পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in 88 SR মানিক রচনাসমগ্ৰ কুমুদের কাছে এমন কঠিন কথা মতি আর শোনে নাই। স্বামীর প্রথম ভাির্ভসনায় মতির চোখের জল শুকাইয়া গেল! ম্যানেজার একদিন টাকা চাহিয়া গেল। মতি কুমুদেব ব্যাগ ও বাকসো-প্যাটরা হাতড়াইয়া দেখিযা বলিল, মোটে সাত টাকা আছে৷— টাকা বুঝি লুকিয়ে রেখেছ? কুমুদ বলিল, আর টাকা কোথায় যে লুকিয়ে রাখব? আর নেই? মাতিব মুখ শুকাইয়া গেল। কুমুদ হাসিয়া বলিল, সাত টাকা বুঝি কম হল মতি ? কী হবে। তবে ? কোথায় পাবে টাকা ? হোটেলে টাকা দেবে কী করে ? ভীত চোখে চাহিয়া থাকে মতি, বলে, রোজ তুমি জুয়া খেলে টাকা হেরে যাও, কেন খেল ? তাহার দুর্ভাবনার পরিমাণ দেখিয়া কুমুদের যেন মজা লাগিল। পাশে বসাইয়া বলিল, আমােব বউ হয়ে তুমি তুচ্ছ টাকার জন্য ভাবিছ মতি ? আজি সাত টাকা আছে আজ তো চলে যাক, কালোব ভাবনা কাল ভাবিব। ব্যবস্থা একটা কিছু হযে যাবেই মতি, টাকার জন্য কখনও মানুষের বেঁচে থাকা আটকায় না। উতলা মতি বলিল, সাত টাকায় কী করে চলবে? দিব্যি চলবে। দেখাই না কী করে চলে? চিরকাল এমনি কবে চালিয়ে এলাম। আমি জানি না ? তুমি কেন ভাবিছ? টাকার চিন্তা করাব কথা তো তোমার নয়! মতি তবু বলিল, হােটেলের টাকা দেবে কী করে? কাল যে দেবে বললে ? কুমুদ গভীর মমতায় ভীরু মেয়েটাকে বুকে জড়াইয়া ধরিল, বলিল, আবার ভাবে ও কথা ? ঘ্যানঘ্যান করার স্বভাব গড়ে তুলো না মতি, গিন্নির মতো মুখ কোরো না। কাল যা দেব বলেছি কাল রাত্রে বন্ধুরা ফিরিয়া গেলে একমুঠা টাকা পযসা কুমুদ বিছানায় ছড়াইয়া দিল। বলিল, দেখলে কোথা থেকে টাকা আসে? ভেবে তো তুমি মরে যাচ্ছিলে। মতি বিষগ্নভাবে বলিল, কালকে হেরে যাবে। আবার। কীইবা হবে। এ কটা টাকায়! সিগারেট ধরাইয়া কুমুদ কিছুক্ষণ স্তব্ধভাবে মতির দিকে চাহিয়া রহিল। তারপর ধীরে ধীরে বলিল, এত অল্প বয়সে তোমার এত হিসাব হয়েছে। আমি তা ভাবতে পারিনি মতি। টাকার দরকার তোমার তো এমন করে বুঝবার কথা নয়! ছেলেমানুষ তুমি, নিজে ফুর্তিতে থাকবে, কীসে কী হবে না হবে সে ভাবনা ভাবতে তোমার হবে বিরক্তি। তা নয়, টাকা কম পড়েছে বলে সারাদিন মুখ কালি হয়ে রইল! এত কচি ছিলে গাওদিয়ায়, এত পাকলে কখন ? কিছুই যে সেখানে তুমি বুঝতে না মতি, যা বলতাম শিশুর মতো মেনে নিতে আর হাঁ করে তাকিয়ে থাকতে মুখের দিকে ? ঠকিয়েছিলে নাকি আমায়, ছেলেমানুষিব ভান করে? মতি জবাব দিতে পারে না, কুমুদের অভিযোেগ ভালো করিয়া বুঝিতেও পারে না, তার শুধু কান্না আসে। ছেলেমানুষির ভান করিত ? সে কি এখনও ছেলেমানুষ নয়? টাকা নাই তাই টাকার কথা ভাবিয়াছে, তাতেই কি মানুষের ছেলেমানুষি ঘুচিয়া যায়। পরদিন টাকা চাহিতে আসিয়া ম্যানেজার খালি হাতে ঘুরিয়া গেল। টাকা থাকিতেও কুমুদ তাকে টাকা দিল না কেন মতি বুঝিতে পারিল না, ভয়ে কিছু বলিল না।