পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOOkS. in দিবারাত্রির কাব্য VU) SvS) হেরম্ব বিষগ্নভাবে মাথা নাড়ল। কথার কথা কেউ বলে না, আনন্দ, আজ পর্যন্ত কাবও মুখে আমি অর্থহীন কথা শুনিনি। তোমার ঈর্ষা, হয়েছে। হেরম্বকে আশ্চর্য করে দিয়ে সহজভাবে আনন্দ এ কথা স্বীকার করল, কেন তা হয় ? আমার মন ছোটো বলে ? ঈৰ্ষা খুব স্বাভাবিক, আনন্দ, সকলের হয়। সকলের হোক, আমাব কেন হবে ? প্রশ্নটা হেরম্ব ঠিক বুঝতে পারল না। এ যদি আনন্দের অহংকার হয় তবে কোনো কথা নেই। কিন্তু সে যদি সবলভাবে বিশ্বাস করে থাকে যে তার অসাধারণ প্রেমে ঈর্ষারও স্থান নেই, তাহলে হয়তো তাকে অনেকক্ষণ বকতে হবে। বলতে হবে,- তোমার খিদে পায় না, আনন্দ ? মাঝে মাঝে প্রকৃতি তোমাকে শাসন করে না? হিংসাকে তেমনি প্রকৃতির নিয়ম বলে জেনো। হেরম্ব কৃথা বলল না দেখে আনন্দ বোধ হয় একটু ক্ষুন্ন হল। যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল সেইখানেই মেঝেতে সে বসল। তাকে চৌকিতে উঠে বসতে বলার মতো মনের জোব হেরম্ব আজ খুঁজে পেল না। সমুদ্রতীরের কলরব থেকে দূবে চলে আসার পর তার মনে যে শুদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছিল, এখনও একটা ভাবী আবরণের মতো তা তার মনকে চাপা দিয়ে রেখেছে। সুপ্রিয়ার সেই হাতে ভর দিয়ে বসবার শিথিল ভঙ্গি মনে পড়ে। আসন্ন সন্ধ্যায় সুপ্রিয়া স্থলিত পদে তাঁর পরিত্যক্ত গৃহে প্রবেশ করার পর অন্ধকার পথে দাঁড়িয়ে তার অন্তরের অমৃত পিপাসাকে ছাপিযে যে কোটি ক্ষুধিত কামনার হাহাকাব্য উঠেছিল মাটির মানুষ হেরম্বকে এখনও তা আচ্ছন্ন করে রেখেছে। তার দেহ শোকে অবসন্ন, মৃত্তিকাব কীটদংশনে বিপন্ন তব মন। আমার আজ কী হযেছে জান ?--আনন্দ বলল। হেরম্ব জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, বলো, শুনছি। সকাল থেকে নিজেকে আমার অশুচি মনে হয়েছে, কেবলই ছোটাে কথা মনে হয়েছে, হীন অশুদ্ধ ভাব মনে এসেছে, রাগে হিংসায় ঘেন্নাতে আমি অস্থির হয়ে পড়েছি। ঠিক যেন নবকবাস করেছি। সারাটা দিন। এমন কষ্ট পেযেছি আমি ! যে ছিল অবোধ নিম্পাপ শিশু, আজি সে আত্মজ পাপে মাথা হেঁট কবল, তাই তোমাকে বলছিলাম সন্ধ্যার পর আমার কাছে থেকে, কোথাও যেয়ো না। আমি নীচে নেমে গেছি, আমাকে তুমি তুলে নিতে পাের ? প্রথম দিন পূর্ণিমা রাত্রে নাচ শেষ না করে আনন্দ যে অসহ্য যন্ত্রণা ভোগ করেছিল এখন তার নতমুখে তেমনি একটা যন্ত্রণার আভাস দেখে হেরম্ব ভয়ে পেল। এ সব কী বলছি, আনন্দ ? মুখ দেখে বুঝতে পারছি না এখনও আমার মন নোংরা হয়ে আছে? একটা ভালো কথা ভাবতে পারছি না। আমাব মনে এক ফোটা শান্তি নেই। হেরম্ব নির্বোধের মতো কথা খুঁজে খুঁজে বলল, ঈর্ষায় তো এ রকম হয় না, আনন্দ। আনন্দ বিরসা কণ্ঠে বলল, কে বলেছে ঈৰ্ষা-শুধু ঈর্ষা হলে তো বঁচিতাম, আমি সবদিক দিযে খারাপ হয়ে গেছি। একটু আগে কী ভাবছিলাম জান ? কী ভাবছিলে ? দেখ, বলতে আমাব বুক ফেটে যাচ্ছে। ফাটবে না, বলে । s আনন্দ আঙুল দিয়ে মেঝেতে দাগ কাটতে কাটতে বলল, বলা আমার উচিত নয়। অন্য মেয়ে হয়তো বলত না। তুমি তো জান আমি অন্য মেয়ের সঙ্গে বেশি মিশিন। বলা অনায় হলে রাগ