পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in 8 S8 মানিক রচনাসমগ্ৰ তবে কি যাদব সত্যই রথের দিন দেহত্যাগ করবেন? মৃত্যুর ওই দিনটি যে র্তাহার নির্ধারিত হইয়া আছে, যোগের শক্তিতে বহুদিন হইতেই যাদব তবে তাহা জানিয়া রাখিয়াছিলেন ? তা যদি হয় তবে সন্দেহ নাই যে সে স্নেচ্ছাচারী নাস্তিক। এখনও তো তাহার বিশ্বাস হয় না যে মানুষ নিজের ইচ্ছায় মরিতে পারে, মরিবার আগে জানিতে পারে কবে মরণ হইবে। বিশ্বাস হয় না, তবু শশীর মনের আড়ালে লুকানো গ্ৰাম্য কুসংস্কার নাড়া খাইয়াছে। এক এক সময় তাহার মনে হয, হয়তো আছে, বাঁধা যুক্তির অতিরিক্ত কিছু হয়তো আছে জগতে, যাদব। আর যাদবের মতো মানুষেবা যােব সন্ধান রাখেন। দলে দলে লোক আসিয়া যে যাদবের পায়ে লুটাইয়া পড়িতেছে, এদের সকলেরই বিশ্বাস কি মিথ্যা? সাধারণ মানুষের চেয়ে অতিরিক্ত কিছু যদি নাই থাকে যাদবের মধ্যে, এতগলি লোক কি অকারণে এমনই পাগল হইয়া উঠিয়াছে? দশ-বারো ব্রেকাশ দূরবতী গ্রাম হইতে সপরিবারে গৃহস্থ আসিয়াছে, বাসা বঁধিয়া আছে। গাছতলায়। কত নরনারীর চোখে শশী জল পড়িতে দেখিয়াছে। কায়েতপাড়ার পথে নামিয়া দাড়াইলেই মনে হয় এ যেন তীর্থ। সকল বয়সের যে সমস্ত নরনারী এদিক ওদিক বিচরণ করিতেছে, প্রাত্যহিক জীবনের হিংসা দ্বেষ স্বার্থপরতার সঞ্চিত গ্লানি তারা পিছনে ফেলিয়া আসিয়াছে, ভুলিয়া গিয়াছে পার্থিব সুখের কামনা, লাভের হিসাব। হয়তো সাময়িক, ফিরিয়া গিয়া সংকীর্ণ জীবনের কদর্যতায় আবার সকলে মুখ গুজিয়া দিবে, তবু ওদের মুখের উৎসুক একাগ্ৰতা আজ তো মুগ্ধ করিয়া দেয়। সকলে যাদবকে লইয়া ব্যাপৃত থাকায় শশীর সঙ্গে দেখা করার সুবিধা হইয়াছে কুসুমের। সে উদবিগ্ন কণ্ঠে বলে, মুখ এত শুকনো কেন? মনটা ভালো নেই বউ । ওমা, কী হল মনেব ? শশী বিরক্ত হইয়া বলে, তোমার কাছে অত কৈফিয়ত দিতে পাবব না। ব্লউ । কুসুম সগর্বে মাথা তুলিয়া বলে, কৈফিয়ত কেউ চায়নি। আপনার কাছে। মুখ শুকনো দেখে মায়া হল, তাই জানতে এলাম অসুখ-বিসুখ হয়েছে না কি। সংসারে, জানেন ছোটােবাবু, যেচে মায্য করতে গেলে পদে পদে অপমান হতে হয়। আমি এদিকে চলে যাচ্ছি বাপের বাডি, কৈফিয়ত চাইব ! শশী নরম হইয়া বলে, গায়ে এত বড়ো একটা ব্যাপার ঘটছে, দেখা হলে ও বিষয়ে তুমি কিছুই বল না,--শুধু আমার আর তোমার নিজের কথা। বলবার কি আর কথা নেই জগতে ? নেই ? কত আজেবাজে কথা আছে সীমা নেই তার। বলিয়া কুসুম হাসে। শশী বলে, হালকা ভাবটা একটু কমাও বউ। বাপের বাড়ি যাবে তা তো শুনছি ঢের দিন থেকে, যাওয়া তো হয় না। কুসুম সপ্রতিভ ভাবেই বলে, যেতে যে পারি না। তারপর বলে, যে সব মজার কাণ্ড গাঁয়ে। সত্তর বছরের একটা বুড়ো মরবে, তাই নিয়ে দশটা গায়ের লোক হইহই করছে। বেঁচে থাকলে আরও কত দেখবা! কুসুমের এ ধরনের কথাবার্তা শশীর যে খুব ভালো লাগিল তা নয়, তবু এক এক ভাবিতে ভাবিতে মনের মধ্যে যে বদ্ধ আবহাওয়ার সৃষ্টি হইয়াছিল, খানিকটা খোলা বায়ু আসিয়া তা যেন কিছু হালকা করিয়া দিল। তাই বটে। এত সে বিচলিত হইয়াছে কেন একটা গ্ৰাম্য ব্যাপারে? মরেন তো মরিলেন যাদব, তার কী আসিয়া যায়? দুদিন পরে এ গাঁয়ে বাস করিবার স্মৃতিটুকু মনে আনিবার সময়ও কি থাকিবে তাহার ? বিকালে সেদিন শ্ৰীনাথ আসিয়া শশীকে ডাকিয়া গেল। পরদিন আসিলেন পাগলদিদি স্বয়ং।। না शिां *ीद्भ ऐच्छं शालि । |