পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOOkS. in পুতুলনাচের ইতিকথা VSbord গেল। ভূতোর মৃত্যুর তিন মাস পরেও এ বাড়িব কাছাকাছি পথ দিয়া যাওয়াব সময় শশী এব বিনানো কান্না শুনিয়াছে। আজও সে কঁদিতেছিল, নিঃশব্দে। আশ্চর্য নয়, যােব চিকিৎসায় ভুতো বঁাচে নাই সেই ডাক্তার আসিয়া ভিজিটের টাকার জন্য এমন কাণ্ড করিলে মন যার স্নেহ কোমল সে তো কঁদিবেই। পাংশু মুখে শশী পলাইয়া আসিল। ভূতোর চিকিৎসার হিসেব সে যে ধরে নাই,--যে টাকা সে আদায় করিযাছে তার প্রত্যেকটি পয়সা যে এ বাড়ির অন্য লোকের অসুখের চিকিৎসা করার দরুন,--যাবা। আজও সুস্থ শরীরে বঁচিয়া আছে,--বউটি একবারও তাহা ভাবিবে না। ভূতের জন্য মন কেমন করিলে গাওদিয়ার শশী ডাক্তারকে স্মরণ কবিয়া সে শিহরিয়া উঠিবে। হয়তো কোনোদিন শহরের প্রতিবেশিনীদের কাছে গ্রামের গল্প বলিবাব সময় আজিকার ঘটনার উল্লেখ করিয়া বলিবে, গায্যের ডাক্তারগুলো পর্যন্ত এমনি মানুষ দিদি, আমরা গা ছেডে এসেছি কি সাধে ? কয়েক দিন পরে শশীব একবার কলিকাতা যাওযার প্রয়োজন ছিল,—কয়েকখানা বই ও কতকগুলি ওষুধ কিনিবে। একদিন পবান লজ্জিত মুখে কাছে আসিয়া দাঁড়াইল, বলিল, কলকাতা যাবার বায়না শশী। অবাক হইয়া বলিল, কলকাতা যাবে? কার সঙেগ ? বলছে আপনার সঙেগ যাবে। শশী হাসিয়া বলিল, তুমি বুঝি তাই আমাকে বলতে এসেছ, যদি নিয়ে যাই ? তোমার বুদ্ধি নেই পরান। আমি যেতে পারি নিয়ে,-গাঁয়ের লোক বলবে কী? শশী এক মতিকে লইয়া কলিকাতা যাইবে পরান সে কথা বলিতে আসে নাই ; পরানও সঙ্গে যাইবে বইকী। মোক্ষদা বাবকয়েক গঙ্গাস্নানের ইঙ্গিত করিয়াছে—এ সুযোগ বুড়ি ছড়িবে মনে হয় না। সুতরাং কুসুমও যাইবে সন্দেহ নাই। মতির জন্য এবার ফতুর হইতে হইবে পরানকে,-এতগুলি মানুষের কলিকাতা যাওযা-আসাব খরচ কি সহজ! কিন্তু না গেলেও চলিবে না,-মতি দুদিন নাওয়া খাওয়া ছাডিয়া কাদিয়াছে। হঠাৎ ওরা এত কলকাতা যাওয়ার শখ হল কেন ? —শশী জিজ্ঞাসা কবিল ; পরান তা জানে না। মাথা নাড়িয জ্ঞানীর মতো সে শুধু বলিল, জানেন ছোটোবাবু, নাই দিয়ে দিযে। কর্তা ওর মাথাটা খেয়ে গেছে। নাই তুমিও ওকে কম দাও না পরান! শশী মতিকে বুঝানোর চেষ্টা করিল। বলিল, কী চাস তুই আমাকে বল, কিনে আনিব তোর জন্যে— কী করবি মিছামিছি। কলকাতা গিয়ে ? মাতি ভীরু ও শান্ত, শশীর কথা সে চিরকাল মানিয়া আসিয়াছে।-- আজ কিন্তু সে কোনো কথা কানে তুলিল না। শেষে শশী রাগিয বলিল, চল তবে, চল । শোকে কলকাতায় ফেলে রেখে আমরা চলে আসব। তখন টেব পাবি। নীেকা, স্টিমার, রেল, তবে কলিকাতা। সমস্ত পথ মতি অস্থিব, উত্তেজিত হইয়া রহিল! কুসুম চারদিক দেখিতে দেখিতে বেড়ানোর আনন্দ উপভোগ করিতে করিতে চলিল, কিন্তু মতির যেন নদীর বুকে, রেলপথের দুধারে দেখিবার কিছু মিলিল না। অতটুকু মেয়ে, জীবনে এই প্রথম দূরদেশে বেড়াইতে চলিয়াছে, চোখের পলকে পথ ফুরাইয়া গন্তব্য স্থানে পৌছাইয়া যাওয়ার ভয়টাই ছিল তার পক্ষে স্বাভাবিক, কিন্তু তার একান্ত আগ্রহ দেখা গেল তাড়াতাড়ি কলিকাতায় উপস্থিত হইতে।