পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in V) Գեր মানিক রচনাসমগ্ৰ সারাদিন তাহার মন খারাপ হইয়া রহিল। নিজের চারিদিকে সে যে শিক্ষা ও সভ্যতার খোলটি সযত্নে বজায় রাখিয়াছিল, কুসুম তাহাতে ফাটল ধরাইয়া দিয়াছে। কুসুমের কথা মিথ্যা নয়। হারু ঘোষের চেয়ে তাহাব বাবা কি একদিন গরিব ছিল না? লোকের গলায় ছুরি দিয়াই গোপাল যে পয়সা করিয়াছে এ কথারও প্রতিবাদ চলিবে না। গোপালের চেয়ে কুসুমের বাবা ঢের বেশি ভদ্রলোক। কুসুমকে তাহাব বাবা মধ্যে মধ্যে পত্র লেখে। গোপালের সাধ্য নাই আমন সুন্দর হস্তাক্ষরে ও রকম চিঠি লিখিতে পারে। ঠিকানায কুসুমের নামটা বাংলায় লিখিয়া কুসুমের বাবা বাকিটা লেখে ইংরাজিতে। গোপাল এ বি সি ডি-ও চেনে না। অপমানটা করিবার সময় কুসুম হয়তো এই সব কথাও মনে রাখিয়াছিল। গ্রামের লোকেরা তাহাকে যে ছোটােবাবু বলিয়া ডাকে ইহাতে শশীর গৌরব কিছু নাই। এটা উপাধি মাত্র, শুধু নাম। সম্মান নয়। গোপালের মক্কেলরা শিশুকালে আদর করিয়া তাহাকে ছোটােবাবু বলিয়া ডাকিত, ডাকটা কী করিয়া গ্রামে ছড়াইয়া গিয়াছে এবং টিকিয়া আছে। এ সব ভুলিয়া গিয়া সে কি অহংকারী হইয়া উঠিতেছিল? সকলের সঙ্গে ছোটােবাবুটির মতো ব্যবহার শুরু করিয়া দিয়াছিল? শশীর আত্মসম্মান অত্যন্ত আহত হইয়া রহিল! সে ভাবিল, আমার রকম সকম দেখে কুসুম হয়তো মনে মনে হাসে। কুসুম হয়তো ভাবে, আঙুল ফুলে কলাগাছ হলে এমনিই কবে মানুষ! বাপের চুরি-চামারির পয়সায় লেখাপড়া শিখে এত কেন ? কুসুম ক্ষমা চাহিতে আসিল দিন চারেক পরে। দুপুরবেলা, চুপিচুপি, চােরের মতো! শশীর ঘরের পিছনে বাগান। বাগানে লিচু হয়, আম হয়, কঁঠাল হয়, কপি হয়, নাট শাক হয়, তীব্রগন্ধী কঁঠালি চাপা, লালবেঁটা শিউলি ফুল ফোটে। বাগান দিয়া আসিয়া ঘরের জানালার ফঁাকে ফিসফিস করিয়া কুসুম ডাকিল, ছোটোবাবু, শুনুন। শশী ঘুরিয়া বাগানে গিয়া দাখে জানালার নীচে তাহার অতি সাধের গোলাপ চারটি কুসুম দুই পায়ে মাড়াইয়া মাটিতে পুতিয়া দিয়াছে। গাছটা মাড়ালে কোন বউ ? কীসে দাঁড়ােচ্ছ দেখে দাঁড়াতে হয়! শশীর সাধের ফুলের চারাকে হত্যা করিয়া শুরু করিলেও কুসুমের কাজ হইল। শশী তাঁহাকে ক্ষমা করিয়া ফেলিল; —সমস্ত অপরাধ। আজ পর্যন্ত কুসুম তাহার কাছে যত অপরাধ করিয়াছে সব। কুসুম বলিল, চার রাত সে ভালো করিয়া ঘুমায় নাই। কথাটা শশী বিশ্বাস করিল। কুসুম অমানবদনে মিথ্যা বলে জানিয়াও বিশ্বাস কবিল। কারণ, কুসুমের মুখে কথাটার প্রমাণ ছিল এবং চোখে ছিল জল। কুসুম আরও বলিল, কয়েক দিনের মধ্যেই সে বাপের বাড়ি চলিয়া যাইবে। তার বাবা ভুবনেশ্বর পত্র দিয়াছে। ছোটোবাবুকে রাগাইয়া চলিয়া যাইবার কথাটা ভাবিতে তাহার এমন খারাপ লাগিতেছিল। তাই ক্ষমা চাহিতে আসিয়াছে। আমার এই স্বভাবের জন্য কেউ আমাকে দুচোখে দেখতে পারে না। মুখের আমার আটক নেই! শশী জিজ্ঞাসা করিল, সেদিন রাত্রে তোমার কী হয়েছিল বলো তো ? সত্যি বোলো। পেট ব্যথা করছিল। জিভ দেখি ? কুসুম সলজভাবে জিভ দেখাইল। জিভ তো পরিষ্কার। জিভ পরিষ্কার হবে না কেন ছোটােবাবু? না, জিভ অপরিস্কার থাকিবার কোনো কারণ নাই। কুসুমের স্বাস্থ্য বাহিরের ফঁাকি নয়, ভিতরেও সে খুব মজবুত। কুসুমকে শশীর এই জন্যই ভালো লাগে। দশ বছরে একবার একরাত্রে শুধু একটু