পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in 8、 মানিক রচনাসমগ্র হইয়া ওঠে। শ্যাম বারবার মশারি ঝাড়ে, বিধানের গায়ে লেপ তুলিয়া দেয়, বুকুব কঁথা বদলায়, মণিকে তুলিয়া ঘরের জল বাহির হওয়ার নালিটার কাছে বসায়, আরও কত কী করে। চোখে তাহার জলও আসে । এমনি সাতটা রাত্রি কাটাইবার পর অষ্টম রাত্ৰে পাগলের মতো চেহারা লইয়া শীতে কঁাপিতে কঁাপিতে শীতল ফিরিয়া আসিল। শ্যামা জিজ্ঞাসা করিল, খেয়ে এসেছ ? শীতল বলিল, না। সেই রাত্রে শ্যামা কাঠেব উনানে ভাত চাপাইয়া দিল। রান্না শেষ হইতে রাত্রি তিনটা বাজিযা। গেল। শীতল ঘুমাইযা পড়িয়াছিল, ডাকিয়া তুলিয়া তাহাকে খাইতে বসাইফা শ্যামা ঘবে গিযা শুইযা পড়িল। কাছে বসিয়া শীতলকে খাওয়ানোর প্রবৃত্তি হইল না বলিযা শুধু নয়, ঘুমে তাহার শরীর অবশ হইয়া আসিতেছিল। পরদিন শীতল শ্যামাকে একশত টাকা ফেরত দিল । আর কই ? বাকি টাকা কী করেছ? আর তুলিনি তো ? তোলোনি ? খাতা কই আমার ? খাতাটা হাবিযে গেছে শ্যামা, কোনখানে যে ফেললাম শ্যামা কঁদিতে আরম্ভ করিয়া দিল, সব টাকা নষ্ট করে এসে আবাব তুমি মিছে কথা বলছি, আমি পাঁচশো টাকা সই কবে দিলাম। একশো টাকা তুমি কী করে তুললে, মিছে কথাগুলো একটু আটকালো না তোমার মুখে—দোতলায় ঘব তুলিব বলে আমি যে টাকা জমাচ্ছিলাম গো । শীতল আস্তে আস্তে সরিয়া গেল। এ বছর প্রথম স্কুল খুলিলেই বিধানকে শ্যামা স্কুলে ভর্তি করিয়া দিবে ভাবিয়াছিল, কিন্তু এই সব টাকার গোলমালে ফালুন মাস আসিয়া পড়িল বিধানকে স্কুলে দেওয়া হইল না। শহরতলিব। এখানে কাছাকাছি স্কুল নাই, আনন্দমোহিনী মেমোরিযেল হাইস্কুল কাশীপুরে, প্রায় একমাইল তফাতে। এতখানি পথ হাঁটিয়া বিধান প্রত্যহ স্কুল করিবে, শ্যামার তাহা পছন্দ হইতেছিল না। কলিকাতার স্কুলে ভর্তি করিলে বিধানকে ট্রামে-বানে যাইতে হইবে, শ্যামাব সে সাহস নাই। প্রেসে যাওয়ার সময় শীতল যে বিধানকে স্কুলে পৌঁছাইয়া দিবে তাহাও সম্ভব নয়, শীতল কোনোদিন প্রেসে যায় দশটায়, কোনোদিন একটাষ। শ্যামা মহাসমস্যায় পড়িযা গিয়াছিল। অথচ ছেলেকে এবার স্কুলে না দিলেই নয়, বাড়িতে ওর পড়াশোনা হইতেছে না। শীতলকে বলিয়া লাভ হয় না, কথাগুলি সে গ্রাহ্য করে না। শ্যামা শেষে একদিন পরামর্শ জিজ্ঞাসা করিতে গেল বিষ্ণুপ্রিয়ার বাড়ি। বিষ্ণুপ্রিয বলিল, এক কাজ কর না? আমাদের শঙ্কর যেখানে পড়ে তোমার ছেলেকে সেইখানে ভর্তি করে দাও, শঙ্কর তো গাডিতে যায়, তোমার ছেলেও ওর সঙ্গে যাবে। তবে ওখানে মাইনে বেশি, ভদ্রলোকের ছেলেবাই বেশির ভাগ পড়ে ওখানে, আব,-ওখানে ভর্তি করলে ছেলেকে ভালো ভালো কাপড়জামা কিনে দিতে হবে,--একদিন যে একটু ময়লা একটা জামা পরিয়ে ছেলেকে স্কুলে পাঠাবে তা পারবে না। হেডমাস্টার সায়েব কিনা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ভালোবাসে। বিষ্ণুপ্রিয়া আজও শ্যামার উপকার করিতে ভালোবাসে কিন্তু আসিলে বসিতে বলে না, কথা বলে অনুগ্রহ করার সুরে। বিষ্ণুপ্রিয়ার সেই মেয়েটির বয়স এখন প্রায় এগারো, বেণি দুলাইয়া সেও স্কুলে যায়, দেখিয়া এখন আর বুঝিবার উপায় নাই কদৰ্য পাপের ছাপ লইয়া সে জন্মিয়াছিল, শুধু মনে হয় মেয়েটা বড়ো রোগ। বিষ্ণুপ্রিয়ার আর একটি মেয়ে হইয়াছে, বছর তিনেক বয়স। বিষ্ণুপ্রিয়া এখন