পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOOkS. in পুতুলনাচের ইতিকথা VSJÖNS কাল বিকালে বিনোদিনী অপেরা পার্টি আসিয়া পৌঁছিয়াছে। মস্ত দল, সঙ্গে অনেকগুলি বডো বড়ো কাঠের ব্যাকসো। দেখিয়া গ্রামের লোক খুশি হইয়াছে। দলের অধিকারী বি-এ ফেল, তবে দলে তাহার দুজন বি-এ পাশ অভিনেতা আছে শোনা অবধি সকলে উত্তেজিত হইয়া উঠিয়াছে। থেটাব, আঁ্যা ? উতু, যাত্রা। অপেরা পার্টির নাম যে ? তাই ভালো। মাত্রাই ভালো ! সাতগাবি কাছারি বাড়িটা সাফ করিয়া যাত্ৰাওলাদের থাকিতে দেওয়া হইয়াছিল। দলের সকলের মশারি নাই, কুমুদের আছে। রাত্রে তার ঘুম মন্দ হয় নাই। সকালে উঠিয়া সে শশীর সঙ্গে দেখা করিতে আসিল । শশী অবাক হইয়া বলিল, তুই! কুমুদ ? কুমুদ হাসিয়া বলিল, না রে, আমি প্রবীর। শশী বুঝিতে পারে না---প্রবীর কী, প্রবীর ? গ্রামে বিনোদিনী অপেব পার্টি এল, চারিদিকে হইচই পড়ে গেছে, খবর পাসনি? তুই যাত্ৰাদলের সঙেগ এসেছিস কুমুদ ? তুই যাত্ৰা করিস? কথাটা বিশাস করিতে এত বিস্ময বোধ হয়। কুমুদ বদলাইয়া গিয়াছে। মুখে আর সে জ্যোতি নাই। চুলে সেই অন্যমনস্ক বিদ্রোহ নাই। এত সকালেও কুমুদ কিছু প্রসাধন সাবিয়া তবে দেখা করিতে আসিমাছে। তবু, যতই বদলাক, এ তো সেই কুমুদ , মানের বই না দেখিয়া যে একদিন তাহাকে ক্লাসের কাব্যসঞ্চয়নে শেলির দুর্বোধ্য কবিতা বুঝাইয়া দিয়াছিল, মোনালিসার হাসির ব্যাখ্যা করিয়াছিল ? কুমুদ বলিল, করি বইকী যাত্রা। প্রবীর সাজি, লক্ষ্মণ সাজি, চন্দ্ৰকেতু সাজি, আবও কত কী সাজি। গলা ফাটিয়ে পার্ট বলি। সাতটা মেডেল পেয়েছি। শশী; অবাক হইয়া বলিল, আয, ঘরে আয়। বসে সব বলবি চল । কুমুদকে শশী তাহাব ঘবে লইযা গেল। ঘরে গিয়া আর একবার বলিল, আদিন পরে তুই এলি কুমুদ ! এতকাল পাবে তোর সঙ্গে দেখা হল! কী আশ্চর্য! তাহার বিছানায় বসিমা ঘরের চারিদিকে চাহিতে চাহিতে কুমুদ বলিল, এতে আশ্চর্যের কী আছে? তিন বছৰ ধরে বাংলাদেশেব কত গ্রামে ঘুবেছি তার ঠিক নেই। এবার তোদের গ্রামে এলাম। যাত্ৰাদলে ঢুকলি কেন ? সে এক ইতিহাস শশী। বাড়ি থেকে দিলে খেদিয়ে। নিলাম চাকরি। চাকরি থেকেও দিলে খেদিয়ে,-একদিন অন্তর আপিস গেলে কে রাখবো? ঘুরতে ঘুরতে বহরমপুরে বিনোদিনী অপেরা পার্টির যাত্রা শুনে অধিকারীর সঙ্গে ভােব জমালাম। অধিকারী লোক ভালো রে শশী, পরীক্ষা করে সতেরো টাকা মাইনে দিয়ে দলে নিলে। দু-চারটে সেনাপতির পার্ট করে গলা খুলল, খুব আবেগভরে চোঁচাতে শিখলাম। এক বছরের মধ্যে মেন অ্যাকটর। আশি টাকা মাইনে দেয়। মাসে আটটার বেশি পালা হলে পালা-পিছু পাঁচ টাকা করে বোনাস। দলে আমার খাতির কত!—কুমুদ হাসিল, গ্র্যান্ড সাকসেস, অ্যা? শশীও হাসিল, তুই শেষে যাত্রা করবি এ কথা ভাবতেও পারতাম না কুমুদ। আমিও কি ভাবতে পারতাম ? তখন আকস্মিক কথার অনটনে শশী বলিল, আজ তুই এখানে খাবি ভাই, সারাদিন থাকিবি। কুমুদ বলিল, বেশ।