পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOOkS. in পুতুলনাচের ইতিকথা vQS9. শশীর শান্ত ভাব দেখিয়া নিজের উত্তেজনায় আরেক দফা অপ্রতিভ হয় গোপাল। ছেলে বড়ো হইলে কী কঠিন হইয়া দাঁড়ায় তার সঙ্গে মেশা। সে বন্ধু নয়, খাতক নয়, উপরওলা নয়, কী যে সম্পর্ক দাঁড়ায় বয়স্ক ছেলের সঙ্গে মানুষের ভগবান জানেন। একদিন নন্দর একখানা পত্র আসিল-বিন্দুর নামে। লিখিয়াছে, চিঠি পাওয়ার তিন দিনেব মধ্যে ফিরিযা গেলে এ বারের মতো ক্ষমা করিবে। শশী আগুন হইয়া বলিল, ক্ষমা ? তাকে কে ক্ষমা করে। ঠিক নেই,- কোন সাহসে ক্ষমার কথা লেখে? তুই যেন ভদ্রত করে চিঠির জবাব দিয়ে বসিস না বিন্দু। জবাব দেব না ? শশী অবাক হইয়া বলিল, জবাব দেবার ইচ্ছা আছে না কি তোর ? সব সম্পর্ক চুকিয়ে দিয়ে এলি, চিঠিব জবাব দিবি কী বকম ? বিন্দু বলিল, দেব না। দাদা।– দেব কি না জিজ্ঞেস করলাম। 616 डिट3म दरिद्ट श्श ? বিন্দু স্নান ভাবে হাসিল, মনটা বড়ো নরম হয়ে গেছে দাদা---একেবারে সাহস নেই। নিজে নিজে কিছু ঠিক কবতে পারি না।--নইলে দাখো না, আগে কি পালিযে আসতে পারতাম না। আমি ? একখানা চিঠি লিখিয়া নন্দ আর সাড়াশব্দ দিল না। শীতেৰ দিনগুলি তাড়াতাড়ি কাটিয়া যাইতে লাগিল। কুসুমের সঙ্গে শশীর কদাচিৎ দেখা হয। দেখা কবিবােব জন্য কোনো পক্ষেই যেন তাড়া নাই । তাছাড়া শশী বড়ো বাস্ত । শীতকালে গ্রামে অসুখ-বিসুখ কিছু কম থাকে বটে, সে শুধু অন্য সমযেব তুলনায়। কিছুদিন আগে বাজিতপুরের হাসপাতালের ডাক্তারেব সঙ্গে শশী আলাপ করিয়া আসিয়াছিল। কলিকাতায় পডিবার সময় ডাক্তারটিব সঙ্গে মুখচেনা ছিল শশীর। তাকে সে বলিয়া আসিয়াছিল, হাসপাতালে কোনো অসাধারণ রোগী আসিলে শশীকে তিনি যেন একটা খবর দেন,--- শুধু বই পড়িয়া শেখ চলে না। মাঝে মাঝে শশী বাজিতপুরে যায়। বড়ো রকমের অপারেশন দেখিবার সুযোগ থাকিলে নিজের বোগীদের কথা ভুলিয়া দু-একদিন সেখানে থাকিয়াও আসে। কুসুম নালিশ করে না। কী যেন হইয়াছে কুসুমেব। বোধ হয় ভুলিয়া গিয়াছে নালিশ করিতে । এমন অন্যমনস্কতা মাঝে মাঝে আসে বইকী মানুষের অভ্যস্ত কাজেও যাতে ভুল হইয়া যায়! ফায়ুনের গোড়ায় হঠাৎ একদিন কুমুদ আসিয়া হাজির। কদিন থাকতে দিবি শশী ? যদিন থাকবি, —শশী খুশি হয়, সত্যি থাকিবি ? থাকিব বলেই এলাম। ভালো লাগলে থাকব। শশী হাসিল, ভালো লাগার মতো কীই বা আছে গাঁয়ে ? ডোবা জঙ্গল আর মুখু মানুষ। ভালো না লাগলেও থাকিস কুমুদ কিছুদিন। সঙ্গীর অভাবে বড়ো চিন্তাশীল হয়ে উঠেছি। কুমুদ বলিল, সঙ্গীর অভাব? বিয়ে কর না ? শশীর হাসি দেখিয়া কুমুদ গভীর হইয়া বলিল, ঠাট্টা করছি না। শশী, সত্যি তোর বিয়ে করা দরকার। শান্ত হিসেবি সাধারণ সংসারী মানুষ তুই। সাধারণ মানুষের জীবন যেমন হয় তোরাও তেমনি হওয়া দরকার। অন্য রকম করে বাঁচতে গেলে তুই সুখী হতে পারবি না। শশী বলিল, তুই তো এ রকম ছিল না কুমুদ, এ সব কী পরামর্শ দিচ্ছিস ?—আমার ঘরে থাকবি না, একটা ভিন্ন ঘরের ব্যবস্থা করে দেব তোকে ?