পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in 8v).S. মানিক রচনাসমগ্ৰ সব ধনী মানী বয়স্ক লোক থাকিতে এত বড়ো একটা ব্যাপারের সম্পূর্ণ ভার শশীকে দিয়া গেলেন, কী বিস্ময়কর কাণ্ড যাদবের!!! কী অপমান সকলের! অপমান বোধ করিয়াও তাহারা কিন্তু থাকিতে পারিলেন না দূরে, শশীকে ছকিয়া ধরিলেন। তিনজনের বদলে অযাচিতভাবে পরামর্শদাতা ত্ৰিশজন সভেম্বর কমিটিই যেন গড়িয়া উঠিল। শশীকে ঘিরিয়া। আর গোপাল অবিরত ছেলের কানে মন্ত্র জপিতে লাগিল, পারবি না। শশী তুই, পারবি না,-আমায় ছেড়ে দে সব। যাদবের ভাঙা ঘরের চাবি গ্রামের জমিদার হিসাবে শীতলবাবুর কাছে জমা ছিল। একদিন দেখা গেল তালা ভাঙিয়া ঘরের জিনিসপত্র কে তছনছ করিয়াছে, এখানে ওখানে শাবল দিয়া করিযাছে গভীর গর্ত। ঘটিবাটি কয়েকটি যায় নাই দেখিয়া বোঝা গেল। ঘরে ছ্যাচড়া চোর আসে নাই, আসিয়াছিল। কল্পনা-প্রবণ অনুসন্ধিৎসু — গুপ্তধনের সন্ধানে। শ্ৰীনাথ চেচাইয়া বলিতে লাগিল, মরবে ব্যাটারা, মরবো।--যে হাত দিয়ে শাবল ধরেছিল খসে খসে পড়বে ব্যাটাদেব। আইন-ঘটিত হাঙ্গামাগুলি সহজে মিটিল না। সাধারণের উপকারার্থে দান করা অর্থের উপব একজন যুবকের অধিকার, উইলে স্পষ্ট লেখা থাকিলেও, আইনের চোখে কেমন কটু ঠেকিতে লাগিল। কোন পক্ষ হইতে ঠিক বোঝা গেল না, সম্ভবত আকাশ যুঁড়িয়া গোপাল দাসের ছেলেটার পকেটে এতগুলি টাকা আসিবার সম্ভাবনায় গায়ে যাদের ধরিয়া গিয়াছিল জ্বালা, তাদের পক্ষ হইতেই তদবিরের ফলে, উইলের কয়েকটা গলদ বাহিব করিয়া উইল বাতিল করার চেষ্টাও হইল। অনুসন্ধান হইল। অনেক, শশী বাজিতপুরে ছুটািছুটি করিলা অনেকবাব, উইলের সাক্ষীদের অনেক জেরা করা হইল, তারপর বেওয়ারিশ যাদবের অর্থ ও সম্পত্তি দিয়া গাওদিয়া হাসপাতাল স্থাপন করিবার অধিকার শশী পাইল। কমিটি গঠন করিবার সময় শশী পড়িল আরেক বিপদে। কাকে রাখিয়া কাকে আহ্বান করিবে ? উইলে নির্দেশ আছে, মানগণ্য তিনজন বয়স্ক ভদ্রলোক । মান্যগণ্য বয়স্ক ভদ্রলোকের অভাব নাই, কিন্তু শশী যাদেব মানে, কমিটিতে আসিলে শশীকে তারা মানিবেন না, শশীব যাবা অনুগত তারা আসিলে অননুগতেরা অগ্নিশৰ্মা হইয়া উঠিবে। শীতলবাবুকে অনুরোধ করিতে তিনি অস্বীকার করিলেন, রাগও করিলেন। শশী কর্তালি করিবে, গ্রামের জমিদার তিনি, তিনি শুধু দিবেন পরামর্শ? স্পর্ধা বটে। শশীর । শশী সবিনয়ে বলিল, আমি কেন, আপনিই সব বিষয়ে হেড থাকবেন। উইলে তো কই তা লেখেনি বাপু ? অবস্থা বিবেচনা করিয়া শশী তখন বলিল, তবে থাক, ব্যস্ত মানুষ আপনি, এ সব হাঙ্গামায আপনার থেকে কােজ নেই। হাসপাতাল হলে যে স্থায়ী কমিটি হবে আপনাকে তো তার প্রেসিডেন্ট হতেই হবে। মাঝে মাঝে আমি আসব, উপদেশ নিয়ে যােব আপনার। আপনি সহায় না থাকলে এত বড়ো ব্যাপার আমি কেন সামলাতে পারব বলুন ? প্রেসিডেন্ট হতে হবে নাকি আমায় ? আপনি থাকতে আর কে প্রেসিডেন্ট হবে?--শশী যেন আশ্চর্য হইয়া গেল। তখন প্রীত হইয়া শীতল শশীকে খাতির করিয়া বসাইলেন, হুকুম দিলেন। জলখাবার আনিবার। বলিলেন, আর কে কে থাকবে কমিটিতে ? শশী বলিল, কাকে নিলে সুবিধা হয় আপনিই যদি তা বলে দিতেন--- শীতল বলিলেন, আমাদের মুনসেফকে নাও না, উখারার সত্যহরিবাবুকে ? আইনজ্ঞ মানুষ। শশী বলিল, বলব ওঁকে। তাহলে দুজন হল, আপনি আর সত্যহরিবাবু। আর একজন চাই। সাতগাঁর হেডমাস্টার কেশববাবুকে নিলে কেমন হয় ?