পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in পুতুলনাচের ইতিকথা VSV26 মোক্ষদা বোধ হয় একটু লজ্জা বোধ করে। হযতো তাহার মনে হয় বুড়োমানুষের যাত্রা শুনিতে যাওয়ার জন্য এ কাণ্ড করা উচিত নয়। বাডিতে থাকিতে রাজি হইয়া সে গুমা খাইয়া বসিযা থাকে। রান্না শেষ করিষা কুসুম স্বামীকে খাওয়ায়, তারপর ননদেব সঙ্গে এক থালায় নিজে খাইতে বসে। পরান পেট ভরিয়া খায়, কুসুম আর মতির গলা দিযা আজ ভাত নামিতে চায় না। ফেলাছড়া কবিয়া কোনোবিকমে তাহারা খাওয়া শেষ করে। দিনের আলো যত স্নান হইয়া আসে মনেব। মধ্যে তাঁহাদের এই আশঙ্কা ততই প্রবল হইয়া ওঠে যে, ওদিকে বুঝি যাত্রা শুরু হইয়া গেল। মতিকে কাপড় পরিতে হুকুম দিয়া কুসুম হেঁসেল তুলিয়া ফ্যালে। পুকুরে যাওয়ার সময় এখন নাই। উঠানের এক কোণে ছাইফেলা আমগাছটির তলে বসিযা বাসন কখানা কুসুম তাড়াতাড়ি মজিয়া নেয়। এই সুবিধাটুকুর ব্যবস্থা সে সেই বিকালেই করিয়া রাখিয়াছে। দুর্কাখে দুটি কলসি বহিয়া কত জল তুলিয়া কুসুম যে আজ হাঁডি গামলা সব ভর্তি করিয়াছে! মতি বলে, আমিও হাত লগাই বউ, শিগগির হয়ে যাবে, আঁ্যা ? না। মতি তাড়াতাডি কাজ করিতে পারে এ বিশ্বাস কুসুমের নাই। এক মিনিটেব কাজে মতি দশ মিনিট লাগাইযা দিবে। যা বললাম। তাই কর তো তুই। কাপড় পরতেই তো তোমার দশ ঘণ্টা। একসময় rগাধূলি শেষ হওযার আগেই, কী করিয়া কাজ শেষ হয়। বাকি থাকে। শুধু এটা আবি ওটা, যা কবিলেও চলে, না করিলেও চলে। কুসুমেব তাডায় পরান ও মতি দুজনেই সাজ সমাপ্ত করিযাছে। নিজে সাজিতে গিয়া ওদেব দুজনকে দেখিয়া কুসুম এতক্ষণে একটু হাসিল। শার্টেব উপর উডানি চাপানোয় পর্যানকে একেবাবে বাবু বাবু দেখাইতেছে। আবা ডুবে শাড়ি পরিয়া মতি হইয়াছে সুন্দবী। মাতিব হালকা অপরিণত দেহটিকে কুসুম হিংসা করে। মনে হয়, তাহাব নিজেব স্বাস্থ্য এতখানি ভালো না হইলেই যেন সে খুশি হইত। ডুরে শাড়ি তারও আছে বইকী। তবে আজকাল রঙিন লাইন দিয়া শৰীল ঢাকিতে কুসুমেব লজ্জা করে। আসবে যখন তাহারা পৌছিল, যাত্ৰা আবিস্তম্ভ হইতে বিলম্ব আছে, চিকের আড়ালে জায়গার জন্য কলহ শুরু হইয়া গিয়াছে ইতিমধ্যেই। সকলেই চিক ঘেষিয়া বসিতে চায়, এগারো বছরের সদা পর্দা-পাওয়া মেযে হইতে তাহাব পঞ্চাশ বছরেব দিদিমা পর্যন্ত। এ সব বিষযে কুসুম ভারী ওস্তাদ। সকলকে ঠেলিয়া ঠলিয়া সেই যে সে চিকের কাছে প্রথম সাবিতে একটা দশ ইঞ্চি ফাকের মধ্যে নিজেকে গুজিযা দিল কেহ আর তাহাকে সেখান হইতে নড়াইতে পারিল না। মতি তাহার পিঠেব সঙ্গে মিশিয়া সংস্কৃত সাহিত্যের ছুঁচের পিছনে সুতা চলার উপমার মতো আগাইয়া আসিযাছিল। কুসুমেব পিঠ ঘেষিয়া সে একরকম চরণ দত্তের গৃহিণীর কোলের উপরেই বসিয়া পড়িল। চবণ দত্তেব গৃহিণী তাহাকে ঠেলিতে আরম্ভ করায় কুসুমের কোমরটা সে জড়াইয়া ধরিল প্ৰাণপণে । কুসুম মুখ ফিরাইয়া চোখ রাঙাইয়া চরণ দত্তের গৃহিণীকে বলিল, মেয়েটাকে ঠেলছ কেন গা? কেন ঠেলছ? গাল দিলে ভালো হবে! সরে বোসো, জায়গা দাও। সবাই বসবে, সবাই দেখবে,--- (AESS Hoss: TSGN (AS REN SV 2 কুসুমকে মতির এত ভালো লাগিল! কুসুমের কাছে মতি এত কৃতজ্ঞতা বোধ কবিল! যাত্রা শুরু হওযাব একটু আগে কুসুম বলিল, ওই দাখ মতি, ছোটােবাবু। দেখেছি। এত লোক, এত আলো, এত শব্দ---মতির নেশা লাগিয়া গিয়াছিল। পাটকরা মুগার চাদরটি কঁধে দেওয়ায় শশীকে ভারী বাবু দেখাইতেছে। সে আসরে আসিয়া দাঁড়ানাে মাত্র মতি তাহাকে দেখিতে পাইয়াছিল। স্বয়ং শীতলবাবু তাঁহাকে ডাকিয়া কাছে বসাইলেন দেখিয়া শশীর সম্মানে মতিরও সম্মানের সীমা নাই।