পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang laboOokS. in পুতুলনাচের ইতিকথা 8\e)(ሱ. মতি যথোচিত থ-ই বনিয়া গেল। একটু বোকার মতো কথা বলিতে লাগিল মতি, এটা কী ওটা কী জিজ্ঞাসা করিয়া কুমুদকে অস্থির ও আনন্দিত করিয়া তুলিল-কঁী অনিন্দ্য মতির বানানো উচ্ছাস! কোথায় উঠব। আমরা ? হােটেলে উঠিব। কদিন হােটেলে থেকে, তোমায় সব দেখিয়ে শুনিয়ে বাসা-টাসা যদি করি তো কবব, নয় তো বেড়াতে চলে যাব কোথাও । কেমন ? তাই হোক। যা খুশি ব্যবস্থা করুক কুমুদ, মতির কোনো আপত্তি নাই। নতুন বউ সে, স্বামী এখন যেমন রাখিবে তেমনি থাকিবে, তারপর সংসার পাতিয়া দিলে তখন শুরু হইবে গৃহিণীপনা। এখন তাহার কীসেব দাযিত্ব, কীসের ভাবনা ? নিজের সৌভাগ্যে মতি পুলকিত হইয়া থাকে। গায়ের কোন মেয়ে তাৰ মতো এমন ভাগ্যবতী ? মনের মতো ববের সঙ্গে তো বিবাহ হয়ই না, শ্বশুরবাড়ি গিয প্রথমে ঘোমটা দিয়া ঘরের কোণে বসিয়া থাকে, তারপর বাসন মাজে ঘর লেপে রান্না করে আর গালাগালি খায়! কত ভয়, কত ভাবনা, কত তাবা পরাধীন। আর তার নিজের পছন্দ করা বােব, বিবাহের পবেই এমন স্মৃর্তি করিয়া বেড়ানো, সব বিষয়ে স্বাধীনতা। হােটেলের ঘরখানা মতির পছন্দই হইল। বাস্তার দিকে দুটি জানােলা আছে, কুঁকিলে দুদিকে অনেক দূর অবধি দেখা যায়। ঠিক সামনে একটা ছোটাে গলি সোজা গিয়া পড়িয়াছে ওদিকের বড়ো রাস্তায়। সেখানে ট্রাম চলে। কুমুদের সাহায্যে বিছানা পাতিয়া মতি ঘব গুছাইয়া ফেলিল। হােটেলের চাকরকে দিয়া দুটি একটি দরকারি সামনে কুমুদের প্রহরী হইয়া দাঁড়াইয়া থাকা কী মজার ব্যাপার! হােটেলের বুড়ো উড়িয়া বামুন,- বেঁটে লিকলিকে বাদামি রঙের মানুষ সে, কিন্তু কথায় কাজে চটপটে,-ঘরে ভাত দিয়া গেল। নিজের থালায় ভাতের পরিমাণ দেখিয়া মতি বলিল, মাগো, কত ভাত দিয়েছে দ্যাখো আমাকে! আমার মতো মেসে হোটেলে এমনি দেয়। নষ্ট হবে তো ? ডেকে বল না তুলে নিয়ে যাক ? হােক না নষ্ট, আমাদের কী? তবু মতির মন খুঁতখুঁত করিতে লাগিল। আহা, ভাত যে লক্ষ্মী, ভাত কী নষ্ট করতে আছে! খাইতে খাইতে আবাব সে আপশোশ করিল। কুমুদ বলিল, তুমি তো আচ্ছা মেয়ে দেখছি! একটা তুচ্ছ কথা নিযে এত ভাবিছ ? ভাত নষ্ট হবে তাও হােটেলের ভাত, এ আবার মানুষের মনে আসে? খাওয়া-দাওযার পর সিগারেট টানিতে টানিতে কুমুদ ঘুমাইয়া পড়িল। জ্বলন্ত সিগারেটটা তার প্রসারিত হাত হইতে মেঝেতে খসিয়া পড়িলে মতি সেটা কুড়াইয়া নিভাইযা তুলিযা রাখিল। অর্ধেকও পোড়ে নাই সিগারেটটা, ঘুম হইতে উঠিয়া কুমুদ আবার খাইতে পাবিবে। তারপর গাড়ির কষ্টে মতিরও ঘুম আসিতে লাগিল। চৌকিতে কুমুদ এমনভাবে গা এলাইযা শুইয়াছে যে পাশে জায়গা খুব কম। নতুন বউ সে, ববের পাশে শোওয়াই তো নিয়ম, না? নিয়ম বজায় রাখিতে না পারিয়া মতি দুঃখিত মনে মেঝেতে একটা কম্বল বিছাইয়া শুইয়া পড়িল। তিনটার সময় ঘুম ভাঙিল কুমুদের। মুখ হাত ধুইয়া জামাকাপড় পরিয়া সে মতিকে ডাকিয়া তুলিল। বলিল, দরজা দিয়ে বােসো, আমি একটু বাইরে যাচ্ছি। কটা জিনিস কিনেই ফিরে আসব। কুমুদ বাহির হইয়া গেলে মতির দরজায় খিল বন্ধ করিল। মিনিট পনেরো পরেই দরজায় ঘা পড়িতে খিল খুলিয়া সে বলিল, এর মধ্যে ফিরে এলে ? কিন্তু এ তাে কুমুদ নয়! কুড়ি-বাইশ বছরের চশমাপরা একটা ছেলে। মতিকে দেখিয়া সেও যেন অবাক হইয়া গেল। ঘরের ভিতর একবার চােখ বুলাইয়া আনিয়া বলিল, এ ঘরে আমার একজন বন্ধু থাকত। ঘর ছেড়ে চলে গেছে জানতাম না।