পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in NSWO মানিক রচনাসমগ্ৰ তুই তালপুকুরে ডুবে মর। মরে শাকচুন্নি হয়ে থােক। মতি স্থান ত্যাগ করিতে যায়, কুসুমের সঙ্গে সে কথায় পরিবে কেন ? কুসুম তাহাকে রেহাই দেয় না। খপ করিয়া মতির হাতটা সে ধরিয়া ফেলে। মুখের কাছে মুখ লইয়া গিয়া অপলক চোখের তারা স্থির রাখিয়া কথাগুলিকে দাঁতে কাটিয়া কাটিয়া বলে, লজ্জা নেই তোর ? এত বড়ো ধেড়ে মেয়ে তুই, লজ্জা নেই তোর ? পেটে ভাত জোটে না, গয়লার মুখু্য মেয়ে তুই,--ছোটােবাবুর তুলনায় তুই ছোটােলোক ছাড়া কী! অত তোর পাকামি কীসের ? আমনি করিস বলেই তো বিরক্ত হয়ে ছোটোবাবু আর আসে না । তারপব মতি কুসুমের হাত দেয় কামড়াইয়া। তাহাকে ছাড়িয়া দিয়া দংশিত হাতখানা ঘুরাইয়া ফিরাইয়া কুসুম দাঁতের দাগগুলি ভালো করিয়া দ্যাখে। কামড়ালি! আমাকে তুই কামড়ালি! দাঁড়া, তোর আমি কী করি দ্যাখ। কী করিবে ? কুসুম তাহাব কী করিবে? বুক দুরু দুরু করে মতির। ছােটােবাবুকে যদি বলিয়া দেয়! মতির মনে হয়, সে কুসুমের হাতে কামড়াইয়া দিয়াছে শুনিলে ছোটােবাবু ভয়ানক রাগ করিবে। খানিক পরেই সে কুসুমের আশেপাশে ঘোরাফেরা আরম্ভ করিয়া দেয়। এক সময় সাহস কবিয বলে, লেগেছে বউ ; দেখি ? কুসুমের ক্ষমা নাই। সে ভ্যাঙ ইয়া বলে, লেগেছে বউ ? কামড়ে গিয়ে ন্যাকামি করতে ५65न् । মতি দাওযায় আসিযা খুটি ধরিযা দাঁড়ায়। ভাবে বউ কী ভীষণ মেয়ে! ও ঠিক বলে দেবে। পিসিব ঘবের খোলা দবাজা দিয়া পিসিকে দেখা যায়। পিসির আজিকাল কথা বন্ধ হইয়া গিয়াছে । কথা বলিতে গেলে গলাম ফ্যাস ফ্যাস আওয়াজ হয় মাত্র, কিছুই সে বলিতে পারে না। মতিকে দেখিয়া সে হাতেব ইশারায় তাহাকে কাছে ডাকে। মাথা উঁচু করিয়া বারবার ব্যাকুল ভাবে মুখের। ফ্ৰাকে আঙুল ঢুকাইয়া পিপাসা জানায়। দেখিতে পাইয়াও মতি কিন্তু অনেকক্ষণ নড়ে না। বলে, যাই গো যাই।-- -অত ব্যস্ত কেন ?” পিসি। জল খাবে { bK এবার কার্তিক মাসে পূজা। সেনদিদির সর্বাঙ্গে ব্ৰণগুলি পাকিয়া উঠিতে উঠিতে গ্রামে পূজার উৎসব শুরু হইয়া গেল। উৎসব সহজ নয়, গ্রামের জমিদার শীতলবাবুর বাডি তিনদিন যাত্রা, পুতুলনাচ, বাজি পোড়ানো, সাতগাঁর মেলা—পূক্ত। তো আছেই। গ্রামবাসীর ঝিমানো জীবন প্রবাহে হঠাৎ প্রবল উত্তেজনার সঞ্চার হইয়াছে, কেবল শশী এবার সেনদিদিকে লইয়া বড়ো ব্যস্ত। যাত্ৰা আরম্ভ হয় সপ্তমীর রাত্রে। যাত্রার দল তার আগেই গ্রামে হাজির হইয়া যায়। বায়না দিবার সময় শীতলবাবু অধিকারীকে বলিয়া দেন, দল নিয়ে দু-একদিন আগেই আসবে বাপু, এক রাত্রি বেশ করে ঘুমিয়ে বাস্তার কষ্ট দূর করে অভিনয় করবে। এবার যে দলকে বায়না দেওয়া হইয়াছিল। সে দল এ অঞ্চলের নয়। বিনোদিনী অপেরা পাটির আদি আস্তানা খাস কলিকাতায়। বাজিতপুরের মথুরা সাহার ব্যাবসা উপলক্ষে কলিকাতা যাওয়া-আসা আছে। কিছুদিন আগে ছেলের বিবাহে এই দলটি সে কলিকাতা হইতে ভাড়া করিয়া আনিয়াছিল। লোকমুখে দলের প্রশংসা শুনিয়া শীতলবাবু সেই সময় বায়না দিয়া রাখিয়াছিলেন।