পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in 8\5)\ዩኃ মানিক রচনাসমগ্র মতি কিছু বলিতে পারিল না। পরশু দিন দেখে গেলাম আছে, এর মধ্যে সে গেল কোথায়? কেমন যেন চোখ ছেলেটাব, কেমন তাকানোর ভঙ্গি। মতির ইচ্ছা হইতেছিল দরজাটা দড়াম করিয়া বন্ধ করিয়া দেয়। কিন্তু ওর বন্ধু যদি এ ঘর হইতে হঠাৎ উধাও হইয়া গিয়া থাকে, দু-চারটে কথা জিজ্ঞাসা করিবাব অধিকার হয়তো ওর আছে? মতির ভয় করিতেছিল, জড়ানো গলায় সে বলিল, আমরা মোটে আজ সকালে এসেছি। এমনি সময়ে হঠাৎ ম্যানেজার আসিয়া হাজির। বোধ হয়। পাশেই কোনো মেম্বারের ঘরে ছিল। কাকে খোজেন ? এদিকে আসুন মশায, সরে আসুন। মতি দরজাটা এনারি বন্ধ করিল। শুনিল ছেলেটা বলিতেছে, শ্যামলবাবুকে খুঁজছি। শ্যামলবাবুকে ? শ্যামলবাবু তেতিলায় গেছেন একুশ নম্বরে। . তার ঘরেই তো দেখলাম মশায় আপনাকে এতক্ষণ ? ব্যাপারখানা কী বলুন দেখি ? সারা দুপুরটা শ্যামলবাবুর সঙ্গে আডডা দিয়ে এখানে তাকে খুঁজতে এসেছেন ? মতি বুঝিতে পারিল, আশেপাশের ঘর হইতে দু-চারজন লোক বাহিল হইয়া আসিয়াছে। একটা গোলমাল আরম্ভ হইয়া গেল। বুদ্ধঘরের ভিতরে মতি লজায় ভয়ে কাঠ হইয়া রহিল। কোন দেশি ব্যাপার এ সব ? কী মতলব ছিল ছেলেটার ? এ কেমন জায়গায় কুমুদ তাহাকে একা ফেলিযা রাখিয়া গেল ? একটু পরে গোলমালটা দূরে সরিয়া গিয়া অস্পষ্ট হইয়া আসিল, তারপব একেবারে থামিয়া গেল। ঘণ্টাখানেক পরে দরজায় আবার ঘা পড়িতে মতির বুকটা ধড়াসা করিয়া উঠিল। জিজ্ঞাসা করিল, কে ? হোটেলেব চাকর জানিতে আসিয়াছে কিছু দরকার আছে কি না। মতি বলিল, না, কোনো দরকার নেই! •ჯ. কুমুদ ফিরিয়া আসিল সন্ধ্যার পর। কুমুদকে ব্যাপারটা বলিবার সময় মতির ভয় করিতে লাগিল যে শুনিয়া হযতো সে রাগিয়া অনর্থ করিবে, খুন করিয়াই ফেলিতে চাহিবে সেই দুৰ্বত্ত ছেলেটাকে। কুমুদ কিন্তু শুধু একটু হাসিল। বলিল, ছেলেটা তো চালাক কম নয়! চালাক ? পাজি নয়, শয়তান নয়, লক্ষ্মীছাড়া নয়, শুধু চালাক ? এমন ভয় করছিল। আমার! মতি বলিল। কুমুদ বলিল, কীসের ভয় ? খেযে তো ফেলত না ? এত লোক রয়েছে চারিদিকে, ছল করে তোমার সঙ্গে দুটাে কথা বলে যাওয়ার বেশি সাহস কি আর হত ছোড়ার। হয়তো কার সঙ্গে বাজি-টাজি বেখেছিল, তোমার সঙ্গে কথা বলবে। অল্প বয়সের পাগলামি ও সব। হয়তো তাই, তবু কুমুদ কেন তাহা বরদাস্ত করিবে? মনে মনে মতি বড়ো ক্ষুন্ন হইয়া গেল। শশী হইলে হয়তো এ রকম হাসিয়া উড়াইয়া দিত না ব্যাপারটা, ছড়ি হাতে ছোড়াটাকে ঘা কতক বসাইয়া দিয়া আসিত। মতির হঠাৎ মনে হয় কুমুদের এ যেন ভীরুতা। ব্যাপারটা সে যে হালকা করিয়া চাপা দিতে চায় তার কারণ আর কিছুই নয়, যদি গুরুতর হইয়া ওঠে, যদি তার কোনো অসুবিধা বা ক্ষতি হয় কুমুদের এই আশঙ্কা আছে। ছােটাে ছোটাে অপমােন কি কুমুদ তবে হাঙ্গামার ভয়ে গ্ৰাহ্য করে না। এ বিষয়ে সে কী গাওদিয়াব কীর্তি নিয়োগীর মতো ? মতির জন্য কুমুদ একজোড়া জুতা কিনিয়া আনিয়াছিল। বিবাহের পর মতিকে এই তার প্রথম উপহার।