পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOOkS. in পুতুলনাচের ইতিকথা SÓ\e)ዒ গোবর্ধনের বুকের মধ্যে ঢিপঢিপ করিতেছিল। এখানে দাঁড়িয়ে থেকে আর কী হবে ছোটোবাবু? গাঁয়ে খবৰ দিগে চলো। এমনি ভাবে ফেলে রেখে চলে যাব গোবর্ধন ? তার আর করছি কী? গা থেকে লোকজন নিয়ে ফিরতে ফিরতে শেয়ালে যদি টানাটানি আরম্ভ করে দেয় ? গোবর্ধন শিহরিয়া বলিয়াছিল, তবে কী করবে ছোটােবাবু? হাক তো, কেউ যদি আসে। কিন্তু এই বাদল-সন্ধ্যায় আশেপাশে কে আছে যে হাঁকিলে ছুটিযা আসিবো? নিজের হাঁকে শুনিয়া গোবর্ধন নিজেই চমকাইয়া উঠিয়াছিল। আর কোনো ফল হয় নাই। বসুলপুরের হাটের দিন খালে অনেক নৌকা চলাচল করে। আজি কতক্ষণে আর একটি নীেকার দেখা মিলিবে, একেবারে মিলিবে কিনা, তাহারও কিছুই স্থিরতা নাই। হারুকে নৌকায় নামাইয়া লওয়ার কথাটা তখন শশীর মনে হয়। নৌকা খুলিবামাত্র স্রোতের টানে গতিলাভ করিল। গলুই-এর উপব দাঁড়াইয়া লগিটা ঝাপ করিয়া জলের মধ্যে ফেলিয়া গোবর্ধন হঠাৎ ঔৎসুক্যের সঙ্গে জিজ্ঞাসা করিল, একটা কথা কও ছোটোবাবু। উযার মুক্তি নাই তো ? শশী হাল ধরিয়া বসিয়াছিল। হাই তুলিয়া বলিল, কী জানি গোবর্ধন, জানি না। তাহাব হাই তোলাকে বিরক্তির লক্ষণ মনে করিয়া গোবর্ধন আব. কিছু বলিতে সাহস পাইল না । শশী বিরক্ত হয় নাই, অন্যমনস্ক হইযা গিয়াছিল। হারুর মরণের সংস্রবে। অকস্মাৎ আসিয়া পড়িয়া শশীর কম দুঃখ হয় নাই। কিন্তু তার চেয়েও গভীর ভাবে নাডা খাইয়াছিল। জীবনের প্রতি তাহার মমতা। মৃত্যু এক এক জনকে এক এক ভাবে বিচলিত করে। আত্মীয় পরের মৃত্যুতে যাহারা মরমানবের জন্য শোক করে শশী তাহদের মতো নয। একজনকে মরিতে দেখিলে তাহাব মনে পড়িয়া যায় না। সকলেই একদিন মরিবে,- চেনা-অচেনা আপন—পর যে যেখানে আছে প্রত্যেকে এবং সে নিজেও। শ্মশানে শশীর শ্মশান বৈরাগা আসে না । জীবনটা সহসা তাহার কাছে অতি কাম্য, অতি উপভোগ্য বলিয়া মনে হয়, মনে হয়, এমন একটা জীবনকে সে যেন এতকাল ঠিক ভাবে ব্যবহার করে নাই। মৃত্যু পর্যন্ত অন্যমনস্ক বঁচিয়া থাকার মধ্যে জীবনের অনেক কিছুই যেন তাহার অপচয়িত হইয়া যাইবে। শুধু তাহার নয, সকলের । জীবনে এই ক্ষতি প্ৰতিকাবহীন । মৃত্যুর সন্নিধ্য এইভাবে এইদিক দিয়া শশীকে ব্যথিত করে। কিছুদূর সোজা গিয়া গাওদিয়ার প্রান্তভাগ ছুইয়া খাল পুবে দিক পবিবর্তন করিয়াছে। বাঁকেব মুখে গ্রামের ঘাট। গাওদিয়া ছােটাে গ্রাম। ব্যবসা-বাণিজ্যের ধার বিশেষ ধারে না। ঘািটও আর কিছুই নয়, কোদাল দিয়া কয়েকটি ধাপ কাটিয়া দেওয়া হইয়াছে মাত্ৰ। ঘাটের উপরে একটা টিনের চালা আছে। পাটের সময় সেখানে পার্ট জমাইয়া বাজিতপুরের শশীর ভগ্নিপতি নন্দলালের গুদামে চালান দেওয়া হয। তিন চার খোপ চালান গেলেই গাওদিয়ার পাট চালানের পাট ওঠে। তারপর সারা বছব চালাটা পড়িয়া থাকে খালি। গোরু, ছাগল, মানুষ যাহার খুশি ব্যবহার করে. কেহ বারণ করিতে আসে না। চালার সামনেই চণ্ডীর মার ছেলে চণ্ডী সারাদিন একটা কাঠের বাকসের উপর কয়েক প্যাকেট লাল নীল কাগজ মোড়া বিড়ি ও রেকাবিতে ভিজা ন্যাকড়ায় ঢাকা কয়েক খিলি পান সাজাইয়া বসিয়া থাকে। মানিক ১ম-২২