পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in 8 S Sq মানিক রচনাসমগ্ৰ বাধুটি সাজিতে পরিবে কেন? তা যদি পরিত, গাওদিয়ার উত্তেজনাহীন সহজ জীবন তাহার অসহ্য হইয়া উঠিত না। শেষ পর্যন্ত কিছু না বলাই শশী ভালো মনে করিল। নন্দর সঙ্গে এ আলোচনা করা চলে না। গতবার কুসুমদের সঙ্গে করিয়া যে হােটেলে উঠিয়াছিল এবারও শশী সেইখানে গেল। কুমুদের দেখা পাইবার আশায় মতি যে এখানে আগ্রহে ব্যাকুল হইয়া উঠিয়াছিল। সে কথা শশীব মনে আছে। মতি ? পরদিন শশী কুমুদেব খোঁজ করিল। একটা থিয়েটারের সাজ-পোশাকের দোকানে বিনোদিনী অপেরার ঠিকানা পাওয়া গেল,—সরস্বতী অপেরার সন্ধান কেহ শশীকে দিতে পারিল না। কুমুদ বলিয়াছিল, বিনোদিনী অপেরার সঙ্গে তাহাব সম্পর্ক চুকিয়াছে, ওখানে খোঁজ করিয়া লাভ হইবে কি না সন্দেহ। তবু শশী শেষবেলায় চিৎপুরে একটা বাড়ির দোতলায় অধিকারীর সঙ্গে দেখা করিল। সদ্য-যুম-ভাঙা অধিকারী বলিল, কুমুদ ? অম্লান মাস থেকে সে শালাকে আমরাও খুঁজছি মশায়। ভাওত দিয়ে তিন মাসেব মাইনে আগাম নিয়ে সরেছে। দুদিন পরে শ্ৰীপুরের রাজবাড়িতে বায়না ছিল, একেবারে ডুবিয়ে দিয়ে গেছে মশায়। অধিকারী আরক্ত চোখে কটমট করিয়া শশীর দিকে চাহিল, মশায়ের কী সর্বনাশটা করেছে শুনতে পাই? শশী একটু হাসিল, সে কথা শুনে আর কী হবে? সরস্বতী অপেরার ঠিকানাটা বলতে পারেন ? সরস্বতী অপেরা ? নামও শুনিনি। এইখানে তবে ইতি, কুমুদকে খোঁজ করার ? শশী চলিয়া আসিতেছিল, অধিকারী বলিল, কুমুদেব সঙ্গে আপনার দেখা হবে কি ? শশী বলিল, তা বলতে পারি না। হওয়া সম্ভব। অধিকারী বলল, দেখা হলে একবার, জিজ্ঞেস করবেন তো, এই কি ভদর লোকের ছেলের কাজ ?--আচ্ছা থাক, ও সব কিছু জিজ্ঞেস করে কােজ নেই, বাবুর আবাবা অপমান জ্ঞানটি টনটনে। বলবেন যে অধর মল্লিক ও দুশো চারশো টাকার জন্যে কেয়াব করে না। পালাবার তোর কী দরকাল ছিল রে বাপু, অ্যা? চাইলে ও কটা টাকা তোকে আর আমি দিতাম না, -তিন বছর তুই আমার গলাটা অধিকাৰীীর ধরিয়া আসিল, কে জানে শ্লেষ্মায় কি মমতায়! চোখ পিটপিট করিয়া বলিল, আমার ছেলেপিলে নেই, জানেন? একটা মেয়ে ছিল, বাপ বটে। আমি, তবু বলি দেখতে শুনতে মেয়ের আমার তুলনা ছিল না মশায়-বং যাকে বলে আসল গৌর তাই। কুমুদের সঙ্গে বিয়ে দেব ভেবেছিলাম, তা ছোড়ার কি আর বিয়ে-টিয়ের মতলব আছে,--- একদম পাষণ্ড। তাই না কেষ্টনগরের এক ডাকাতের হাতে মেয়ে দিতে হল, যন্ত্রণা দিয়ে মেয়েটাকে তারা মেরে ফেললে। সেই থেকে কী যে হল আমাব, সংসারে আর মন নেই,--দল একটা করেছি। কেউ ডাকলে ডুকলে পালা গেয়ে আসি—কিছু ভালো লাগে না মশায়। আছি শতেক জ্বালায় আধমরা হয়ে, কুমুদ ছোড়া কি না ডুবিয়ে গেল আমাকেই,-ছোড়ার দেহে একফেঁাটা দয়া-মায়া নেই। আমি হলে তো পারতাম না বাপু একটা শোকাতুর মানুষের ঘাড় ভেঙে পালাতে,-পারতাম না। ছোড়াটা কী!! বিস্ময়ে ও আবেগে অধিকারী শুধু মাথাই নাড়িল খানিকক্ষণ। তারপর আরও বেশি অন্তরঙ্গ হইয়া বুলিল, আপনাকে খুলেই বলি দাদা, কুমুদ গিয়ে থেকে দলটা কানা হয়ে গেছে। খাসা পার্ট বলত,-বিশ বছর আছি এ লাইনে, আমনটি আর দেখিনি। দেখা হলে বলবেন, টাকা গেছে যাক,