পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in পুতুলনাচের ইতিকথা 8VS কুমুদ বলিল, হালকা লোক, ফাঁপা। পয়সার জন্যে আর্টকে জবাই করেছে ছবি আঁকার অদ্ভুত প্রতিভা ছিল, নাম হওয়া পর্যন্ত লড়াই করতে পারল না। মাসিকের পট আর বিজ্ঞাপনের ছবি এঁকে দিন কাটায় ? সে জন্য আপশোশও নেই, এমন অপদার্থ। বনবিহারীর অপরাধটা মতি বুঝিতে পারে না। বুঝিতে ইচ্ছাও হয় না। কথার অন্তরালে স্নেহ ছিল বনবিহারীর, সমবেদনা ছিল। গ্রাম ছাড়িয়া আত্মীয়-পরিজনের সঙ্গ ছাড়িয়া ছেলেমানুষ সে যে একটা অপবিচিত অদ্ভুত জগতে আসিয়া পড়িয়াছে, বনবিহারী ছাড়া কুমুদের আর কোনো বন্ধু বোধ হয় তাহা খেয়ালও কবে নাই। দুদিন পবে সকালবেলা বনবিহারী আবার আসিল। না-যাওয়ার জন্য অনেক অনুযোগ দিয়া বলিল, চল কুমুদ, এখুনি যাই আজ, ওখানেই খাওয়া-দাওয়া করবি। কুমুদ হাই তুলিয়া বলিল, যাব যাব, এত ব্যস্ত কেন? বনবিহারীর মুখখানা এবার একটু গভীর দেখাইল। সুর ভারী করিয়া সে বলিল, তোর ব্যাপারটা কী বল তো কুমুদ ? আমাদের ওদিকে যাস না আজ ছমাস, যেতে বলায় আজ হাই উঠছে? সাত দিন তোর দেখা না পেলে আগে আমাদের ভাবনা হত। হঠাৎ যে ত্যাগ করলি আমাদের ? ত্যাগ ? ত্যাগের স্বভাব আমাব নেই। এমনি হাই উঠছে।--শ্ৰান্তিতে। সাবাদিন শুয়ে থেকে শ্রান্তি! আব যেতে বলব না। কুমুদ। কী, দবকাব ? কাল পরশুব মধ্যে একদিন তুস কবে হাজির হব দেখিস । বনবিহারী এবার হাসিল, হযতো তার আগেই জয়া তুস করে এসে হাজিব হবে এখানে। কী * শাস্তিটা তখন যে তোকে দেবে ভেবে পাচ্ছি না। খুকিকে ছিনিয়ে নিয়ে গিয়ে এক মাস হয়তো লুকিয়ে রেখে দেবে। বনবিহারীর মুখে খুকি। শব্দটা মতির ভালোই লাগে। তবু সে আবদার করিয়া বলিল, আবার খুকি কেন ? বনবিহারী চলিযা গেলে কুমুদকে বলিল, চলো না। যাই একদিন ? আমন করে বলছেন! কুমুদ মৃদু হাসিযা বলিল, উনি কি আর বলছেন মতি, ওর মুখ দিয়ে আরেক জন বলাচ্ছেন! তার নাম জয়া, উনিব তিনি পত্নী। -যাব, ইতিমধ্যে একদিন যাব। এদিকে ক্ৰমে ক্ৰমে সন্ধাবেলা কুমুদের সমাগত বন্ধুর সংখ্যা বাড়িতে থাকে, রীতিমত আডা বসে। চৌকিতে কুলায় না। চৌকি কাত করিয়া রাখিয়া মেঝেতে বিছানা ও চাদর বিছাইয়া সকলে বসে। কেহ অনর্গল কথা বলে, কেহ থাকিয়া থাকিয়া প্রবল শব্দ করিয়া হাসে, কেহ গুনগুন করিয়া ভঁাজে গানের সূর। দেয়ালে ঠেস দিয়া শুরু হইতে শেষ পর্যন্ত কেহ শুধু ঝিমায়। বিড়ি সিগারেট আর চুরুটের ধোঁয়ায় ঘরের বাতাস ভারী হইয়া ওঠে। তাস খেলা হয। টাকা পয়সার আদান-প্ৰদান দেখিয়া মতি বুঝিতে পারে জুয়া খেলা হইতেছে। মতির কান্না আসে। সহজভাবে সে নিশ্বাস ফেলিতে পারে না। লজা করিতে কুমুদ তাহাকে বারণ করিয়াছে, কুমুদের বন্ধুরা একজন দুজন করিয়া আসিলে মতির বেশি লজ্জা করেও না। এ তো তা নয়। যে ঘর ছাড়িয়া এক মিনিটের জন্য তাহার বাহিরে যাওয়ার উপায় নাই, একপাল বন্ধু জুটাইয়া সে ঘরে কুমুদ যদি সন্ধ্যা হইতে রাত এগারোটা পর্যন্ত আড্ডা দেয়, হাজার লজ্জা না করিলেও যে চলে না । মতি চা জোগায়। বিকালে স্টেভি ধারায়, রাত বারোটার আগে সে স্টেভে ঠান্ড হইবার সময় পায় না। বোধ হয় কুমুদের বলা আছে, সন্ধ্যার বন্ধুরা মতিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে। চা, পান প্রভৃতির প্রয়ােজন পর্যন্ত কুমুদকেই জানায়। চা করিয়া পান সাজিয়াই মতির কর্তব্য শেষ, বিতরণ করিতে হয় না। এদিকে জানালায় গিয়া সে বসিয়া থাকে সমস্তক্ষণ। জানালার পাটগুলি ঘরের