পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in VNOW মানিক রচনাসমগ্র শশী বলিল, নীেকা ওদিকে সরিয়ে নিয়ে যা গোবর্ধন। ওই শ্যাওড়া গাছটিাব কাছে এখােন দিয়ে। अभिकि यदि को ! বটগাছটার সামনাসামনি খালের পাড় অত্যন্ত ঢালু। বৃষ্টিতে পিছলও হইযা আছে। গোবর্ধন লগি ঠেলিয়া নীেকা পাশের দিকে সরাইয়া লইয়া গেল। সাত মাইল তফাতে নদীর জল চব্বিশ ঘণ্টায় তিন হাত বাড়িয়াছে। খালে স্রোতও বড়ো কম নয়। শ্যাওড়া গাছের একটা ডাল ধরিয়া ফেলিয়া নীেকা স্থির কবিয়া গোবর্ধন বলিল, আপনি লায়ে বসবে এসো বাবু, আমি লাব্বাচ্ছি। শশী বলিল, দুর হতভাগা, তোকে ষ্টুতে নেই। গোবর্ধন বলিল, ষ্টুলাম বা, কে জানছে? আপনি ও ধূমসো মড়াটাকে লাবাতে পারবে কেন। শশী ভাবিয়া দেখিল, কথাটা মিথ্যা নয়। পড়িয়া গেলে হাবুর সর্বাঙ্গে কাদা মাখা হইয়া যাইবে। তার চেয়ে গোবর্ধন ছুইলে শবের আর এমনকী বেশি অপমান? অপঘাতে মৃত্যু হইয়াছে—মুক্তি হারুর গোবর্ধন ছুইলেও নাই, না। ছুইলেও নাই। আয় তবে দুজনে ধরেই নামাই। গাছের সঙ্গে টেনে নীেকা বাঁধ, সবে গেলে মুশকিল হবে। আচ্ছা, আলোটা আগে জ্বেলে নে গোবর্ধন। অন্ধকার হযে, এলি। আলো জ্বালিয়া শ্যাওড়া গাছের সঙ্গে নীেকা বঁধিয়া গোবর্ধন উপরে উঠিযা গেল। দুজনে ধরাধরি করিয়া হারুকে তাহারা সাবধানে নীেকায় নামাইয়া আনিল। শশী নিশ্বাস ফেলিয়া বলিল, দে, নীেকো খুলে দে গোবর্ধন। আর দাখ, ওকে তুই আব্ব টুসনে। আমার ছোবার দরকার! শশী শহর হইতে ফিরিতেছিল। নীেকায় বসিয়াই সে দেখিতে পায় খালেব মনুষ্যবর্জিত তীকে সন্ধ্যার আবছা আলোয় গাছে ঠেস দিয়া ভূতের মতো একটা লোক দাঁড়াইয়া আছে। পাগল ছাড়া এ সময় সাপের রাজ্যে মানুষ ও ভাবে দাঁড়াইয়া থাকে না। শশীর বিস্ময় ও কৌতুহল্লের সীমা ছিল না। হাঁক ডাক দিয়া সাড়া না পাইয়া গোবর্ধনকে সে নীেকা ভিড়াইতে বলিয়াছিল। গোবর্ধন প্রথমটা রাজি হয় নাই। এখানে এমন সময় মানুষ আসিবে কোথা হইতে? শশীরও চোখের ভুল। সত্য সত্যই সে যদি কিছু দেখিয়া থাকেও, ওই কিছুটির ঘনিষ্ঠ পরিচয় লইয়া আর কাজ নাই, মানে মানে এবার বাড়ি ফেরাই ভালো। কিন্তু শশী কলিকাতার কলেজে পাশ করিয়া ডাক্তার হইয়াছে। গোবর্ধনের কোনো আপত্তিই সে তোলে নাই। বলিয়াছিল, ভুত যদি হয় তো বেঁধে এনে পোষ মানব গোবর্ধন, নৌকা ফেরা । তখনও আকাশে আলো ছিল। হারুর চারিপাশে কচুপাতায় আটকানো জলের বুপালি বুপ একেবারে নিভিয়া যায় নাই। কাছে গিয়া হারুকে দেখিবামাত্র শশী চিনিতে পারিয়াছিল। ওরে গোবর্ধন, এ যে আমাদের হাবু! এখানে ও এল কী করে ? গোবর্ধনের মুখে অনেকক্ষণ কথা সরে নাই। শেষে সািভযে চাপা গলায় জিজ্ঞাসা করিয়াছিল, মবে গেছে না কি ছোটােবাবু ? ? মরে গেছে। বাজ পড়েছিল। আহা চুলগুলো বেবাক জ্বলে গেছে গো! হারুর বদলে আর কেহ হইলে, যে মানুষটা মরিয়া গিয়াছে তাহার চুলের জন্য গোবর্ধনকে শোক তাহার মনে অত্যন্ত আঘাত লাগিয়াছিল। হারুর ছেলেমেয়ে আছে, আত্মীয়বন্ধু আছে, সকলের চোখের আড়ালে একটা গাছের নীচে ওর একা একা মরিয়া যাওয়া কী শোচনীয় দুর্ঘটনা! গোবর্ধনের কথায় তাহার মন আরও বিষগ্ন হইয়া গেল।