পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in VDS8 মানিক রচনাসমগ্ৰ তাও শশী জানে-দেড়শো টাকা! গোপালের গ্ৰাম্য রসিকতায় সেই সেনদিদি আজ এমন অকুণ্ঠ হাসি হাসিতে পারে ভাবিলে গ্রামের উপরেই শশীর বিতৃষ্ণা যেন বাড়িয়া যায়। বিন্দুকে সেনদিদি একদিন একই প্রায় তিনঘণ্টা কোণঠাসা করিয়া রাখিল। বাক্যাহারা মেয়েটাকে কত কথাই সে যে বলিল তার ঠিকাঠিকানা নাই। বিন্দু বেশির ভাগ কথার জবাব পর্যন্ত দিল না। তাতে দমিবার পাত্রী সেনদিদি নয়। নিজে প্রশ্ন করিয়া নিজেই একটা পছন্দসই জবাব আবিষ্কার করিয়া বিন্দুর সম্বন্ধে নিজের কাল্পনিক জ্ঞানকে সে অবাধে আগাইয়া লইয়া গেল। মোট কথাটা দাঁড়াইল এই ; নন্দ আর একটা বিবাহ করিয়া বিন্দুকে খেদাইয়া দিয়াছে। নন্দর তাহলে তিনটে বিয়ে হল--না দিদি ? কী মানুষ নন্দ, অ্যা? শশী বুঝি খবব পেয়ে আনতে গিয়েছিল? তাই তো বলি, হঠাৎ কেন শশী কলকাতা গেল!! আমি কি জানি দিদি স্তোব এমন অব্দেষ্ট হয়েছে! এমনই আবেগপূর্ণ মমতা সেনদিদির! কানা চোখ ভরিয়া তাহার অশু টলটল কবিতে লাগিল! কুসুম যেদিন শশীব ঘর দেখিয়া গিয়াছিল তারপব নির্জনে কুসুমের সঙ্গে শশীর আব্ব দেখা হয় নাই। একদিন ভোরবেলা সেই জানােলা দিয়া কুসুম তাহাকে ডাকিয়া তুলিল। শশী উঠিয়া দ্যাখে। গোলাপের সেই চারাটিকে আজও কুসুম পায়ের তলে চাপিয়া দাঁড়াইয়াছে। কঁাটা ফুটিবার ভয়ও কি আজও চারটিা মাড়িয়ে দিলে বউ ? কত কষ্টে বাঁচিযেছি সে বাবা। ইচ্ছে করেই দিয়েছি ছােটােবাবু, চারার জন্যে এত মায়া কেন? দরকার আছে, তবু ডাকতে আসতে হবে,--রাগ হয় না মানুষের ? শশী বলিল, কী দরকার বউ ? কুসুম বলিল, তালপুকুরে আসুন। একবার বলছি। শশী তালপুকুরে গেল। কনকনে শীতে তালগাছগুলি পর্যন্ত যেন অসাড় হইয়া গিয়াছে। পুকুলেব অনেকখানি উত্তরে একটা তালগাছ মাটিতে পড়িয়াছিল, শশীকে কুসুম সেইখানে লইয়া গেল। নিজে তালগাছের গুড়িটাতে জাকিয়া বসিয়া কুকুৰ্ম দিয়া বলিল, বসুন। ছোটােবাবু, অনেক কথা, সময নোবে दब्लड्ठ । শশী কিছু বলিল না। কুসুমের অনেকখানি তফাতে বসিল। কুসুম যেন একটু অবাক হইয়া গেল প্রথমে, তারপর হঠাৎ লজ্জায় মুখখানা তাহার লাল হইয়া উঠিল। বিন্দুর ব্যাপারটা শুনিবার জন্য কুসুম শশীকে এখানে ডাকিয়া আনিয়াছে। কৌতুহলের বশে এতক্ষণ তাহার খেয়ালও হয় নাই যে চুপিচুপি শশীকে এখানে ডাকিয়া আনিলে কতখানি উপযাচিক অভিসারিকার মতো কাজ করা হয়। তারপব বিন্দুর কথা জিজ্ঞাসা করিয়া কুসুম শশীকেও একটু অবাক করিয়া দিল। খেয়ালি কম নয় কুসুম। বিন্দুর কাহিনি শুনিবার জন্য এত কাণ্ড! ও কথা সে তো যেখানে খুশি বলিতে পারিত কুসুমকে! ওর কথা শুনে কী করবে বউ ? কুসুম সবিস্ময়ে বলিল, আমাকে বলবেন না ? শশীর গোপন কথা কুসুমকে না বলার মতো সৃষ্টিছাড়া ঘটনা যেন আর নাই। জীবনে আজ প্রথম শশী কুসুমের প্রকৃতির একটা আশ্চর্য দিক আবিষ্কার করিয়া অভিভূত হইয়া গেল। একটি বালিকা আছে কুসুমের মধ্যে, মতির চেয়েও যে সবল, মতির চেয়েও নির্বোধি। সংসারকে দেখিয়া শুনিয়া কুসুমের যে অংশটা বড়ো হইয়াছে, এই বালিলা কুসুমটি তার আড়ালে বাস করে। সংসারকে যখন সে ভুলিয়া যায়, জীবনের যত দায়িত্ব, যত জটিলতা আছে, কিছুই যখন তাহার নাগাল পায়