পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in 83br মানিক রচনাসমগ্ৰ টের পাইয়া বনবিহারী ফিরিয়া তাকায়। তাকায় স্নেহপূর্ণ চােখে । বলে, সময় পেলেই তোমার একখানা ছবি এঁকে দেব খুকি! ছবি চাই না।--মতি বলে। কেন, রাগ হল কেন ? খুঁকি বলতে বারণ করিনি? বনবিহারী হাসে। বলে, যদিন তোমার খুকি না হয় খুঁকি ছাড়া তোমাকে কিছুটি বলব না বোন, কিছুটি নয়। এদিকে মতির চোখে পড়ে জয়া ইশারায় ডাকিতেছে। কাছে গেলে জয়া গম্ভীব মুখে বলে, ছবি আকবার সময় ওঁকে বিবক্ত করিস না মতি। মতি রাগিয়া ভাবে, ওঃ, একবার হুকুম শোনো মুটকির ! একদিন মতি তাহার হারটি খুজিয়া পায় না। শশীর উপহার দেওয়া হাব, কী হইল সেটা। আগের দিন কুমুদ দোকানে কিছু টাকা দিয়াছে, বাড়িভাড়ার টাকা দিয়াছে জয়ার হাতে। মতির তা মনে পড়ে, তবু বাক্সো-প্যাটরা আনােচ-কানােচ সে পাতিপাতি করিয়া খোজে। তালপুকুরের ধারে একদিন তাব কানের মাকড়ি হারাইয়াছিল, না বলিতে কুমুদ তাহাকে কিনিয়া দিয়াছিল নতুন মাকড়ি। আজ কি সে শশীর উপহার, তার বিবাহের অলংকার, তাকে না বলিয়া আত্মসাৎ করিবে ? হার হারাইয়াছে শুনিয়া জয়া অস্বস্তি বোধ করিতে লাগিল। দুটি গরিব পরিবাবের একসঙ্গে বাস করার এই একটা শ্ৰীহীন দিক আছে, একজনের দামি কিছু হারাইলে অন্যজনের মনে এই চিন্তাটা খচখচ করিয়া বিধিতে থাকে যে, কে জানে কার মনে কী ভাব জাগিতেছে! এ আর কে না জানে যে দাবিদ্র্য সবই সম্ভব করিতে পারে? খোজ মতি ভালো করে খোঁজ। কলতলায় পড়েনি তো? রান্নাঘরে ? “ মতি কঁাদিতে কঁদিতে বলিল, গলায় পরিনি তো, বাসকোয় ছিল। ও আর পাওয়া যাবে না দিদি ! কুমুদ ফিরিলে জয়াই তাহাকে খবরটা দিল। কুমুদ বলিল, হারাবে কেন? আমি বিকি কবেছি। সেকি কুমুদ ? জয়ার চমক লাগিল। কুমুদ বলিল, হার থেকে কী হত? টাকাটা কাজে লাগল। মতি কঁাদিতেছিল। জয়া বলিল, টাকা কাজে লাগে, হার কি কাজে লাগে না কুমুদ ? কুমুদ বলিল, গাযনা যে সব মেয়েমানুষের সর্বস্ব আমি তাদের দুচােখে দেখতে পারি না। জয়া এবার রাগ করিয়া বলিল, মেয়েমানুষ বোলো না কুমুদ, ছেলেমানুষ বলো। ছেলেমানুষ তো গয়না সম্বন্ধে আরও উদাসীন হবে। জয়ার রাগ বড়ো আশ্চর্য। মুখে চোখে দেখা দেয় না, কণ্ঠস্বরে ফুটিয়া ওঠে না, তবু টের পাওয়া যায়। সে বলিল, জগৎটা যদি তোমার মনের মতো হিত কী করে তাতে বাস করতাম ভাবি। বাড়িভাড়ার টাকা না হয়। পরেই দিতে ? কুমুদ বলিল, তুমি বুঝি ভেবেছ বাড়িভাড়ার টাকা দেবার জন্যই আমি হার বিকি করেছি? অনেকদিন থেকে তোমায় জানি কুমুদ, আমার কাছে হেঁয়ালি কোরো না। জয়া আর দাঁড়াইল না। সজল চোখে মতি চাহিয়া দেখিল যে জীবনে আজ প্রথম কুমুদের মুখ কালো হইয়া গিয়াছে! তখন সকাল। সারাদিন মতি মুখভার করিয়া রহিল। কুমুদ তাহাকে একবারও ডাকিল না। বেলা পড়িয়া আসিলে মতির বুক ফুলিয়া কঁপিয়া উঠিতে লাগিল। এ কী অবহেলা কুমুদের? গয়নার জন্য কত কষ্ট হইয়াছে তার মনে, ডাকিয়া দুটি মিষ্টিকথা পর্যন্ত সে তাকে বলিল না? দোষ স্বীকার করিয়া