পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in ○brやり মানিক রচনাসমগ্র কথাটা বোধ হয়। মিথ্যে নয়। দুপুরে না ঘুমুলে অম্বলের জ্বালা বোধ হয় একটু কমে। কিন্তু পেটে ভাতটি পড়লেই যে চোখ জড়িয়ে আসে, তার কী হবে ? গোপাল শুনিয়া বলে, ও কি শেষে বাড়িতেই ডাক্তারি বিদ্যে ফলাতে আরম্ভ করল না কি ? সন্ধ্যার পর ঘরে ঘরে শশী একবার বেড়াইয়া আসে। পাকা ঘরের অধিবাসীদের বলে, তোমাদের কাণ্ডখানা কী? দম আটকে মরবে যে সবাই! সব জানালা বন্ধ, বাতাস আসবে কোথা দিয়ে ? তাহারা হাসে ; জানােলা খুলিলে ঠান্ডা লাগিবে না? একঘর বাতাস আগে এই কটি প্রাণী নিশ্বাস নিক, দম তো আটকাইবে তবে ? বেড়ার-ঘরের অধিবাসীদের শশী বলে : বেড়ার ফাক পর্যন্ত কাগজ দিয়ে বন্ধ করেছি। এর মধ্যে বাতাস দুৰ্গন্ধ হয়ে উঠেছে। একটা জানালা অন্তত খুলে দাও। কাল নইলে আমি সিলিং কাটিয়ে দেব, চাল আর বেড়ার মধ্যে যে ফাক আছে তাই দিয়ে পচা বাতাসটা তো বেরিযে যাবে! কুন্দ বলে, খেমির মতো আমাদেরও নিমুনিয়া করিয়ে মারবেন নাকি শশীদাদা ? কচি ছেলে নিয়ে কঁচা ঘরে আছি, কত সাবধানে থাকতে হয় আপনি তার কী বুঝবেন। এ তো দালান নয, পাক ঘর তো আর আমাদের ভাগ্যে নেই যে—— প্রত্যেক কথায় কুন্দ এমনি নালিশ টানিয়া আনে। এই তাহার স্বভাব। বাড়ির লোকের স্বাস্থ্য ভালো করার চেষ্টা শশী ত্যাগ করিয়াছে। প্রথমটা ভয়ানক রাগ হইয়াছিল ; ব্ৰকমে ক্ৰমে সে কবিযাছে জ্ঞানলাভ। সে বুঝি যাছে, তার স্বাস্থ্যূনীতি পালন করিতে গেলে জীবনেব সঙ্গতি ওদের একেবালে নষ্ট হইয়া যাইবে, অসুখী হইবে ওরা। রোগে ভুগিষা, অকারণে মরিয়া ওরা বড়ো আনন্দে থাকে। স্মৃর্তি নয়,--আনন্দ,--শাস্ত স্তিমিত একটা সুখ। স্বাস্থ্যের সঙ্গে, প্রচুর জীবনীশক্তির সঙ্গে, ওদেব জীবনের একান্ত অসামঞ্জস্য। ওরা প্রত্যেকে বুগণ অনুভূতির আড়ত, সংকীর্ণ সীমার মধ্যে ওদের মনের বিস্ময়কর ভাঙা-গড়া চলে, পৃথিবীতে ওরা অস্বাস্থ্যকর জলাভূমির কবিতা : ভ্যাপসা গন্ধ, আবছা! কুয়াশা, শ্যামল শৈবাল, বিষাক্ত ব্যাঙের ছাতা, কলমি ফুল। সতেজ উত্তপ্ত জীবন ওদের সহিবে না। শশী ভাবে। ভাবিয়া অবাক হয় শশী। কুমুদ একদিন এই ধরনের একটা লেকচার ঝাডিয়াছিল, পৃথিবীসুদ্ধ লোক যে কত বােকা এই কথাটা প্রমাণ করিবার জন্য। কাপড়-মাপা গজ দিয়া আমবা নাকি আকাশের রং মাপি, জীবনের অবস্থার হিসাবে স্থির করি মনের সুখ-দুঃখ ; বলি মানুষ দুঃখী, আর রাগে গরগর করি। মিথ্যা তো বলে নাই কুমুদ, শশী ভাবে। চিন্তার জগতে সত্যসত্যই আমাদের স্তর-বিভাগ নাই। বস্তু আর বস্তুর অস্তিত্ব এক হইয়া আছে আমাদের মনে। কখনও কি ভাবিয়া দেখি মানুষের সঙ্গে মানুষের বঁচিয়া থাকার কোনো সম্পর্ক নাই ? মানুষটা যখন হাসে অথবা কঁদে তখন হাসি-কান্নার সঙ্গে জড়াইয়া ফেলি। মানুষটাকে ; মনে মনে মানুষটার গায়ে একটা লেবেল আঁটিয়া দিই—সুখী অথবা দুঃখী। লেবেল আঁটা দোয্যের নয়। সব জিনিসেরই একটা সংজ্ঞা থাকা দরকার। কে হাসে আর কে কঁদে এটা বোঝানোর জন্য দু-দশটা শব্দ ব্যবহার করা সুবিধাজনক বটে। তার বেশি আগাই কেন ? কোন পরিবর্তন চাই? নিঃশব্দ অশু মুছিয়া আনিতে চাই কেন সশব্দ উল্লাস? রোগ শোক দুঃখ বেদনা বিষাদের বদলে শুধু স্বাস্থ্য বিস্মৃতি সুখ আনন্দ উৎসব থাকিলে লাভ কীসের ? আরও মজা আছে। লাভ না থাক, ক্ষতিই বা কী? ভাবিতে ভাবিতে রীতিমতো বিতুল হইয়া যায় বইকী শশী! সে রোগ সারায়, অসুস্থকে সুস্থ করে। অথচ একেবারে চরম হিসাব ধরিলে শুধু এই সত্যটা পাওয়া যায় ; রোগে ভোগা, সুস্থ হওয়া, রোগ সারানো, রোগ না। সারানো, সমান-রোগীর পক্ষেও শশীর পক্ষেও। এ সব ভাবিতে ভাবিতে কত অতীন্দ্ৰিয় অনুভূতি যে শশীর জাগে! রহস্যানুভূতির এ প্রক্রিয়া শশীর মৌলিক নয় ; সব মানুষের