পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in 888 মানিক রচনাসমগ্ৰ পেন্টিং প্রভৃতি রং-বেরঙের অসংখ্য ছবিতে চারিটা দেয়াল এক রকম ঢাকিয়া গিয়াছে। খুব বড়ো একটা ছবি দেখিয়া মতি হঠাৎ লজ্জা পায়। জয় খিলখিল করিয়া হাসে, বলে উনি আমার উর্বশী-সতিন ভাই। আকাশ থেকে পৃথিবীতে নামছেন। কিনা, বাতাসে তাই শাডিখানা উড়ে গিয়ে পেছনের মেঘ হয়েছে। একজন সাতশো টাকা দর দিয়েছে, ও হাঁকে হাজার। আমি বলি দিয়ে দাও না। সাতশোয়েই, সাতশো টাকা কী কম, আপদ বিদেয় হোক। আসলে ওর বেচার ইচ্ছেই নেই। মতি বলিল, মুখখানা আপনাব মতো। তাই তো হাজার টাকা দর হাঁকে!-জয়া হাসিল। জয়ার সাহায্যে মতি ঘর গুছাইয়া ফেলিল। সামান্য জিনিস, জয়ার ঘরের সঙ্গে তুলনা করিয়া নিজের ঘরখানা মতির খালি খালি মনে হইতে লাগিল, খেলাঘরের মতো ঠেকিতে লাগিল। কিন্তু সেই দিন বিকালেই জিনিস আসিল। কোথা হইতে টাকা পাইল কুমুদ সেই জানে, হােটেলের পাওনা ফাঁকি দিক, কৃপণ সে নয়। টেবিল, চেয়ার, আলনা, বড়ো একটা তক্তপোশ আনিয়া সে ঘর বোঝাই করিয়া ফেলিল, নীল শেড দেওয়া সুন্দর একটি টেবিল ল্যাম্প ও মতির জন্য ভালো একখানা শাড়িও কিনিয়া আনিল । «ԳհիCՀii নতুন আশার সঞ্চারে মতির মন আবার মোহে ভরিয়া যায়। চৌকিতে সে সযত্নে বিছানা পাতে ; টেবিলে সাজাইয়া বাখে তাহার সামান্য প্রসাধনের উপকরণ ; কাপড় জমা কুঁচাইয়া গুছাইয়া রাখে আলনায়। টেবিল-ল্যাম্পে তেল ভরিয়া সন্ধ্যা হইতে না হইতেই জ্বালিযা দেয়। বারবাব সলিতাটা বাড়ায্য কমায়। কতখানি বাড়াইবে ঠিক করিতে পারে না। An আর বাড়াব? না কমিয়ে দেব? একটু কমিয়েই দি কী বল ? কুমুদ হাসিয়া বলে, থাক না, ওই থাক। জয়াই এ বোলা রাধিয়াছে। রাত্রে খাওয়া-দাওয়ার পর জয়ার জন্য ঘরে যাইতে মতির আজ প্রথম লজা করিল। জয়া দাঁত মাজিতে মাজিতে বলিল, দাঁড়িয়ে কেন ? ঘরে যাও। তুমি আগে যাও দিদি। কার ঘরে যাব, তোর ? হাসির চোটে দাঁত মাজা হয় না জয়ার। মতি অবাক মানে। কী এমন রসিকতা যে এত হাসি। তারপর মুখ ধুইয়া মতির হাত ধরিয়া জয় তাহাকে ঘরে লইয়া গেল। বলিল, ঘরে আসতে বউ তোমার লজা পাচ্ছে কুমুদ। কুমুদ চিত হইয়া বই পড়িতেছিল। বলিল, তাই নিয়ম যে। বােসো। না। যাই, ঘুম পেয়েছে, বলিয়া জয়া সেই যে চেয়ারে বসিল আর ওঠে না। বসিয়া বসিয়া গল্প করে কুমুদের সঙ্গে। কী যে সে গল্প আগামাথা কিছুই মতি বুঝিতে পারে না, থাকিয়া থাকিয়া জয়ার মুখ হইতে ইংবাজি শব্দ ছুটিয়া আসিয়া তাহাকে আঘাত করে। বন্ধু, জয়া কুমুদের বন্ধু! কুমুদ যখন রাজপুত্র প্রবীরের বুপ ধরিয়া গাওদিয়ায় উদয় হয় নাই তখন হইতে বন্ধু। ঈর্ষায় মতির ছােটাে বুকখানি উদবেলিত হইয়া ওঠে। সন্ধ্যার আনন্দের আর চিহ্নও থাকে না। হােটেলের বন্দী-জীবন ও কুমুদের বন্ধুদের আডিডা হইতে মুক্তি পাইয়া মতি এখানে হাঁপ ছাড়িয়াছে ; এখন শুধু গাওদিয়ার জন্য মন কেমন করে। আশায় কচি মেয়েটা বুক বাঁধিয়াছে, স্বপ্ন তো সে কম