পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in vvòO মানিক রচনাসমগ্ৰ গেল। সে বডো বেমানান হবে। কাল হয়তো সে আনন্দের চোখে চোখে তাকিয়ে কথা বলতে পারবে, আনন্দের চুল নিয়ে নাড়াচাড়া করতে পারবে, আনন্দের বিবৰ্ণ কপোলে দিতে পারবে স্নেহ চুম্বন। আজ স্নেহের চেয়ে, সহানুভূতির চেয়ে বেখাপ্পা কিছু নেই। যতক্ষণ পারা যায় এমনি চুপচাপ বসে থেকে, বাকি রাতটুকু আজ তাদের ঝিমিয়ে ঝিমিয়েই কাটিয়ে দিতে হবে। আজ রাত্রি প্রভাত হলে সে আর একটা দিনও এই অভিশপ্ত গৃহের বিষাক্ত আবহাওয়ায় বাস করবে না। আনন্দের হাত ধরে যেখানে• খুশি চলে যাবে। আনন্দ কথা বলল! আমি কী ভাবছি জান ? কী ভাবছি, আনন্দ ? ভাবছি আমারও যদি একদিন মার মতো দশা হয়! হেরম্ব সভয়ে বলল, ও সব ভেব না, আনন্দ। আনন্দ তার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়ল। রুদ্ধ উত্তেজনায় তার দুচোখ জ্বলজ্বল করছে, তাব পাগুর কপোলে অকস্মাৎ অতিরিক্ত রক্ত এসে সঙ্গে সঙ্গে বিবৰ্ণ হয়ে যাচ্ছে। মানুষের ভাগ্যে আমার আর বিশ্বাস নেই। তোমার সঙ্গে আমার কদিনের পরিচয়, এর মধ্যে আমার শান্তি নষ্ট হয়ে গেছে । দুদিন পরে কী হবে কে জানে ! শান্তি ফিরে আসবে, আনন্দ । আনন্দ বিশ্বাস করল না, আসবে কিন্তু টিকবে কি ! হয়তো আমিও একদিন তোমার দুচোখেব বিষ হয়ে দাঁড়াব। প্রথম দিন তুমি আর আমি কত উচুতে উঠে গিয়েছিলাম, স্বর্গের কিনারায়। আজ কোথায় নেমে এসেছিা! আমরা নামিনি, আনন্দ, সবাই মিলে আমাদের টেনে নামিয়েছে। আমরা আবার উঠিব। লোকালয়ের বাইরে ঘর বঁাধব, কেউ আমাদের বিরক্ত করতে পারবে না। আনন্দ বলল, বিরক্ত আমরা নিজেদের নিজেরাই করব। আমরা মানুয যে। -- আনন্দ কি মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা হারিয়েছে? স্বপ্ন ক্ষুন্ন হবার অপরাধে মানুষকে কি ঘূণা করতে আরম্ভ করলঃ জেনে নিল বৃহত্তর জীবনে মানুষের অধিকার নেই? বিগত যৌবন প্রেমিকেবা কাছে প্রতারিত হয়ে তাই যদি আনন্দ জেনে থাকে। তবে তার অপরাধ নেই, কিন্তু এই সাংঘাতিক জ্ঞান বহন করে সে দিন কাটাবে কী করে ? হেরম্বের বুক হিম হয়ে আসে—কোথায় সেই প্ৰেম ? পূর্ণিমা তিথির এক সন্ধ্যায় সে যা সৃষ্টি করেছিল ? আজ রাত্রিটুিকুর জন্য সেই অপার্থিব চেতনা যদি সে ফিবে পেত । হয়তো কোনো এক আগামী সন্ধ্যায় সেই পূর্ণিমার সন্ধ্যাকে সে ফিরে পাবে। আজ সে আনন্দকে সাস্তুনা দেবে কী দিযে ? হেরম্বের মুখের দিকে খানিকক্ষণ ব্যাকুল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে আনন্দ চােখ বুজল । ঘুমোবে ?—হেরম্ব বলল। আনন্দ বলল, না। হেরম্ব বলল, না। যদি ঘুমোও, আনন্দ, তবে আমাকে নাচ দেখাও। তোমার নাচের মধ্যে আমাদের পুনর্জন্ম হোক। আনন্দ চোখ মেলে বলল, নাচব? চোখের পলকে রক্তের আবির্ভাবে আনন্দের মুখের বিবৰ্ণতা ঘুচে গেছে। হেরম্ব তা লক্ষ করল। তার বুকেও ক্ষীণ একটা উৎসাহের সাড়া উঠল। তাই করে আনন্দ, নাচো। আমরা একেবারে ঝিমিয়ে পড়েছি, না? আমাদের জড়তা কেটে যাক। আনন্দ উঠে দাঁড়াল। বলল, তাই ভালো। নাচই ভালো। উঃ, ভাগ্যে তুমি বললে! নাচতে পেলে আমার মনের সব ময়লা কেটে যাবে, সব কষ্ট দূর হবে।