পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOOkS. in পুতুলনাচের ইতিকথা 8 R কাল আসবেন ছোটোবাবু, মতিকে দেখতে ? আসব। কেমন থাকে সকালে একবার খবর পাঠিয়ো, অ্যা? রোজ একবার এলেই হয়। জ্বরে ভুগছে মেয়েটা, দেখে তো যাওয়া উচিত ? কদিন আসেননি বলে বাড়ির সবাই কত কথা বললে ছোটোবাবু, বললে, শশী আমাদের মস্ত ডাক্তাব হয়েছে, না ডাকলে আব আসা হয় না। মতি কী বললে জানেন ?--ছোটােবাবুর অহংকার হয়েছে! শশী আগাইয়া যায়, বলে আমাব কাজ আছে বউ, কাল এসে তোমার মিছে কথা শুনিব। মিছে কথা নয়, সতি মিছে নয় ছোটোবাবু! শশী চলিয়া গেলে অন্ধকাবে বেগুনখেতে দাঁড়াইযা কুসুম একটু হাসিল। সামনে গাছের মাথার কাছে একটু আলো হইযাছে। কুসুম জানে ওখানে চাদ উঠিলে। চাঁদ উঠিলে, চাদ উঠিবাব আভাস দেখিলে কুসুম যেন শুনিতে পায। ভিনদেশি পুরুষ দেখি চাদের মতন লাজরক্ত হইলা কন্যা পরথম যৌবন। কে সে কিশোরী, ভিনদেশি পুরুষ দেখিয়া যার লজ্জাতুর প্রেম জাগিতা? সে কুসুম নয়, হে ভগবান, সে কুসুম নয়। অন্ধকালে ঠাহব কবিয়া দেখিযা বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায বলে, শশী না? ও বাবা শশী, তোমায় খুঁজে বেড়াচ্ছি যে। ভূতো যেন কেমন কবছ। শশী । ওর মা কঁাদা-কাটা লাগিয়েছেন। তুমি এসে একটিবাব দেখে যাও । গেলি শশী, পয়সা-কড়ি দিযেছে কিছু? দুটাে একটা কলের টাকা না দিলে তো বিপদে পড়ি কাক ? কত মিথো বলব বাবার কাছে ? পিযসা-কড়িব ব্যাপার জানেন তো বাবার, একটি পযাস এদিকে ওদিকে হবার যে নেই। বাসুদেব লজ্জা পাইয়া বলেন, শশীর টাকা কালই পৌঁছিয়া দিয়া আসিবেন শশীর বাড়িতে, নিজে যাইবেন। শশী ভাবে, আজ নয় কেন ? মুখে সে কিছু বলে না। বাসুদেবের বাডি কম দূব নয়! শ্ৰীনাথের দোকান ছাড়াইয়া বজনী সবকারের পাকা দালানের পাশ দিয়া বামুনপাড়া পর্যন্ত গড়ানো সাপেব মতো আৗকাবাকা পথের মাঝখান হইতে দক্ষিণ দিকে ঝোপঝাড়েব ভিতর দিযা পায়ে চলা যে সংকীর্ণ রাস্তাটুকু পোয়াটেক গিয়া মাঠের মধ্যে হারাইয়া গিয়াছে, তার শেষাশেযি। কদিন বৃষ্টি হয় নাই, এ বছরের মতো বর্ষা বোধ হয় শেষ হইয়াছে, পথের কাদা। কিন্তু শুকায় নাই। জুতা হাতে করিয়া বাসুদেবেব বাড়ি পৌঁছিয়া শশী পা ধুইল। বাসুদেবের ছোটাে ছেলে ভুতোর বয়স বছর দশেক, সাত-আট দিন আগে গাছেব মগডাল হইতে পড়িয়া গিয়া হাত-পা দুই ভাঙিয়াছিল। তারপর জ্বরে বিকারে অজ্ঞান হইয়া জীবন-মৃত্যুর সন্ধিস্থলে আসিয়া পড়িয়াছে। শশী তাঁহাকে সদর হাসপাতালে পাঠাইতে বলিয়াছিল, এরা রাজি হয় নাই। হাসপাতালের নামে ভুতোর মা ডুকরাইয়া কঁাদিয়া উঠিয়াছিল, ছেলেকে চৌকাটের বাহিরে নিলে সে বিষ খাইয়া মরিবে। তারপর শশীই প্ৰাণপণে ভুতোর চিকিৎসা করিতেছে, দিনে দুবার তিনবার আসে। ভুতোর শিয়রে তার মা লক্ষ্মীমণি মৃদুস্বরে কঁদিতেছিলেন। বড়ো দুটি ছেলে, দুটি বিবাহিত মেয়ে, তিনটি বউ ঘরের মধ্যে ভিড় করিয়া দাঁড়াইয়াছিল। বড়ো বিউটি বিধবা, ঘোমটা দিয়া ভুতেকে সে বাতাস করিতেছিল। মায়ের পরে এ বাড়িতে দুরন্ত ছেলেটাকে সেই হয়তো ভালোবাসে সকলের চেয়ে বেশি,-দুচোখ দিয়া তাহার দরব্দর করিয়া জল পড়িতেছে।