পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in VDId\9 মানিক রচনাসমগ্ৰ আমার কী ছিল যে আনব? আনলে চোর বলে জেলে দিত। শুনিয়া গোপাল রাগিয়া উঠে !—জেলে দিত! গোপাল দাসের মেয়েকে অত সহজে কেউ জেলে দিতে পারে না। তোরা সব কটা ছেলেমানুষ কঁচা বুদ্ধি তোদের। জীবনে তোরা ঢের কষ্ট পাবি, এই আমি বলে বাখলাম। গোলমাল করার ফল হইল। এই, শশীর সঙ্গে গোপালের আবার কথা বন্ধ হইয়া গেল। ছেলের সঙ্গে এ রকম মনান্তর গোপালের বাৎসল্যের জগতে মন্বন্তরের সমান,--বডো কষ্ট হয়। দিন যায়, কলহ মেটে না। গোপাল উশাখুশ করে। ছেলে যেন আকাশের দেবতা হইয়া উঠিয়াছে।--নাগাল পাওয়া কঠিন। শেষে গোপাল নিজেই একদিন মরিয়া হইয়া শশীর ঘরে যায়। শশী মোটা ডাক্তারি বইটা নামাইয়া রাখিলে সেটা সে টানিয়া লয়, পাতা উলটায়, আর ছেলের এত মোটা বই পড়িবার অমানুযি প্রতিভায় সুস্পষ্ট গর্ব বোধ করে। বলে, যতক্ষণ বাড়িতে থাকো বই পড়ে সময় কাটাও—* শরীর তোমার খারাপ হয়ে যাচ্ছে শশী। এত পড়ো কেন, পরীক্ষা তো নেই? আগে তো এ রকম পড়তে না দিনরাত ? ডাক্তারকে সর্বদা নতুন বিষয় জানতে হয়। শশী বলে। যা তুমি জানো শশী, গাঁয়ে ডাক্তারি করার পক্ষে তাই ঢের! শহরে গিয়ে যদি বসি কখনও কী বিচিত্র চক্ৰ কথোপকথনের! বিন্দুর কথা আলোচনা করিতে আসিয়া কী কথা উঠিয়া পড়িল দ্যাখো! শহর ? শহরে গিয়া ডাক্তারি করার মতলব আছে নাকি শশীর ? তাই এত পড়াশোনা ? গোপাল বিবৰ্ণ হইয়া যায়। এই গ্রামে এক কুঁড়েঘরে গোপালের জন্ম হইয়াছিল, এইখানে একদিন সে ছিল। পরের দুয়ারে অন্নের কাঙাল। আজ সে এখানে দালান দিয়াছে, এক বেলায় তাব দাওয়ায় পাত পড়ে ত্রিশখানা। চারিদিকে ছড়ানো টাকা, ছড়ানো জমি জায়গা। ঘরে বাহিরে এখানে তাহার আদর্শ বাঙালি জীবনের বিস্তার। এইখানে মরিতে হইবে তাহাকে। শশী। এখানে থাকিবে না, অনুসরণ কবিবে না তার পদাঙ্ক ? গোপাল ব্যাকুল হইয়া বলে, ও সব সর্বািনশে কথা মনেও এনো =} ရေးရဲ† [ শশী বলে, সময় সময় মনে হয় শহরে বসলে পয়সা বেশি হত--- ছাই হত! শহরে ঢের বডো বড়ো ডাক্তার আছে,-তুমি সেখানে পাত্তাও পাবে না। শশী। এখানে মন্দ কী হচ্ছে তোমার ? তাছাড়া ডাক্তারিতে পয়সা না এলেও তোমার চলবে। জমিজমা দেখবে, সুদ গুনে নেবে। ডাক্তারিতে কিছু হয় ভালো, না হয় নাই হবে। গাঁয়ে আর ডাক্তার নেই, অচিকিচ্ছেয মরে গায়ের লোক, সেটাও তো দেখতে হবে? —-বড়ো তুই স্বার্থপর শশী। গোপাল পালায়। কী বলিতে কী বলিয়া ফেলিবে, আবার হয়তো পনেরো দিন কথা বন্ধ থাকিবে ছেলের সঙ্গে। খানিক পরে গোপাল আবার শশীর ঘরে ফিরিয়া যায়। বলে চাবিটা ফেলে গেলাম নাকি রে ? শশী বলে, চাবি? ওই যে আপনার পকেটে চাবি? চাবির ভারে কুর্তার পকেটটা বুলিয়াই আছে বটে। গোপাল অপ্রতিভ হইয়া যায়। পদে পদে জব্দ করে, কী ছেলে! খানিক সে চুপ করিয়া বসিয়া থাকে। তারপর করে কী, হঠাৎ অন্তরঙ্গভাবে জিজ্ঞাসা করে, হ্যারে শশী, গাঁয়ে তোর মন টিকছে না কেন বল তো, গায়ের ছেলে তুই ? মন টিকবে না কেন ? তবে যে শহরে যাবার কথা বলছিস ? ঠিক করিনি কিছু। কথাটা মনে হয় এই মাত্র।