পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOOkS. in পুতুলনাচের ইতিকথা 8 O、 কী উপায় হইবে বিন্দুর ? নন্দব কাছে ফিরিয়া যাইবে তাতেও লাভ নাই। যে বিকৃত অভ্যস্ত জীবনের জন্য বিন্দু মরিয়া যাইতেছে, সে জীবনে ফিরিয়া গেলেও তার সমস্যাব মীমাংসা হইবে না। গায়ের জোবে ওই অস্বাভাবিক জীবনে বিন্দুর অভ্যাস জন্মানো হইয়াছে, তাই, গৃহস্থ-কন্যার একটি সংস্কারও তার মারি যা যায নাই। ওই অশান্ত উদাম লজ্জাকর অবস্থায় দিন কটাইতে না পারিলে তাহার চলিবে না, কিন্তু সে জন্য লজায় দুঃখে অনুতাপে যন্ত্রণাও সে পাইবে অসহ্য। আকণ্ঠ মদেব পিপাসাব সঙ্গে বিন্দুর মনে মদেব প্রতি এমন মারাত্মক ঘূণা আছে যে নেশার শেষে আত্মগ্লানিতে সে আধমরা হইয়া যায়। কী হইবে বিন্দুর ? বিন্দুর লজঞ্জা ভাঙিয়াছে। কোণঠাসা ভাবু জন্তুর একটা হীন সাহস জাগি যাছে তাহার। রাত দুপুবে উঠিযা আসিযা সে দরজা ঠেলিয়া শশীর ঘুম ভাঙায়, ঘুমের ওষুধ চায়, মাথা ধরার প্রতিকার প্রার্থনা করে। শশী বলে, চুপচাপ শুয়ে থাকবি যা, ঘুম আসবে। মাথা ধরাও কমে যাবে। বিন্দু কাদিয়া বলে, না দাদা, দাও ঘুমেব ওষুধ,--এত কষ্ট সইতে পারি না। নিশুতি বাতে তাহার শীর্ণ কম্পিত শরীর আর জ্বলজ্বলে চোখের গাঢ় তৃষ্ণ শশীকে উতলা করিয়া তোলে। বুঝাইয়া সে পাবিয়া ওঠে না। বিন্দু কোনো কথা কানে তোলে না-অবুঝ শিশুর মত ঘুমের ওষুধ চাহিতে থাকে। শশী বলে, তোর এটুকু মনের জোর নেই বিন্দু ? বিন্দু বলে, মরে গেলাম আমি, মনের জোব কোথা পাব ? শশী একটা ওষুধ তৈরি করিয়া তাকে দেয়। বিন্দু সে ওষুধ মেঝেতে ঠেলিয়া ফেলে! শশীব পা জড়াইয়া ধরিয়া বলে, একটু ভালো ওষুধ দাও, একটুখানি দাও। দাও না একটু ভালো ওষুধ আমাকে ? ব্রান্ডিব বোতল শশী ব্যাকসে বন্ধ কবিয়া রাখিয়াছিল,--আলমারিতে রাখিতে সাহস পায় নাই। চাবির অভাবে কাচ ভাঙিয়া বোতলটা আয়ত্ত করা বিন্দুর পক্ষে অসম্ভব নয়। খানিকক্ষণ সে অবলুষ্ঠিতা বিন্দুব দিকে চাহিয়া থাকে। তাবপর বলে, পা ছাড়, দিচ্ছি। ওষুধের গ্লাসে ঘুমের ওষুধ খাইয়া বিন্দু ঘুমাইতে যায়। শশী চুপ করিয়া জাগিয়া বসিয়া থাকে। কত যে মশা কামড়ায তাহাকে তাহার ইয়াত্তা নাই। শশী ভাবে, কেন সে এমন অক্ষম, এত অসহায় ? শান্তি দিবে বলিয়া যাকে সে কুড়াইযা আনিয়াছিল, রাতদুপুরে তাকে তার মদ পরিবেশন করিতে হয় দিন দশেক কলিকাতায় থাকিয়া গোপাল ফিরিয়া আসিল। বিন্দুর সম্বন্ধে সে আর কোনো উচ্চবাচ্য করিল না, মনে হইল বিন্দুর সেদিনকার অপরাধ সে বুঝি ক্ষমাই কবিয়া ফেলিয়াছে। শশী তাহাকে চিনিত, গোপালের শান্ত ভাবে সেই শুধু একটু চিন্তিত হইযা বহিল। দিন তিনেক নির্বিবাদে কাটিয়া গেল। তারপর একদিন সকালে শশীকে ডাকিয়া গোপাল বলিল, নন্দর সঙ্গে দেখা হয়েছিল শশী । দেখা হইয়াছিল। হঠাৎ, পথে!----গোপাল যাচিযা দেখা করে নাই। গোপালেব মানসিক প্রকিযাটা ধরিতে না পারিয়া শশী একটু বিরক্ত হইয়া উঠিল। বিন্দু অনেক দিন এসেছে, নন্দ ওদিকে বাগােরাগি করছে। শশী,-দু-চার দিনের মধ্যে পাঠিয়ে দিতে বললে । শশী স্পষ্ট জিজ্ঞাসা করিল, পাঠিয়ে দিতে বললে, না। আপনি কথােব ভাবে অনুমান করলেন ? গোপাল জোর দিয়া বলিল, বললে, পাঠিয়ে দিতে বললে। তুমি ওকে রেখে আসতে পারবে ?