পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in 8ンや মানিক রচনাসমগ্র সেনদিদিকে বোঝানো দায়। কিছুই সে বুঝিতে চায় না। শশীর হাত চাপিয়া ধরিয়া কঁাদিয়া ফেলে,-সবাই কানি বলে, আমার তো সয় না। শশী । ওরে ব্যাপারে, আমি কানি! নিরুপায় শশী ভাবিয়া চিন্তিয়া বলে, কাচের চোখ নেবেন সেনদিদি, নকল চোেখ? দেখতে অবশ্য পাবেন না চোখে, তবে চোখটা আপনার আসল চোখের মতো দেখাবে, লোকে সহজে টের পাবে না । কাচের চোখ দিয়ে কী করব শশী! —বলিয়া সেনদিদি রাগিয়া ওঠে, তুমি ছাইয়ের ডাক্তার শশী, কিছু জান না তুমি চিকিচ্ছের! কর্তা যা বলে তা তো মিথ্যে নয় দেখছি তাহলে! তুমি চিকিচ্ছে করে চোখটা আমার খেয়েছ, অন্য কেউ হলে চোখ কি আমার নষ্ট হত ! আজকে তুমি কাচের চোখ দিয়ে আমার ভোলাতে চাও? পাজি, হতভাগা, জোচ্চোর! মর তুই, মর! শশী চুপ কবিয়া থাকে। কত ভালোবাসিত সেনদিদি তাকে, তার উপর কত বিশ্বাস ছিল। তবু শশী আর অবাক হয় না। যে স্নেহ-মমতার ভিত্তি ভাবপ্রবণতা, তা যে বুদবুদের মতো অস্থায়ী শশী তা অনেক কাল জানে । কদিন পরে সেনদিদি বলে, হঁ্যা শশী, কাচের চোখ লাগালে টের পাবে না। লোকে ? ভূমিকা নাই, সেদিনকার গালাগালির জন্য আপশোশ নাই, সোজা স্পষ্ট প্রশ্ন! সহজে পাবে না, – টেব পেলেই বা কী এসে যায় ? চোখটার জন্যে খাবাপ দেখাচ্ছে এখন, সেট। তো দেখাবে না । কবে লাগবে চোখ ? কাচের চোখের নামে সেদিন সেনদিদি খেপিয়া উঠিয়াছিল, আজ ৩াহার আগ্রহ দ্যাখো! শশী শান্তভাবেই বলে, আমি তো পারব না সেনদিদি, আমার কাছে যন্ত্রপাতি নেই। বাজিতপুবে হবে কি না তাও জানি না। কলকাতা গিয়ে করাতে হবে, সময় লাগবে অনেক । আপুনাব ভালো চোখটির সঙ্গে বংটং মিলিয়ে চোখ হয়তো তৈরি করেও নিতে হবে। কবে নিয়ে যাবে কলকাতা ? ” এ কথা বলিতে সেনদিদির দ্বিধা হয না, সংকোচ হয় না! কত যেন দাবি তাহাব আছে। শশীকা উপর ! প্রথমে শশীর রাগ হয়, তারপব মনে মনে সে হাসে। বলে, কবে যেতে পারব তা তো ঠিক নেই সেনদিদি। রোগীী নিয়ে কী রকম ব্যস্ত হয়ে আছি তা তো দেখতে পান ? পুজোর আগে আমার যাওয়া হবে কি না সন্দেহ, আর কারও সঙ্গে যান না ? সেনদিদি র্কাদোর্কাদো হইয়া বলে, আমার কে আছে। শশী, কে আমাকে নিয়ে যাবে? আমি মরলে সবাই বাঁচে, কে আমার জন্যে এ সব হাঙ্গামা করবো? সময় করে একবারটি আমায় নিযে চল বাবা, চোখটা ঠিক কবে আনি। মুখের দাগ মিলাইয়া দিবার ওষুধও তাঁহাকে শশীর দিতে হয়। দুদিন না। যাইতেই আসিয়া নালিশ জানায়, কই দাগ তো শশী মিলিয়ে যাচ্ছে না একটুও ? কী রকম ওষুধ দিচ্ছ? শশী ক্লান্তস্বরে বলে, যাবে সেনদিদি যাবে, বসন্তের দাগ কি এত শিগগির যায় ? যতদিন যায়, গ্রাম ছাড়িয়া নূতন জগতে নূতন করিয়া জীবন আরম্ভ করিবার কল্পনা শশীর মনে জোরালো হইয়া আসে। সে বুঝিতে পারিয়াছে জোর করিয়া সরিয়া না গেলে সে কোনোদিন এই ংকীর্ণ আবেষ্টনী হইতে মুক্তি পাইবে না ; ভবিষ্যতের জন্য স্থগিত রাখিয়া চলিতে থাকিলে জীবন শেষ হইয়া আসিবে, তবু নাগাল মিলিবে না। ভবিষ্যতের। তা ছাড়া জীবনে যে বিপুল ও মনোরম সমারোহ সে আনিতে চায় তাহা সম্ভব করিতে হইলে শুধু গ্ৰাম ছাড়িয়া গেলেই তাহার