পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in SVS মানিক রচনাসমগ্ৰ গোপালের মুখ দেখিয়া শশী একটু ভীতভাবে বলিল, আপনাকে আমি কখনও সমালোচনা করি क्रा दाद ! অবিশ্বাস তো করিসি! শশী মৃদুস্বরে বলিল, কিছু বোঝেন না, যা তা ভেবে রাগ করেন। এতে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের কথা তো কিছু নেই। আপনি যা বলছিলেন তা যদি করতাম, লোকে বলত না বাপ-ব্যাটায় মিলে হাসপাতালের টাকা লুটছে? কথাটা সাময়িকভাবে গোপালের মনে লাগে। তবে গোপালের অভিযোগ তো শুধু যাদবের টাকাগুলি নাড়াচাড়া করার অধিকার হইতে বঞ্চিত হওয়ার জন্য নয়। যত দিন যাইতেছে সে টেব পাইতেছে, শশীর মনে, শশীর জীবনে তার স্থান আসিতেছে সংকুচিত হইয়া। শশী যে তাকে শুধু শ্রদ্ধা করে না তা নয়, সে জন্য আপশোশও যেন শশীর নাই। এইটুকুই গোপালকে পাগল করিয়া দিতে চায়। গোপাল কত কী ভাবে। রাত্রে তার ঘুম হয় না। মাঝরাত্রে ঘুম ভাঙিয়া শশী তাহার তামাক টানার শব্দ শুনিতে পায়। সামান্য একটু সুবিধার জন্য মানুষের জীবন নষ্ট করিয়া যে মানুষটার এক মুহুর্তের জন্য কখনও অনুতাপ হয় নাই, গভীর ও অপরূপ এক হীনতা থাকার জন্য যার কঠোর কর্মঠ প্রকৃতি শুধু নিষ্ঠুরতায় গড়া, শশী কি তাকে ভাবপ্রবণ করিয়া তুলিল? সেনদিদির কঁধে হাত রাখিয়া সে যখন শ্ৰান্ত গলায় বলে, জানিস সরোজ, ছেলেমেয়ের কাছ থেকে একদিনের তরে সুখ পেলাম না,-তখন কাছে উপস্থিত থাকিলে শশী বোধ হয় চমকিয়া যাইত। সেনদিদির কাধে হাত রাখিবার জন্য নয়, গোপালের মুখ দেখিয়া, গলার স্বর শুনিয়া। হয়তো সে বুঝিতেও পারিত কত দুঃখে কানা সেনদিদির কাছে গোপাল আজ সাস্তুনা খুজিয়া মরে। একদিন গোপাল একেবারে পাঁচশত টাকা শশীর হাতে তুলিয়া দিল। কীসের টাকা ? হাসপাতালের ফন্ডে আমি দিলাম শশী । শশী বলিল, মোটে পাঁচশো ? লোকে কী বলবে বাবা ? কী আশা করিয়াছিল গোপাল, কী বলিল শশী! নোটগুলি গোপাল ছিনাইয়া লইল, আগুন হইয়া বলিল, কত দেব। তবে ? লাখ টাকা ? দেব না। যা এক পয়সা আমি! শশীকে ঘিরিয়া যখন এমনি গোলমাল চলিতেছে একদিন আসিল কুসুম, কযেক দিন পরে আসিল মতির খবর। 不平 মতির কথা গোড়া হইতে বলি। রাজপুত্র প্রবীরকে স্বামী হিসাবে পাইয়া মতির সুখের সীমা নাই। গ্রাম ছাড়িতে চােখে জল আসে, অজানা ভবিষ্যতের কথা ভাবিয়া একটা রহস্যময় ভীতি বুক চাপিয়া ধরে, তবু আহ্বাদে মেয়েটা মনে মনে যেন গলিয়া গেল। এইটুকু বয়সে এমন উপভোগ্য মন-কেমন-করা! স্টিমার ছাড়িলে জেটিতে দাঁড়ানো পরানকে ঘোমটার ফঁাকে দেখিতে দেখিতে ভিতরটা যখন তোলপাড় করিতে লাগিল আর চোখের জলে সব ঝাপসা হইয়া গেল, রাজপুত্র প্রবীর পাশে বসিয়া আছে অনুভব করার মধ্যেই তখন কী উত্তেজনা, কী আশ্বাস! কলিকাতায় পৌঁছিয়া আগে সে যে একবার কুমুদের খোঁজেই কলিকাতা আসিয়াছিল, মতি সে বিষয়ে কিছুই বলিল না। প্রথম এই শহরটা দেখাইয়া কুমুদ তাহাকে থ বানাইয়া দিতে চায় বুঝিয়া