পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in V) So মানিক রচনাসমগ্ৰ জু হু করে জ্বর এসেছে। তুই যে চলে এলি ? ছোটোলোক ভাবছেন, না ? সেবা করার লোক না থাকলে আসতাম না। দাদা, বউদি, ভাইঝি সবাই ঘিরে আছে, তারা আপনার জন্য। আমি তো পর! তোর কী হয়েছে বল তো ? বুঝতে পারেননি? আমার মন আগাগোড়া বদলে গেছে। আজকাল সর্বদা অন্যমনস্ক থাকি। হেরম্বের কাছে এটা সুপ্রিয়ার অনাবশ্যক আত্মনিন্দার মতো শোনাল। মাঝে মাঝে অন্যমনস্ক হতে পারলেও সর্বদা অন্যমনস্ক থাকা সুপ্রিয়ার পক্ষে অসম্ভব। তার এ কথা হেরম্ব বিশ্বাস করল না। তুই ইচ্ছা করলেই অশোককে সুখী করতে পারতিস, সুপ্রিয়া। সুপ্রিয়া থমকে দাঁড়াল। যদি কথা তুললেন, তাহলে বলি। আমি তা পারতাম না। কেউ পারে না। ছেলেখেলা হলে পারতাম, চব্বিশ ঘণ্টা একসঙ্গে থাকা ছেলেখেলা নয়। ও বিনাদোষে মারা গেল, কিন্তু উপায কি, সংসাবে আমন অনেক যায়। ওর সত্যি কোনো উপায় নেই। দূরদিগন্তে চােখ রেখে হেরম্ব বলল, তবু অশোককে নিয়ে তুই যদি জীবনে সুখী হতে পারতিস, তাহলে তোব প্রশংসা করতাম, সুপ্রিয়া। কথাটা ভেবে বললেন ? ভেবে বললাম। মনকে তুই একেবারে উন্মুক্ত করে দিলি, কিছু ঢাকবার চেষ্টা করলি না। সত্যকে সহ্য করবার সম্পন্ধা দেখিয়েছিস বলেই কথাটা বললাম। বিচলিত হলে চলবে কেন ? ওবি ভালোমশেদর দায়িত্ব তোরও অনেকখানি আছে বইকী। সুপ্রিয়া বৃক্ষস্বরে বলল, আপনার কথার মানে হয় না। ওর ভালোমন্দোব সঙেগ আমার সম্পর্ক কী ? বুপাইকুডাতেও আপনি আমাকে এ সব বলে অপমান করতেন। আপনাব ভুল হযেছে, স্বামী আমার সমস্যা নয়, আপনিই তাকে শিখণ্ডীব মতো সামনে খাড করে রেখে আমাৰ সঙেগ ब्लएछाश् कट्सएछन् । এবার হেরম্বের চুপ করে যাওযাই উচিত ছিল। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই তর্কে হাব মানা হেরান্সেব স্বভাব নয় । লড়াই বাধাচ্ছিস তুই ; আমি লড়াই করতে চাইনি, সুপ্রিয়া। এই কঠোর কথায সুপ্রিয়া ক্ৰন্দনবিমুখ আহত শিশুব মতো মুখ করে বলল, ইচ্ছে করে আমাকে অপমান করার জন্য এ কথা যদি বলতেন, ফিরে গিয়ে আমি বিষ খেতাম । হেরম্ব সংগ্রহে সায় দিয়ে বলল, ফিরে গিয়ে আমরা দুজনেই তাই খাই চল, সুপ্রিযা। সুপ্রিয়া অতিকষ্টে বলল, তার চেয়ে এখানে একটু বসা ভালো। জলের ধার থেকে খানিক সরে শুকনাে বালিতে তারা নীরবে বসে থাকে। হেরম্ব বুঝতে পারে বুপাইকুড়ায় তাদের যে ছমাসের চুক্তি হয়েছিল সুপ্রিয়া এখনও তা অখণ্ডনীয় ধরে রেখেছে। এখন যে তাদের অন্তরঙগতা বেড়েছে তাতে সন্দেহ নেই। অশোকের সম্বন্ধে যে আলোচনা তাদের হয়ে গেল, পরস্পরের কাছে দাম কমে যাবার বিন্দুমাত্র আশঙ্কা থাকলে এ আলোচনা তাদের এত স্পষ্ট হয়ে উঠত না। উঠলেও এত সহজে সমাপ্তি লাভ না করে তাদের এমন কলহ হয়ে যেত যে, আগামীকাল পর্যন্ত পরস্পরকে তারা ঘূণা করত। যাদের মধ্যে চেনা নেই, শুদ্ধ শান্ত অপাপবিদ্ধ আত্মাকে পর্যন্ত এ অবস্থায় তারা ক্লেশ দেয় ; বলে-এই দ্যাখা পাপ। তোমার পাপ, তোমার মহৎ চিত্তের মহাব্যাধি! অশোকের মধ্যস্থতাতেই কি সে আর সুপ্রিয়া পরিচয়ের এই নিম্নতম স্তর অতিক্রম করে এল? মুহুর্তের