পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in দিবারাত্রির কাব্য VO SRs মমতাকে কে খুঁজে পেয়েছে? সে মনের আলো ছিল দিন, অন্ধকার ছিল রাত্ৰি—অঙ্গনে বিছানো এক টুকরো রোদ আর তারতলের ক্ষীণছায়ার যোগাযোগ আগের মতো মনের আলো-ছায়ার খেলা সাঙগ হয়ে যেত না। সুপ্রিয়াকে মনে করতে হবে সেই মন নিয়ে, হেরম্বকে শহরের ধূলিভরা পথে পথে বেড়াতে হত। আর আজ সুপ্রিয়ার কাছ থেকে পরিবর্তিত, ছোটাে মমতায় ছোটাে সুখ-দুঃখে উদবেলিত মন নিয়ে এসে সে কী বলে এত সহজে আনন্দের মনের বিচার করে রায় দিচ্ছে? হেরম্বের অনুশোচনায় সীমা রইল না। তাই আনন্দ যখন বলল, তোমার আজ কী হয়েছে, তুমি কিছুই বুঝতে চাইছ না কেন?--তখন সে বিহুলের মতো আনন্দের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল, কথা বলতে পারল না । আনন্দ তাকে বুঝিয়ে দেবার চেষ্টা করে বলল, দেখি তুমি প্রথম যেদিন এলে সেদিন থেকে আমি যেন কেমন হযে গিয়েছিলাম। জেগে ঘুমিয়ে আমি যেন স্বপ্ন দেখতাম। সব সময় একটা আশ্চর্য সুরা শুনছি, নানা বকমা রঙিন আলো দেখছি, একটা কীসের যে, উয়ে আস্তে আস্তে দোল খাচ্ছি— বিস্মফারিত চোখে হেবম্বের দিকে চেয়ে আনন্দ মাথা নাড়ল, বলতে পারছি না যে! আমি যে সব ভুলে গেছি। তার ভুলে যাওয়ার অপবাধ যেন হেরন্সের, এমনি তীব্রস্বরে সে হঠাৎ জিজ্ঞাসা কবল, কেন ভুলে গেলাম ? কেন বলতে পারছি না ? হেরম্ব অস্ফুট স্বাবে বলল, ভোলোনি, আনন্দ। ও সব কথা মুখে বলা যায় না। কিন্তু আনন্দ একান্ত অবুঝ - কেন বলা যাবে না ? না বললে তুমি যে কিছু বুঝবে না। সব কী বকমা স্পষ্ট ছিল জান ? আমার এক এক সময় নিশ্বাস ফেলতে ভয় হত, পাছে সব শেষ ठूgश 2ाश । হেরম্ব কথা বলে না। উত্তেজিত আনন্দও অনেকক্ষণ চুপ কবে থেকে শান্ত হয়। আমার আশেপাশে কী ঘটত ভালো জ্ঞান ছিল না। কলের মতো নড়াচড়া কবিতাম। তারপৰ যেদিন থেকে মনে হল আমাদের ভালোবাসা মরে যাচ্ছে সেদিন থেকে কী কষ্ট যে পাচ্ছি! আচ্ছা! শোন, তোমাব কী খুব গরম লাগছে? না, আজ তো গরম নেই। আনন্দ উঠে এসে বলল, দেখ, আমি ঘোমে নেয়ে উঠেছি। আমার কী হয়েছে ? হেরম্ব গভীর বিষগ্ন মুখে বলল, শান্ত হযে বোসো। তোমার জ্বর হয়েছে। ধীরে ধীবে বাত্ৰি বেড়ে চলে। আশেপাশে অসংখ্য বিঝি আর ব্যাঙের ডাক শোনা যায়। আনন্দকে সাস্তুনা ও শান্তি দেবার দুঃসাধ্য প্ৰয়াস একবার প্রাণপণে কবে দেখবার জন্য হেরম্বের ঝিমানো মন মাঝে মাঝে সচেতন হয়ে উঠতে চায়। কিন্তু আজ কোথায় সেই উদ্ধত উৎসাহ, অদম্য প্রাণশক্তি ! চিন্তা কষ্টকর, জিতু আড়ষ্ট, কথা সিসার মতো ভারী। মুখ গুজে সর্বনাশকে বরণ করা ছাড়া আর যেন উপায় নেই। স্বৰ্গ চারিদিকে ভেঙে পড়ুক। মোহে অন্ধ রক্তমাংসের মানুষের অমৃতের পুত্র হবার স্পর্ধা, ধুলায় লুটিয়ে যাক। প্ৰেম ? মানুয্যের নব ইন্দ্ৰিয়ের নবলব্ধ ধর্ম? সে সৃষ্টি করেছে। এবার যে পারে বাঁচিয়ে রাখুক । তার আর ক্ষমতা নেই। আনন্দ কঁদো কঁদো হয়ে বলেছিল, তুমিও আমায় ভাসিয়ে দিলে ? হেরম্ব শ্রান্তস্বরে বলেছিল, কাল সব ঠিক হয়ে যাবে, আনন্দ। এ স্পষ্ট প্রতারণা। কিন্তু উপায় কী? আজ রান্না হয়নি। কিন্তু সে জন্য হেরম্বের আহারের কোনো ত্রুটি হল না। ফল, দুধ এবং বাসি