পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in 8 SS মানিক রচনাসমগ্র একটি বৃহৎ সুখী পরিবারের অস্তিত্ব। তারপর এক সময় সাত আট বছর বয়সের একটি সুশ্ৰী ছেলে চোখ! আর কী মায়া নন্দর চোখে! গরমে যে ঘেমে উঠেছিস ? বলিয়া নন্দ নিজে ছেলের জামা খুলিয়া দিতে শশী যেন অবাক হইয়া গেল। এ কি অসঙ্গতি নন্দ ও নন্দর আবেষ্টনীর মধ্যে? তার এই পুরুষানুক্ৰমিক নীড়ে শান্তি আছে নাকি? এই গৃহের সীমাবদ্ধ জগতে কি সুখ ও আনন্দের তরঙ্গ ওঠে। আর পড়ে ? নন্দর ছেলে চলিয়া গেলে শশী বলিল, বিন্দুকে বলেছিলে নন্দ, এখানে আসার কথা ? বলেছিলাম। সে আসবে না। আসবে না?—ইহা অপ্রত্যাশিত নয়। তবু শশী যেন নিভিয়া গেল। চাকর তামাক দিয়া গিয়াছিল, নন্দর হাতের নলটা সাপের মতো দুলিয়া উঠিল, অন্যমনস্কভাবে সে বলিতে লাগিল, এমন জেদি মানুষ জন্মে দেখিনি শশী। কথা বললে হেসে উড়িয়ে দেয়। কী যে বিপদে আমি পড়েছি। স্বীকার করি কাজটা প্ৰথমে ভালো করিনি, রাগেব মাথায় ঠিক থাকেনি দিগবিদিক,-কিন্তু সত্যি বলছি শশী, শেষের দিকে ওই আমাকে চালিয়ে নিয়ে এসেছে, থামতে দেয়নি। স্পষ্ট করে আমি অবশ্য এতদিন বলিনি কিছু, মনটা আমার কদুর বদলে গেছে আগে ভালো বুঝতে পারিনি। শশী। এবার যখন গাওদিয়া চলে গেল। হঠাৎ, সেই থেকে কেমন— নন্দ হেন লোক, সেও আজ তামাক টানার ছলে কাশিল । এখানে আনবার জন্য কত তোযামোদ করছি, কী আর বলব তোমাকে। কত বলছি যে আব কেন, চলো এবার ও বাড়িতে, সকলের সঙ্গে মিলেমিশে থাকবে,--খোকার মা আজ এক বছব শয্যাশায়ী, তার ভালোমন্দ কিছু হলে এতবড়ো সংসার তো তোমারই। না, আমি আব্ব একটা বিযে কবীতে যাব এই বয়েসে ? তা শুনে এমন করে হাসে যেন ঠাট্টা করছি। - শশী বলিল, তোমার মুখে এ সব কথা হয়তো ঠাট্টােব মতোই শোনায নন্দ। নন্দর ভাবপ্রবণতা ভাঙিয়া গেল। মুখে দেখা দিল মেঘের মতো বিরাগের ছায়া। হাতেব নল নামাইয়া, চোখের ভুরু কুঁচকাইয়া সে বলিল, তুমি যদি পরিহাস করতে এসে থাক— পরিহাস ? তোমার সঙ্গে? এ রকম কাণ্ডজ্ঞানের অভাব না হলে তুমি এমন সব কাণ্ড করতে পার! শশী আর বসিল না। তাহাকে আগাইয়া দিতে নন্দ উঠিয়া আসিল না, যে চা ও খাবার শশী স্পর্শ করে নাই সেদিকে চাহিয়া কী যেন ভাবিতে লাগিল। গ্রামে ফিরিয়া দিনগুলি এবার অগ্ৰীতিকর মানসিক চাঞ্চল্যের মধ্যে কাটিতে তাকে। গরমে শরীরও কিছু খারাপ হইয়া যাম শশীর। এ বছর একেবারে বৃষ্টি নাই। গ্রামের শ্যামল বুপ রোদে পুড়িয়া একেবারে বাদামি হইয়া উঠিয়াছে। এটা কলেরার মরশুমের সময়, শ্মশানে ধুম লাগিয়াই আছে। বেশি খাটিতে হওয়ায় শশীর মেজাজ গিয়াছে আরও বিগড়াইয়া। স্নানাহারের সময় পায় না, অথচ তেমন পয়সা নাই। কলিকাতায় এ রকম পসার হইলে এতদিনে সে বােধ হয় লাখপতি হইয়া যাইত। শুনিবামাত্র সে ছুটিয়া আসিয়াছিল। শশী মুখ তুলিয়া চাহিতে পারে নাই। পরানও চুপচাপ খানিক বসিয়া থাকিয়া উঠিয়া গিয়াছিল। সেটা সকাল। তারপর দুপুরে আসিয়াছিল কুসুম। বলিয়াছিল, কেন যে মরছে ভেবে ভেবে! চুরি করে তো আর নিয়ে যায়নি বোনকে কেউ, সে গেছে সোয়ামির সঙ্গে, অত ভাবনা কীসের দিনরাত ?--কী আনলেন আমার জন্যে ? তোমার জন্যে ? কিছু আনিনি বউ।