পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOOkS. in পুতুলনাচের ইতিকথা DSS পাড়াটা ভালো নয়। যে পথের শেষাশেষি বিন্দুর বাডি--সন্ধ্যার পর মানুষকে সে পথে হাঁটিতে দেখিলে চেনা লোক নিন্দা রটায়। তবে বিন্দুর বাডিটা একটু তফাতে, —ভদ্রপাড়ার গা ঘেঁষিয়া! বাড়ির পুব দিকে খানিকটা জমি খালি পড়িযা আছে। ইট সুরকির তলে সমাধি পাওয়া বিন্দু বোধ হয়। ওই দিকে চাহিয়া মাঝে মাঝে অবরুদ্ধ নিশ্বাস ত্যাগ করে। নন্দ বাডি ছিল না। বিন্দুকে শশী প্রায় আড়াই বছর পরে দেখিল। প্রায় তেমনি আছে বিন্দু। বিন্দুর ঘরের চেহারাও বিশেষ বদলায় নাই । কেমন আছিস বিন্দু ? ভালো আছি। দাদা, কবে এলে? সবাই ভালো আছে তো ? শশী হাসিয়া বলিল, বলব কেন ? চিঠি লিখে খবর নিতে পারিস না ? বিন্দু বলিল, চিঠি লিখতে বড়ো আলসেমি লাগে দাদা! শশী জানে এটা ফাকিব কথা। নন্দ চিঠি লিখিতে দেয় না। শশীকে খাবার দিয়া বিন্দু নানা কথা জিজ্ঞাসা কবিতে লাগিল। গাওদিয গ্রামটি সম্বন্ধে আজও বিন্দুর কৌতুহল আছে। কে বাঁচিয়া আছে, কে স্বগে গিয়াছে, চেনা ছেলেমেযেদের মধ্যে কার কার বিবাহ হইয়াছে, কার কটি ছেলেমেয়ে— শশীর মুখে এ সব খবব শুনিতে শুনিতে বিন্দুর চোখ ছলছল করিতে লাগিল। শশী মন্নিল এব মধ্যে তোর খোকা-খুকি। কিছু হয়নি বিন্দু ? বিন্দু ঘাড নাড়িল। কিন্তু মুখে বলিল উলটা কথা। মরে গেল যে ? মরে গেল ? কিবে মরে গেল ? আর বাছবি । শেষবার দেখিতে আসিয়া শশীর মনে হইয়াছিল বিন্দুর বোধ হয় ছেলে হইবে। সে ছেলে হইয়া তবে মবিয়া গিযাছে ? বিন্দু দেয়ালের গায়ে রাধাকৃষ্ণের ছবিটার দিকে চাহিয়া দাঁড়াইয়া ছিল। হঠাৎ শশীর মনে হইল শরীরটা বিন্দুব ঠিক আছে, কিন্তু মুখটা তাহার কেমন এক অদ্ভুত রকমের রোগা হইয়া গিয়াছে। মুখেব চামড়ার নীচেই যেন শুষ্কতা,—ত্বকে লাবণী শুষিয়া লইতেছে। তোর অসুখ-বিসুখ করেছে না কি বিন্দু ? কীসেব অসুখ ?? বেশ আছি আমি। বাহিরে গিয়া বিন্দু কোথা হইতে একপাক ঘুরিয়া আসিল। ভালোই আছিস বিন্দু, আঁ্যা ? আছি বইকীী ! সমস্ত ব্যাপারটা এমন বিস্ময়কর লাগে! এমন রহস্যময় মনে হয় বিন্দুর মুখের গোপন-করা বুডোটে ভাব, বিন্দুর অবসাদকিষ্ট, নিরুত্তেজ কথা। বিন্দু তার বোন, পাতানো সম্পর্ক নয়। ছুরি দিয়া আঙুল কাটিয দিলে দুজনের যে বক্ত বাহিব হইবে তাহা এক, কোনো পার্থক্য নাই। অথচ বিন্দুকে সে একরকম (bान्म ब्ा, (दाद न्] ! শশী মমতাব সঙ্গে বলিল, অত দুরে বসলি যে? এদিকে আয়, এখানে বোস। বিন্দু উদ্ধতভাবে বলিল, কেন ? শশী বলিল, আয়, সরে আয়, কটা কথা শুধেই তোকে। ইতস্তত করিয়া বিন্দু কাছে আসিল। তার দুচোখ দিয়া জল পড়িতেছে। কঁাদিস কেন ? এ প্রশ্নে বিন্দু একেবারে ফুপাইয়া কঁদিয়া উঠিল।