযার এ বুপ প্রায় পাঁচ বছরেব পুরোনো, যখন ছেলেমানুস পেয়ে আনন্দের সমবয়সি সুপ্রিয়াকে সে ভুলিয়ে বিয়ে দিয়েছিল বলে বুপাইকুড়ায় সুপ্রিয়া অভিযোগ করেছে। দাঁড়াবেন না, চলুন। বলে সমুদ্রের ঢেউ যেখানে পায়ের পাতা ভিজিয়ে দিয়ে যায়। সেখান দিয়ে। সুপ্রিয়া হাঁটতে আরম্ভ করল। রোদের তেজ এখনও কমেনি, কিন্তু জোরালো বাতাস রোদের তাপ গা থেকে মুছে নিয়ে যাচ্ছে। হেরম্ব বলল, “ব্যাপার কী বল তো, সুপ্রিয়া ?” ব্যাপার কঠিন কিছু নয়। বাড়িতে ভিড় জমেছে, নিরিবিলি কথা বলার জন্য সমুদ্রের ধারে বেড়াতে এলাম—শুধু এই। ফিরে গিয়ে কী কৈফিয়ত দিবি ? তার দরকার হবে না। নীরবে দুজনে এগিয়ে চলল। সমুদ্রতীর পথ নয়। কিন্তু হেঁটে বড়ো আরাম। পাশে অনন্ত সমুদ্রের গা ঘেঁষে সমুদ্রতীরও কোথায় কতদূর চলে গেছে, শেষ নেই। সঙ্গী নিয়ে নিঃশব্দে হাঁটবার সুবিধাও এইখানে, সমুদ্রের কলরব নীরবতাকে প্রচ্ছন্ন করে রাখে, পীড়ন করতে দেয় না।