পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in পুতুলনাচের ইতিকথা 8 SRS) •NR নীেকার দোলনে ঢুলিয়া ঢুলিয়া কুসুমের বাবার ঘুম আসে। কুসুম ছাঁই-এর মধ্যে পিছনে হালের দিকে তাহার শোবার ব্যবস্থা করিয়া দিল। সে ঘুমাইয়া পড়িলে শশীকে ডাকিয়া বলিল, হঠাৎ আমাকে বাপের বাড়ি পৌঁছে দেবার শখ হল কেন শুনি ? বলিয়া মৃদু একটু হাসিল কুসুম। শশী বলিল, তুমি ভাবছ কােজ নেই, না? তোমার জন্যে যাচ্ছি শুধু ? উকিলের সঙ্গে দেখা করব । মামলা আছে বুঝি ? মামলা তো দুটাে একটা লেগেই আছে, সে জন্য নয়। কী কারণে যেতে লিখেছেন, জরুরি। তবে আজি না গেলেও চলত। কুসুম একটু হাসিল। আড়চোখে একবার বাপের দিকে চাহিয়া কুসুম বলিল, আমার জন্য এলেন আজ, না ? শশী বলিল, হঁ্যা। গভীর সুখে কুসুমের মুখখানা উজ্জ্বল হইয়া উঠিল। তবু নিশ্বাস ফেলিয়া দুঃখের সঙেগই বলিল, ভেবেছিলাম বাপেব বাডি গিয়ে কমাস থাকিব, তা আর হবে না বুঝতে পারছি। আশ্চর্য চরিত্র কুসুমের। এতক্ষণে শশী একটু লজ্জা বোধ করিল। সেদিন রহস্য সৃষ্টি করে নাই কুসুম। ওই রকম বঁকা তার মনের কথা বলিবাব ধরন। সে কিছু বুঝিবে না, কিছু মানিবে না। কেন ভাবিয়া মরে শশী ৫ সেদিন কুসুমের ব্যবহারের মানে ছিল শুধু এই। আরেক বিষয়ে শশী বিস্মিত হয। সেদিন সে গ্রাম ছাড়িযা চলিয়া যাইবার কথা বলিয়াছিল। সে সম্বন্ধে কুসুমের কি বলিবার কিছু নাই ? কথাটা সে বিশ্বাস করে নাই নাকি ? বাজিতপুরের ঘাটে নৌকা বঁধিয়া শশী নামিয়া গেল। গোবর্ধনকে বলিয়া দিল, কুসুমকে বাপেব বাড়ি পৌঁছাইয়া দিয়া বিকালে যেন নীেক আনিয়া ঘাটে রাখে। আসিতে হয়, এবারও দেখা করিবার জন্য দিন তিনেক আগে তার একখানা চিঠি পাইযা শশীর কোনো অসাধারণ প্ৰত্যাশা জাগে নাই। ব্যাপার শুনিয়া খানিকক্ষণ তাই সে বিস্ময়ে হতবাক হইয়া রহিল। দশটা গ্রামকে বিচলিত ও উত্তেজিত করিয়া যাদব মরিয়াছেন, কিন্তু আরও যে চমক তিনি সঞ্চিত করিয়া রাখিয়া গিয়াছেন। সকলের জন্য, শশী তো তাহা ভাবিতেও পারে নাই। গ্রামে একটি হাসপাতাল করার জন্য যা কিছু ছিল যাদবের সব তিনি দান কবিয়া গিয়াছেন। ব্যবস্থাব ভার শশীর, দায়িত্ব শশীর। কী ছিল যাদবের ? হাসপাতাল করার উপযুক্ত দান হিসেবে অত্যধিক কিছু নয়, যাদবের দান হিসেবে বিস্ময়কর, প্রচুর। হাজার পনেরো টাকার কোম্পানির কাগজ, বারো তেরো হাজার নগদ, আর যেখানে যাদব বাস করিতেন সেই বাড়ি ও জমি। এত টাকা ছিল যাদবের ? পুরানো ভাঙা বাড়িটার ...স্যাতসেঁতে ঘরে যাদব ও পাগলদিদির সাদাসিদে ঘরকন্নার ছবি শশীর মনে পড়িতে লাগিল, কখানা বাসন, মাটির হাঁড়ি কলসি, কাঠের জীর্ণ সিন্দুক, গৃহসজ্জার অভাবজনিত দীনতা। তাও অপূর্ব ছিল সত্য, সে ঘরের পরিচ্ছন্নতা, ধূপগন্ধী শান্ত আবহাওয়া চিরদিন শশীকে অভিভূত করিয়াছে, কিছুটাকার ছাপ তো কোথাও ছিল না সেই গৃহী সন্ন্যাসীর গৃহে!