পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOOkS. in পুতুলনাচের ইতিকথা 8 S (፩ কী ভুলো মন মাগো ! কত কবে যে বলে দিলাম আনতে? শশী অবাক হইয়া বলিয়াছিল, কী আবার আনতে বললে তুমি ? কখন বললে ? ওমা, বলিনি বুঝি ? তা হবে হয়তো! বলব বলে বলিনি শেষ পর্যন্ত! কিন্তু না বললে কি আনতে নেই ? কী অকৃত্ৰিম ছেলেমানুষি কুসুমের, কী নির্মল হাসি! তারপব কয়েকদিন কুসুমের সঙ্গে দেখা হয় নাই, এই হাসি শশীর মনে ছিল। জোর করিয়া মনে রাখিয়াছিল। ভাপসা গুমোট, শুষ্ক ডোবা-— পুকুর ভরা গ্রামের বৃক্ষমূর্তি আর কলেরা রোগীর কদৰ্য সান্নিধ্য, এই সমস্ত পীড়নের মধ্যে কুসুমেব খাপছাড়া হাসিটুকু ভিন্ন মনে করিবার মতো আর কিছু শশী খুজিয়া পায় নাই।

  • কিছু ভালো লাগে না। শশীর,-না গ্রাম, না গ্রামের মানুষ। শেষ রাত্রে টেকির শব্দে ঘুম ভাঙিযা যায়। তখন হইতে সন্ধ্যার নীববিতা আসিবাব আগে কায়েতপাড়ার পথের ধারে বটগাছটার শাখায় জমায়েত পাখিব কলরব শুরু হওয়া পর্যন্ত, বন্য ও গৃহস্থ জীবনের যত বিচিত্র শব্দ শশীর কানে আসে, সব যেন ঢাকিয়া যায় যামিনীর হামানদিস্তার ঠকঠক শব্দে, আর গোপালেব গম্ভীর কাশির আওয়াজে। বাড়িতে মেযে পুরুষ হাসে কঁদে কলহ করে, বাহিরে যুবক ও বৃদ্ধেব দল তাস খেলে আডিডা দেয়, - চাষি মজুর গািযলা কুমোব স্যাকরা জেলে দোকানি এবা ছাড়া অলস অকৰ্মণ্যতার অতিরিক্ত ৬৬ পেশা যাদেব আছে আঙুলে গুনিয়া ফেলা যায়। শ্ৰীনাথের দোকানেব লালচে আলোষ কীর্তি নিযোগিব মাথাব তেলমাখা আবটি চকচক করিতে দেখিলে, নৈশ আকাশের তাবা ও চাদের আলোর দিকে চাহিতে শশীর লজা করে। বাগদিপাড়ায জেলফেরত কযেকজন বীবপুরুষ রাত দুপুরে পবস্ম্পবের মাথা ফাটাইয়া দেয়, শশীর হাতের বাধা ব্যান্ডেজ তাহাদেব খোলা হয় জেলেব হাসপাতালে। সুদেব বলিমা বেড়ায়, মতির বিবাহটা মিছে, ছল—শশী কর্তৃক মতিকে গাপ কিবাব কৌশল মাত্র। --ভদরপানা যার সঙ্গে বিযে হল মতির, কত টাকা সে খেয়েছে জানো ছোটোবাবুব ঠেয়ে ? হয়তো বাজিতপুরে হয়তো আর কোথাও মতিকে শশী লুকাইয়া রাখিয়াছে,-গাঁয়ে যে শশী থাকে না, রোগী দেখিবার ছলে কোথায চলিয়া যায়, সুদেব ছাড়া আব্ব কে তার অর্থ বুঝিবে! অন্ধকাব রাত্ৰে গোযালপাড়ার আট দশটা ছোকরা একদিন দুতিন গামলা গোবর-গোলা জল শশীর গাযে ঢালিয়া দেয়,--গোয়ালপাড়ার গোবিব অতি সুপ্রাপ্য। পরদিন গোপালের গোমস্ত বাকি টাকার জন্য সদরে নালিশ বুজু করিতে গিয়াছে খবর পাইয়া গোয়ালপাড়ার মোড়ল বিপিন অবশ্য আসিয়া কঁাদিয়া পড়ে,- গোটা কয়েক নিরীহ ছোকরাকে ধরিয়া আনিয়া কান মলায়, নাকে খত দেওযায়। তাতে মন শান্ত হওয়ার

কথা নয় । তারপর আছে সেনদিদি। অন্ধকারে চোরের মতো পলায়নপর অবস্থায় সামনে পড়িয়া থমকিয়া দাঁড়ানো যেন আজকাল তার বিশেষ একটা প্রিয় অভিনয়ে দাঁড়াইয়া গিয়াছে। অদূবে হ্রকার লাল আগুন হঠাৎ কোথায় অদৃশ্য হয়, খানিক পরে একেবারে অন্দরে শোনা যায় গোপালের গলা। সেনদিদি নুতন একটা আবদার আরম্ভ করিয়াছে শশীর কাছে। গ্রামের একটি বৃদ্ধের চােখের ছানি রেহাই দেয় না। বলে, ও শশী, দাও বাবা দাও, কেটে-কুটে ওষুদ দিয়ে যেমন করে হােক, দাও চোখটা আমার সারিয়ে। শশী বলে, চোেখ আপনার নষ্ট হয়ে গেছে সেনদিদি, ও আর সারবে না। সেনদিদি ব্যাকুল হইয়া বলে, তুমি কেটে-কুট দিলেই সারবে শশী, আমি তো জন্মান্ধ নই, আঁধা ? আমার জন্যে তোমার এত মায়া ছিল সে সব কোথায় গেল বাবা ?