পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOOkS. in পুতুলনাচের ইতিকথা VISO 86 মোক্ষদা গলা নামাইয়া বলে, গাল তোমায় আমি দিইনি বাছা-দিয়েছি কুঁচিকে। কুসুমকে এ বাড়ির সকলে ভয় করে। এই বাস্তুভিটাটুকু ছাড়া হারু ঘোষেব সর্বস্ব কুসুমের বাবার কাছে আজ বাধা আছে সাত বাচ্ছবি। একবার গিয়া কঁাদিয়া পাডিলেই সে দিবে নালিশ ঠকিয়া, এবা সব তখন যাইবে কোথায়? তাই বলিয়া কুসুম যে সবসময় বাড়ির লোকগুলিকে শাসন করিয়া বেড়ায়, তা নয। ববং সে অনেকটা নিরীহ সাজি যাই থাকে। বকবিকি কবিলে সবসময় কানেও তোলে না, নিজের মনে ঘবের কাজ কবিয়া যায়। কাজ করিতে ভালো না লাগিলে খিড়কির দরজা দিয়া বাহিন হইয়া গিয তালবনে তালপুকুরের ধারে ভূপতিত তালগাছটার গুডিতে চুপচাপ বসিয়া থাকে। উনানে ডাল ভাত একটা কিছু চাপাইয়াই হয়তো যায়। বাডিবা লোকে তাহার অনুপস্থিতি টেব পাব্য পোড়া গন্ধে। মেজাজেব কেহ তাৰ হদিস পায না। কতখানি সে সহ্য করবে, কখন রাগিয়া উঠিবে, আক্ত পর্যন্ত তাহা ঠিকমতো বুঝিতে না পাবিয়া সকলে একটু বিপদগ্ৰস্ত হইয়া থাকে। পাড়াব লোক বলে, বউ তোমাদের যেন একটু পাগলাটে, না গো পরানের মা ? মোক্ষদা বলে, একটু কেন মা, বেশ পাগল,-পাগলের বংশ যে। ওর বাপ ছিল না পাগলা হযে দুবছবি, -- শেকল দিয়ে বেঁধে রাখত ? ঘবে ঢুক্তিত্ব. স্মি প্ৰদীপ জ্বলিল। গাল ফুলাই যা সবে সে শাখে তিনবার ফু দেওযা শেষ করিয়াছে, উঠানে শোনা গোল শশীব গলা । বিছানাব। কাছে গিয়া কুসুম বলিল, সন্ধে হতে না হতে খোজ নিতে এসেছে মতি। মতি কোনো জবাব দিল না। কুসুম, আবার বলিল, ওলো মতি, শুনছিস % সন্ধেদীপ জ্বালাতে না জ্বালাতে দেখতে এসেছে—দরদ কত! ভারী জলচৌকিটা অবলীলাক্রমে তুলিয়া লইয়া গিয়া সে দাওয়ায্য পাতিয়া দিল। বলিল, জ্বর কমেছে, ঘুমোচ্ছে এখন। মোক্ষদা বলিল, মতি আবাব ঘুমোল কখন বউ ? এই মাত্তর সাড়া পেলাম যে ? শশী বলিল, তোমার শাখেব শব্দেও মতির ঘুম ভাঙলি না পরানের বউ ?—সে জলচৌকিতে বসিল, ঘবের ভিতরে এক নজর চাহিয়া বলিল, পরান বিকেলে গিয়ে বলে এল জ্বর নাকি এ বেলা খুব বেড়েছে? কুসুম বলিল, মিথ্যে বলেছে ছোটােবাবু-একটুতে অস্থির তো ? জ্বর কই ? মোক্ষদা বলিল, কী সব বলছ তুমি আবোল-তাবোেল, যাও না বাছা বান্নাঘরে। কুসুম বিনা প্রতিবাদে রান্নাঘরে চলিয়া গেল। মুখে কৌতুকের হাসি নাই, গাম্ভীৰ্যও নাই। শশী বলিল, সকালে যে ওষুধ পাঠিয়েছিলাম, খাওয়ানো হয়নি ? মোক্ষদা বলিল, তা তো জানি না বাবা, দেখি শূন্ধোই মেয়েকে। বান্নাঘর হইতে কুসুম বলিল, ওষুধ খাওয়ানো হয়েছে গো, হয়েছে। চোঁচামেচি করে মেয়েটার ঘুম ভাঙােচ্ছ কেন ? ঘরের ভিতর হইতে ক্ষীণকণ্ঠে মতি বলিল, আমি ওষুধ খাইনি মা। মোক্ষদা চোখ পাকাইয়া রান্নাঘরের দিকে চাহিযা বলিল, শুনলে বাবা, দিব্যি কেমন মিথ্যে কথাগুলি বলে গেল বউ, শুনলে ? শশী একটু হাসিল, কিছু বলিল না। কুসুমের এ রকম সরল মিথ্যাভাষণ সে মাঝে মাঝে লক্ষ করিয়াছে। ধরা পড়িবে জানিয়া শুনিয়াই সে যেন এই মিথ্যা কথাগুলি বলে। এ যেন তাহার এক ধরনের পবিহােস। কালোকে সাদা বলিয়া আড়ালে গিয়া সে হাসে।