পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOOKS. in জননী x€j(፩ দিয়া দাড়াইয়া থাকে। মার কাধের উপর দিয়া ডিবরির শিখাটির দিকে চাহিয়া থাকিতে থাকিতে তাহার চোখ বুজিয়া যায়। শ্যামা পিছনে হাত চালাইয়া তাহাকে ধরিয়া রাখিয়া ডাকে, খোকা, অ, খোকা । বিধান আসিলে বলে, ভাইকে কোলে নিয়ে বোসো তো বাবা, বুকুকে শুইয়ে দিয়ে আসি। বিধানের হাতেখড়ি হইযা গিয়াছে, এখন সে প্রথম ভাগের পাঠক । ছেলেবেলা হইতে লিভার খারাপ হইয়া শরীরটা তাহার শীর্ণ হইয়া গিয়াছে, মাঝে মাঝে অসুখে ভোগে। মুখখানি অপরিপুষ্ট ফুলের মতো কোমল। শরীর ভালো না হোক ছেলেটার মাথা হইয়াছে খুব সাফ। বুলি ফুটিবার পব হইতেই প্রশ্নে প্রশ্নে সকলকে সে ব্যতিব্যস্ত কবিয়া তুলিয়াছে, জগতের দিকে চোখ মেলিয়া চাহিয়া তাহার শিশু-চিত্তে যে সহস্র প্রশ্নের সৃষ্টি হয়, প্রত্যেকটিব জবাব পাওয়া চাই। মনোজগতে সে দুর্জেয বহস্য থাকিতে দিবে না, তাহার জিজ্ঞাসার তাই সীমা নাই। সবজান্ত হইবার জন্য তাহার এই ব্যাকুল প্ৰয়াসে সবজাস্তাবা কখনও হাসে, কখনও বিবক্ত হয়। বিবক্ত বেশি হয়। শীতল, বিধানেব গোটা দশেক কেন-র জবাব দিয পববতী পুনবাবৃত্তিতে সে ধমক লাগায়। শ্যামার ধৈর্য অনেকক্ষণ বজায় থাকে। অনেক সময় হাতেব কাজ করিতে করিতে যা মনে আসে জবাব দিয়া যায়, সব সময় খেযালিও থাকে না। কী বলিতেছে। বিধানের চিন্তাজগৎ মিথ্যায় ভরিফা ওঠে, মনে তাহার বহু অসত্যের ছাপ লাগে। দিনের - ধ। ১৭শ ! কতগুলি প্রহর আছে শামাকে যখন যাচিয়া ছেলের মুখে মুখরতা আনিতে হয়। বিধান মাঝে মাঝে গম্ভাব হইযা থাকে। গভীর অন্যমনস্কতায় ডুবিয়া গিয়া সে স্থির হইয়া বসিযা থাকে, চোখ দুটি উদাসীন হইযা যায। স্প্রিং-এর মোটবটি পাশে পডিয়া থাকে, ছবির বইটির পাতা বাতাসে উলটাইযা যায, সে চাহিযা দেখে না। ছেলের মুখ দেখিযা শ্যামাব বুকোব মধ্যে কেমন করিযা ওঠে। যেন ঘুমন্ত ছেলেকে ডাকিয়া তুলিতেছে এমনি ভাবে সে ডাকে, খোকা, এই খোকা । @ッ আয তো আমাৰ কাছে। দ্যাখা তোব জন্যে কেমন জামা কবছি। বিধান কাছেও আসে, জামাও দ্যাখে কিন্তু তাহাব কোনো রকম উৎসাহ দেখা যায় না। শ্যামা উদবিগ্ন হইযা বলে, কী ভাবছিস রে তুই ? কার কথা ভাৰ: স ? কিছু ভাবছি না তো! মোটরটা চালা না খোকা, মণি কেমন হাসবে দেখিস । বিধান মোটরে চাবি দিয়া ছাডিয়া দেয়। মোটরটা চক্রকারে ঘুরিয়া ওদিকের দেয়ালে ঠোক্কর খায়। শ্যামা নিজেই উচ্ছসিত হইয়া বলে, যাঃ, তোর মোটরের কলিশন হয়ে গেল! বিধান বসিয়া থাকে, খেলনাটিকে উঠাইয়া আনিবার স্পপুহা তাহার দেখা যায় না। সেলাই বন্ধ করিযী শ্যামা ছুঁচটি কাপড়ে বিধাইয়া রাখে। বিধানের হঠাৎ এমন মনমবা হইয়া যাওযার কোনাে কারণই সে খুজিয়া পায় না। বুড়ো মানুষের মতো এ কী উদাস গাভীর্য অতটুকু ছেলের ? খিদে পেয়েছে তোর ? বিধান মাথা নাডে । তবে তোর ঘুম পেয়েছে খোকা। আয় আমরা শুই। ঘুম পায়নি তো! ওরে দুজ্ঞেয়, তবে তোর হইয়াছে কী!! তবে চল, ছাদ থেকে কাপড তুলে আনি। সিঁড়িতে ছাদে শ্যামা অনর্গল কথা বলে। বিধানের জীবনে যত কিছু কামা আছে, জ্ঞানপিপাসার যত কিছু বিষয়বস্তু আছে, সব সে তাহার মনে পড়াইয়া দিতে চায়। ছেলের এই সাময়িক ও মানসিক