পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in WS) Sbr মানিক রচনাসমগ্র মালতীব কণ্ঠে হেরম্ব কান্নার আভাস পেল। তোমার মুখে পোকা পড়ুক, হেরম্ব, পোকা পড়ুক। তুমিই শনি হয়ে এ বাডিতে ঢুকেছি। তুমি যেই এলে ওমনি একটা লোক গৃহত্যাগী হল। কই আগে তো যায়নি। হেরম্ব চুপ করে থাকে। আনন্দ মৃদুস্বরে বলে, ঘুমেও না, মা। মালতী তাকে ধমক দিয়ে বলে, তুই জেগে আছিস বুঝি? আমাদের পরামর্শ শুনছিস ? তোমার পবামর্শের চোটেই যে ঘুম আসছে না। জবাবে স্বাভাবিক কড়া কথার বদলে মালতী হঠাৎ মিনতির সুরে যা বলল শুনে হেরম্বোব বিস্ময়ের সীমা রইল না। আনন্দ, আয় না। মা, আমার কাছে এসে একটু শো। আয়। হেরম্ব আরও বিস্মিত হল আনন্দেব নিষ্ঠুরতায়। রাত দুপুরে পাগলামি না করে ঘুমোও তো। হেবম্বেব অভিজ্ঞতায় মালতী আজ প্রথম ধমক খেয়ে চুপ করে রইল। এতক্ষণে হেরম্বের মাথার মধ্যে ঝিমঝিম কবছে। এ আশ্রম অভিশপ্ত ; মালতীব যুগব্যাপী অন্ধ অতৃপ্ত ক্ষুধায় এখানকার বাতাসও বিষাক্ত হয়ে আছে! গভীর নিশিতে এখানে মালতীর সঙ্গে একঘরে জেগে থাকলে দুদিনে মানুষ পাগল হয়ে যাবে। অনেকক্ষণ অপেক্ষা কবে মালতী ডাকল, আনন্দ ঘুমুলি ? আনন্দ সাড়া দিল না। মালতী উঠে বসল। হেরম্ব ? জেগেই আছি। আমার বুকে আগুন জ্বলছে, হেরম্বা। আমি এখানে নিশ্বাস নিতে পারছি না। দাম আটকে আসছে। একটু ধৈর্য না ধরলে— - মালতী বাধা দিয়ে বলল, কিছু বোলো-না, হেরম্ব। একবার ওঠে। দিকি। শব্দ কোরো না বাপু, মেয়ের ঘুম ভাঙিও না। মালতী উঠে দাঁড়াল। আনন্দের কাছে গিয়ে সে ঘুমন্ত মেয়ের দিকে তাকিয়ে রইল পলকহীন চোখে । হেরম্ব উঠে এলে ফিসফিস করে বলল, দেখ, মুখ ঢেকে ঘুমিয়েছে। ওকে না জাগিয়ে মুখ থেকে কাপড়টা সবাতে পার হেরম্ব ? একবার মুখখানা দেখি! হেরম্ব সন্তৰ্পণে আনন্দেব মুখ থেকে আচল সরিয়ে দিল। খানিকক্ষণ একদৃষ্টে আনন্দের মুখ দেখে হাত দিয়ে তাৰ চিবুক ষ্টুয়ে মালতী চুমো খেল। তারপর পা টিপে টিপে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। থ্যামল সে একেবারে বাড়ির বাইরে বাগানে। হেরম্ব তাকে অনুসরণ করল নীরবে। মালতী৷ আচল থেকে চাবি খুলে হেরম্বের হাতে দিল। আমি চললাম, হেলম্ব। হেরম্ব শান্তকণ্ঠে বলল, চলুন, আমিও যাচ্ছি। মালতী বলল, তুমিও খেপিলে নাকি? আনন্দ একা রইল, তুমিও যােচ্ছ! আনন্দের চেয়ে আমার জন্যই তোমাব মায়া বুঝি উথলে উঠল ? হেরম্ব বলল, আপনার সম্বন্ধে আমার একটা দায়িত্ব আছে। রাতদুপুরে আমি একা যেতে দিতে পারি না। মালতী বলল, পাগলামি কোরো না, হেরম্ব। প্রথম বয়সে একবার রাতদুপুরে ঘর ছেড়েছিলাম, মা-বাবা ভাই-বোন কেউ ঠেকাতে পারেনি, পোড় খেয়ে খেয়ে এখন তো পেকে গেছি, তুমি আমাকে