পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in VOD NR SR মানিক রচনাসমগ্র একটু চিন্তা করে হেরম্ব বক্তব্য স্থির করে নিল। শোন, সুপ্রিযা। তোর বিয়ের সময় তোকে একটা উপহারও কিনে দিইনি। আর আজ তোর গয়না বিক্রির টাকায় কলকাতা যােব? এমন কথা তুই ভাবতে পারলি! একবার তোর ভয় হল না, লজ্জায় ঘূণায় আমি তাহলে চলন্ত ট্রেন থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করব? সুপ্রিয়ার হাত এতক্ষণে হয়তো অবশ্য হয়ে এসেছিল, হাত মুচড়ে তার শরীরের আশ্রয়চু্যত উধৰ্ব্বভাগ হেরম্বের কোলে হ্রমাড়ি দিয়ে পড়লে অস্বাভাবিক হত না। কিন্তু সে সোজা হয়েই বসল। স্তব্ধ নিশ্চল, কাঠের মূর্তির মতো। বুপাইকুড়ায় হেরম্বের সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে শুকনো ঘাসে-ঢাকা মাঠে সে এমনিভাবে বসেছিল। হেরম্বের মনে আছে। তখন সূর্য অস্ত গিয়ে সন্ধা হয়েছিল। আজ সূর্যাস্তের সূচনা মাত্র হয়েছে। ছোটাে একটি মেঘ এত জোরে ছুটে আসছে যে, সূর্যাস্তের আগেই সূর্যকে ঢেকে ফেলবে। সুপ্রিয়ার মুখ থেকে আকাশে দৃষ্টিকে সরিয়ে নিয়ে যেতে যেতে হেরম্বের মুখও বিবৰ্ণ স্নান হয়ে গেল। দুহাতে ভর দিয়ে সে বসেছে। দুই করতলে সূক্ষ্ম শীতল বালিব স্পর্শ অনুভব করে তার মনে হল, যে পৃথিবীর তৃণাচ্ছাদিত হওয়ার কথা, তার আগাগোড়া হয়ে গেছে মরুভূমি। অপরাধীর মতো মন্থর পদে হেরম্ব আশ্রমে ফিরে এল। অন্ধকার বাগান পাব হয়ে বাড়িব রুদ্ধ দরজায় সে করাঘাত করল আস্তে। তারপর আনন্দের নাম ধরে ডাকল। অভিশপ্ত দেবদূতের মতো মর্ত্যের প্রবাস সাঙ্গ করে সে যেন স্বর্গের প্রবেশপথে সসংকোচে এসে দাঁড়িয়েছে। দরজা খোলার জোরালো দাবি জানাবাব সাহসও নেই। আলো হাতে এসে দরজা খুলে আনন্দ নীরবে একপাশে সবে দাঁড়াল। হেরম্ব মৃদুস্বাবে বলল, দেরি করে ফেলেছি, না ? ? कोथोश छिल ७ीऊश्*? সমুদ্রেব ধারে খানিকক্ষণ বেড়িয়ে মন্দিরে গিয়েছিলাম। তার বাড়ি যাওনি-সকালে যিনি এসেছিলেন ? গিয়েছিলাম। তিনি আমাব সঙ্গে সমুদ্রের ধারে বেড়াতে এলেন। তাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে ঘুরতে ঘুরতে মন্দিরের সামনে এসে হাজির হয়েছি। মন্দিরে উঠে একটু বসলাম। মনটা ভালো ছিল না, আনন্দ। কেন ? তিনি বললেন, আমায় তিনি ভালোবাসেন। আমি ভালোবাসি না বলায় মনে খুব ব্যথা পেলেন। কারও মনে ব্যথা দিলে মন খাবাপ হয়ে যায় না ? দরজা বন্ধ করার জন্য আনন্দ হেরম্বের দিকে পিছন ফিরল। হেরম্বের মনে হল, এই ছুতাফা সে বুঝি মুখের ভাব গোপন করছে। দরজায় খিল দিয়ে আনন্দ ঘুরে দাঁড়াতে বোঝা গেল, হেরম্বের অনুমান সত্য নয়। আনন্দ কখনও কিছু গোপন করে না। তিনি অনেক দিন থেকে তোমায় ভালোবাসেন, না? তাই বললেন । দুজনে তারা হেরম্বের ঘরে গেল। মালতীর কোনো সাড়াশব্দ নেই। সবগুলি আলো আজ জ্বালা হয়নি, বাড়িতে আজ অন্ধকার বেশি, স্তব্ধতার নিবিড়। আলগোছে মেঝেতে আলোটা নামিয়ে রেখে আনন্দ বলল, আমার ভালোবাসা দুদিনের! হেরম্ব অনুরাগ দিয়ে বলল, কেন তুমি কেবলই দিনের হিসাব করছি আনন্দ ? কথাগুলি হঠাৎ যেন আক্ৰমণ করার মতো শোনাল। আনন্দ থতোমতো খেয়ে বলল, না, তা করিনি। এমনি কথার কথা বললাম।