পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOOkS. in পুতুলনাচের ইতিকথা 8 SC চলিবে না, আত্মীয়বন্ধু সকলের সঙেগ মনের সম্পর্কও তাঁহাকে ভুলিতে হইবে। এদেব সীমাবদ্ধ ংকীর্ণ জীবনের সুখ দুঃখের ঢেউ যদি তাকে নদীর বুকে মোচার খোলাব মতো আন্দোলিত কবে। নূতন জীবনকে গড়িয়া তুলিবার শক্তি সে পাইবে কেন? যে আবেষ্টনীতে যে ভাবে সে বাঁচিতে চায় তার ব্যক্তিগত জীবনে তাহা বিপ্লবের সমান। এ বিপ্লব তাকে আনিতে হইবে একা, তারপর নবসৃষ্ট জগতে বাস করিতে হইবে একা-সেখানে তো এদের স্থান নাই। বিন্দুর কথা ভাবিয়া সে যদি কাতিব হইয়া থাকে, কুসুম গোপনে কঁদে কি না। আর মতি কোথায় গেল তাই ভাবে সর্বদা, সিন্ধুকে মনের মতো করিয়া গড়িয়া তুলিতে পারিল না ভাবিয়া ক্ষোভ করে, নিজের জীবনকে সে গুছাইবে কখন, কখন করিবে নিজের কাজ ? যাদের সাহচর্য অশান্তিকর, যাদের সে কাছে চায় না, জীবনে সার্থকতা আনিতে হইলে নির্মমভাবে মন হইতে তাদের সরাইয়া দিতে হইবে। যাদব বলেন, তা হবে না। দাদা ? বিবাগি হতে হলে মনে বিবাগ চাই। বাইশ বছর বয সে এ গায্যে এসে বাসা বঁধলাম, কেউ জানে না কোথা থেকে এলাম কী বৃত্তান্ত। আমাক সব ছিল শশী, বাড়িঘর আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধব, চল্লিশ বছর কারও খবব রাখি না। বাপ মা মরেছে, খবরও পাইনি, শ্ৰাদ্ধও করিনি। ভাইবোন ছিল গোটাকতক, আছে না গেছে তাও জানি না। সে জন্য দুঃখ নেই। শশী। নতুন ঘব বাঁধতে হলে পুবোনো খড়কুটাে বাদ দিতে হবে না ? কষ্ট তু" -যা প্ৰথমে ?-----শশী বলে। কদিন কষ্ট হয় ? ভুলো মন মানুষের, দুদিনে ভুলে যায। সহ্য হল না বলেই ছেডে এলাম না সকলকে ? পাগল দিদি হাসিযা বলেন, সুখে শান্তিতে আছি। এখেনে, —নয, গো ? চল্লিশ বছরেব সুখশান্তি । কোন গ্রামে কী জীবন ছিল যাদবেব কে জানে ? বাইশ বছৰ বয়সে কীসের লোভে সে গৃহ ছাড়িয়ছিল ? গৃহী সাধকের এই জীবন কি তখনও কাম্য ছিল যাদকেব, দশটা গ্রামের ভয় ও শ্রদ্ধায় সকলের উপরের একটি আসন ? তা যদি হয়, জীবনে তিনি অতুলনীয় সাফল্য লাভ করিয়াছেন বলি৩ে হইবে। সিদ্ধাপুৰুষ বলিয়া চারিদিকে নাম রুটিযাছে, পদধূলির জন্য সকলে লোলুপ। ভালো করিয়া যাদবকে শশী কোনোদিন বুঝিতে পারে না। নিম্পূহ নির্বিকার মানুষ, কাবও প্ৰণাম গ্ৰহণ করেন না, ভক্তি-গদগদ কথা শুনিয়া অবিচলিত থাকেন, কত লোকে মন্ত্রশিষ্য হইবার জন্য ব্যাকুল, আজ পর্যন্ত একটি শিষ্যও করেন নাই। তবু, শশীব মনে হয়, প্ৰণাম যেন যাদব কামনা করেন। পদধূলি দেন না, আশীর্বাদ করেন না, পাষাণ দেবতার মতো উপেক্ষা করেন ভক্তিকে,--- শশীর সন্দেহ জাগে লোকের মনে ভয় ও শ্রদ্ধা জাগানোর কৌশল এ সব। তবে তাতে কী আসিয়া যায় ? মানুষের কাছে অলৌকিক শক্তিসম্পন্ন হইয়া থাকার অভ্যাস যে মিশিয়া আছে চল্লিশ বছরের সুখ শান্তির সঙ্গে। নির্লোেভ সদাচারী শান্তিপূর্ণ নিরীহ মানুষ, মানুষেব কাছে অপার্থিব ক্ষমতার অধিকারী হইয়া থাকিবার কামনাও পার্থিব কোনো লাভের জন্য নয। ও যেন একটা শখ যাদবের, একটা খেয়াল। পাগলদিদি আম কাটিয়া দেন শশীকে, একটা খোলা পুঁথির সামনে বসিয়া স্কুল শুভ্ৰ উপবীতখানি যাদব আঙুলে জড়ান। দ্বিজত্বের এই চিহ্নটি শশী তাহার কখনও মলিন দেখিল না। শশীব দৃষ্টিপাতে যাদব হাসেন, পাইতে কখনও মাজি না। শশী। মাজেন না ? না। ও কাজের বরাত দিয়েছি। সূর্যকে । সূর্যকে?—শশী সবিস্ময়ে বলে। মানিক ১ম-২৭