পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in WDs Sq মানিক রচনাসমগ্ৰ কোনোদিন তুমি আমাকে কাছে ডেকেছা! কেউ ডেকেছে! শশী অবাক হইয়া যায়। কিছু বলিতে পারে না। এ বাড়িতে আসিয়া পরের মতো আধঘণ্টা বসিয়া সে চিবদিন বিদায় লইয়াছে, তা সত্য। কিন্তু কী করিতে পারিত শশী? কদাচিৎ অতটুকু সময়ের জন্য সে যে আসিত, তাতেই নন্দ পাছে রাগ করিয়া বিন্দুকে কষ্ট দেয় শশীর সে জন্য ভয় করিত। বিন্দুর মনে তাতে এত ব্যথা লাগিল, সেই নিরুপায় অনাদরে ? বিন্দু তো কোনোদিন কিছু বলে নাই মুখ ফুটিয়া! অনেক দিনের অভিমানে বিন্দু অনেকক্ষণ কঁদিল। শেষে সে শান্ত হইলে শশী বলিল, তোর ব্যাপারটা কী খুলে বল তো বিন্দু ? কিছু না দাদা। শশী বুঝাইয়া বলিল, আজ না বললে আর কোনোদিন বলতে পারবি না বিন্দু—অনাদিন লজ্জা করবে। নন্দ খারাপ ব্যবহার করে ? কুঁ। আমাকে ভীষণ শাস্তি দিচ্ছে। ভীষণ শাস্তি ? নন্দ ভীষণ শাস্তি দিতেছে বিন্দুকে ? বিন্দুর এমন বাড়ি, এত কাপড় গয়না, এত বিলাসিতার ব্যবস্থা! নন্দ তোকে ভালোবাসে না বিন্দু ? বাসে। স্ত্রীর মতো নয়। --রক্ষিতার মতো। অ্যা? কীসের মতো ?—শশী যেন বুঝিতে পারে। গাওদিয়ার বিন্দুকে গ্রাস-করা কলিকাতার অনামি-রহস্য শশীর কাছে স্বচ্ছ হইয়া আসে। বিন্দু বলিল, দেখবে? উনি এলে কোন ঘরে বসেন দেখবে দাদা ? চলো দেখাই। শশীর দেখিবার সাধ ছিল না, হাত ধরিয়া বিন্দু তাহাকে টানিয়া লইয়া গেল। ওদিকের বড়ো একখানা ঘরের তলা খুলিয়া সুইচ টিপিয়া বিন্দু আলো জ্বলিল। কী সে তীব্র আলো! গোটা তিনেক বালব ঘিরিয়া কঁাচের ঝাড় ঝলমল করে,--শশীর চোখ যেন ঝলসিযা গেল। দেয়ালে আট-দশটা অশ্লীল ছবি। মেঝে জুড়িয়া ফরাশ পাতা। তাতে কয়েকটা বড়ো বড়ো তাকিয়া। হাবমনিয়াম, বঁয়া তবলা এ সবও আছে। বিন্দু বলিল, গান শিখিয়েছেন। উনি তবলা বাজান, আমি গান করি। শশীর আর কিছু দেখিবাব অথবা শুনিবার ইচ্ছা ছিল না। সে মড়ার মতো বলিল, ও ঘরে চল বিন্দু। বিন্দু শক্ত করিয়া তাহার হােত চাপিয়া ধরিয়া বলিল, না আসল জিনিস দেখে যাও। ঘরে ছোটো একটি আলমারি ছিল। টানিয়া দরজা খুলিয়া বিন্দু বলিল, দ্যাখো। শশী না দেখিয়াই অনুমান করিয়াছিল। আলমারির তাকগুলি নানা আকারের নানা লেবেলের বোতলে বোঝাই হইয়া আছে। নিজেকে শশীব অসুস্থ মনে হইতেছিল। এমন কাণ্ডও ঘটে সংসারে? কী শক্ত মেয়ে বিন্দু! এতকাল এ কথা সে চাপিয়া রাখিয়াছিল ? ছেলে হইয়া মরিয়া না গেলে, স্নেহ করিয়া কাছে না ডাকিলে, আজও হয়তো সে কিছু ললিত না। তুই খাস ? না খেলে ছাড়ছে কে দাদা ? দাখো, আমার একটা দাঁত বাধানো, -প্ৰথম দিন সাঁড়াশি দিয়ে দাঁত ফাক করে গলায় ঢেলে দিয়েছিল। তারপর থেকে নিজেই খাই। এদিকের ঘরে আসিয়া শশী বলিল, জোর করে বিয়ে দেবার জন্যে, না ?