পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in Wー)br8 মানিক রচনাসমগ্র সময় না থাকলে আর কথা কী ? সেইখানেই ইতি। নীেকায় গিয়া সুটকেস হইতে আযন চিরুনি বাহির করিয়া নন্দ চুলটা ঠিক করিয়া লইল। পানেব কোটা হইতে দুটা পান ও জর্দার কোটা হইতে খানিকটা জর্দা মুখে দিল। গায়ের দামি আলোয়ানটা খুলিয়া রাখিয়া একটা তার চেয়ে দামি শাল গায়ে দিয়া মোটরে উঠিল। এসো শশী। আমার একটু তাড়াতাড়ি আছে। সেই যেন এতক্ষণে মোটরের মালিকানা স্বত্ব পাইয়াছে। তা, সেটা আশ্চর্য নয়। মোটরে চডার অভ্যাস। নন্দলালের আছে, শশী তো চাপে গোরুর গাডি। শশী বলিল, তুমি যাও। আমার এদিকে কাজ আছে! কলিকাতা শহর! মোটরে চাপিয়া কলিকাতা শহর গাওদিযার দিকে চলিয়া গেল। বিন্দুকে নন্দ স্বতন্ত্র বাড়িতে বাখিয়াছে দাস-দাসী দরোয়ান আব্ব বিলাসিতাব ব্যবস্থা করিয়া দিয়াছে। বিন্দুর বাড়ি যে পাড়ায়, সে পাড়াটাও ভালো নয়। নন্দ কি পাগল ? পাগল হোক আর যাই হোক, ওকে তো সে অনায়াসে মারিতে পারিত। বৃষ্টিধারার মতো কিল চড় ঘুষি। কতক্ষণ আর সহিতে পারিত ? পাচ মিনিট। পাঁচ মিনিটের মধ্যে নন্দ পায়ের কাছে গড়াগড়ি দিত। অজ্ঞান অচৈতন্য নন্দ । তবু, নন্দ হয়তো বিন্দুকে ভালোবাসে? শীত জমিয়া আসে। পৌষ-পার্বণ আসিয়া পড়িতে আর দেরি নাই। গ্রামে অবিরত টেকি পাড় দিবাব শব্দ শোনা যায়। আকাশে বাবিব তেজ কমিয়াছে। মাঠে রবিশস্য সতেজ। মানুষেবা গা ফাটিতে আরম্ভ কবিয়াছে। গায়ে যাহার মাটি বেশি, ঘষা লাগিলেই খড়ি উঠিয়া যায়। লেপ কঁথা খোলা হইয়াছে, বেড়াব ফঁাকগুলিতে ন্যাকড়া ও কাগজ গোঁজা হইতেছে। মতি একবাব জুরে পড়ি-পড কবিযা পড়ে নাই। কুসুমের আর একবার পেটব্যথা হইয়া গিয়াছে। পরান একদফা গুড় চালান দিযৗছে। এবার তাহাব কিছু পাটালি গুড় করিবার ইচ্ছা। শশীর কাছে কিছু টাকা ধার করিয়া সে আরও প্রায় চল্লিশটা খেজুব গাছ লইয়াছে। লালীর বাছুরটা নিতাই একদিন যাচিয়া পরানকে ফেরত দিয়া গিযাছে। ছোটােবাবুর জন্যে। নইলে বাছুর তুমি কখনও ফেবত পেতে না। এই কথা বলিয়াছে কুসুম। খেজুর গাছ কেনার জন্য শশীর কাছে পরানকে টাকা ধার করিতে দিতে কুসুমের অত্যন্ত অনিচ্ছা দেখা গিয়াছিল। সব সময় তাহার ইচ্ছা ও অনিচ্ছাকে মর্যাদা দিলে সংসার চলে না, এই যুক্তিতে, পরান তাহার কথা গ্রাহ্য করে নাই। মোক্ষদার শরীরের অবস্থােটা কিছুদিন হইতে ভালো যাইতেছে না। শশীর বাড়িতে একটি আশ্রিত মেয়ে, শশীর সে কী সম্পর্কে ভাইঝি হয়, ছেলে হওযার সময ঠান্ডা লাগিয এই ব্যাপাবটাতে শশী বড়ো ধাক্কা পাইয়াছিল। বাড়ির উঠানে সাময়িক ভাবে অতি কম খরচে কঁচা বাঁশের সস্তা বেড়ার একটি ঘর তুলিয়া আঁতুড়ঘর করা হয়। চাল টিনের। ব্যাপাব চুকিলে টিনের চালাটি ছাড়া ঘরটিকে বিসর্জন করা হয়। মৃতা মেয়েটির বেলাতেও এই ব্যবস্থাই হইয়াছিল। এখন শশীর বাড়িতে এ প্রথা চিরন্তন। শশী নিজেও এমনি একটি কুটিরে জন্মগ্রহণ করিয়াছে, মরে নাই। শশী পৃথিবীতে আসিয়াছিল উলঙ্গ সন্ন্যাসী হইয়া, এখন সে ডাক্তার। পসারওয়ালা ডাক্তার। এমন ব্যাপার সে ঘটিতে দিল কেন ? সে কি শুধু টাকার জন্য ডাক্তারি শিখিয়াছে? যেখানে যতটুকু কাজে লাগাইলে টাকা মেলে আপনার শিক্ষাকে সেখানে ঠিক ততটুকুই কাজে লাগাইবে? সমস্ত গ্রামকে স্বাস্থ্যতত্ত্ব শিখাইতে যাওয়া বৃহৎ ব্যাপার, ওটা না হয় সে বাদ দিল, কিন্তু নিজের গৃহে ?