পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in পুতুলনাচের ইতিকথা 8 SS শশীর মনে পড়িতেছিল, সেদিন রাত্রির কথা, কলিকাতা ফেরত যাদব শ্ৰীনাথের দোকান হইতে গেল। যাদবের ? কোথা হইতে আসিল মৃত্যু সম্বন্ধে এই প্রশান্ত ঔদাস্য? যাদবের সম্বন্ধে সে কি আগাগোড়া ভুল কবিয়াছে ? লোকে যে অলৌকিক শক্তির কথা বলে সত্যই কি তা আছে যাদবের ? খানকয়েক ডাক্তারি বইপড়া বিদ্যায় হয়তো এ সব ব্যাপারের বিচার চলে না, হয়তো তার অবিশ্বাস শুধু অজ্ঞানতার অন্ধকার! অনেক যুক্তিতর্ক অনুরোধ উপরোধেও যাদবকে শশী কিছুতেই টলাইতে পারিল না। আগামী রথের কথা বলেন নাই এ কথা তিনি কিছুতেই স্বীকার করিলেন না। শশী কোনো ক্ষতি করে নাই। কথাটা না রটিলেও রথেব দিন তিনি অবশ্যই দেহত্যাগ করিতেন। জনরব তুলিয়া দিয়া শশী যদি তার কোনো অসুবিধা করিয়া থাকে তা শুধু এই যে লোকে পদধূলির জন্য জ্বালাতন করিতেছে, আর কিছু নয়। কিছুতেই এ মতলব ছাড়বেন না পণ্ডিতমশায় ? তাই কী হত্য শশী ? বিশ বছর আগে থেকে এ যে ঠিক হয়ে আছে। কই পাগলদিদি তো কিছু জানতেন না ? ওক কি বলেছি যে জানবেন ? সময় এগিয়ে এসেছে তাই কথায় কথায় সেদিন তোমায় বললাম। নইলে একেবাবে সেই যাবাব দিন বলে বিদায় নিতাম । শশী উদভ্ৰান্ত মিনতিব সঙ্গে বলিল, মনের জোরে আপনি তোমরাব দিন পিছিয়েও দিতে পারেন? তাই বলুন না। সকলকে ? বলুন যে আপনার অনেক কাজ বাকি, তাই ভেবে-চিন্তে দুচাব বছর পিছিযে দিলেন দিনটা ? কথাটা বোধ হয় যাদবের মনে লাগে। উৎসুক দৃষ্টিতে তিনি শশীর মুখের দিকে চাহিয়া থাকেন, শশীর মনে হয একটি ফঁাদে পড়া জীব যেন হঠাৎ বেড়ার গাযে ছোটাে একটি ফাক দেখিতে পাইযাছে। তবপব আত্মসংববণ করি যা যাদব মাথা নাড়েন। লোকে হাসবে শশী, টিটকাবি দেবে। বলিয়া তাড়াতাডি যোগ দেন, সে জন্যও নয়। যোগ-সাধন করে যে সব শক্তি পাওয়া যায়, ভগবানেব নিয়মকে ফাকি দেবার জন্য তার ব্যবহার নিষেধ শশী। একে ওকে জিজ্ঞাসা কবিয়া সারা দিনেব চেষ্টায় শশী কিছু কিছু বুঝিতে পাবিল, বিনা প্রতিবাদে যাদব কেন জনরবকে মানিযা লইয়াছেন। কথাটা ছডাইয়াছিল পল্লবিত হইয়া ভক্তদের মধ্যে অনেকে জানিত, যাদব বহুদিন হইতে শশীকে শিষ্য কবিবার চেষ্টা করিতেছেন, শশীর এ সৌভাগো তাহারা হিংসা করিয়াছে। কাল কুসুম নাকি ব্যস্ত ও উত্তেজিত ভাবে বলিয়া বেড়াইয়াছিল যে স্নান করিয়া পাগলদিদিকে সে একবার প্রণাম করিতে গিয়াছিল, স্বকৰ্ণে শুনিয়া আসিয়াছে রথের দিন মরিবেন বলিয়া তাড়াতাড়ি শিষ্যত্ব গ্রহণের জন্য শশীকে যাদব পীড়াপীড়ি করিতেছেন। এ সব ছাড়া আরও অনেক কথাই বটিয়াছিল। তবু, তখনও জনরবটা অস্বীকার করিবার উপায় হয়তো থাকিত যাদবের। বাজিতপুর যাওয়ার আগে শ্ৰীনাথকে শশী যা বলিয়া গিয়াছিল তাঁহাই যাদবের সবচেয়ে বড়ো বিপদের কারণ হইয়াছে। শশীর কথা সহজে লোকে অবিশ্বাস করে না। তা ছাড়া, যাদবের বিশেষ প্রিয়পাত্র বলিয়াই লোকে তাহাকে জানে। তবু, শশী গ্রামে থাকিলে যাদব হয়তো স্বীকার করিবার আগে তাঁহাকে ডাকিয়া পাঠাইতেন, বলিতেন, এরা কী বলছে শোনো শশী। কিন্তু তাকে পাওয়া যায় নাই। গ্রামে আলোড়ন তুলিয়া দিয়া সে চলিয়া গিয়াছিল, তারপর সারা জীবনের চেষ্টায় গড়িয়া তোলা মানুষের