পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOOkS. in পুতুলনাচের ইতিকথা 86, Ղ দিন যায়। আবির্ভাব ঘটে বর্ষার। ঘরের জানােলা দিয়া, রেলিং দেওয়া সরু বারান্দায় দাঁড়াইয়া শুধু ইটের অরণ্য চোখে পড়ে মতির, তবু তারও মধ্যে সে গাওদিয়ার ছাপ আবিষ্কার করে। দক্ষিণের দোতলা বাড়িটা ডিঙাইয়া কোনো এক বড়োলোকের বাগান চোখে পড়ে, সেখানকার পামগাছগুলি যেন ইঙ্গিতে মতিকে গাওদিয়ার তালবনের কথা জানায়। নীচে গলিতে উড়িয়ার মুড়ি-মুড়কির দোকান দেখিয়া মাতিব মনে পড়ে গাওদিয়ার বিপিন ময়রার দোকানের কথা, —গ্রাম্যবেশে অচেনা লোককে পথ দিয়া যাইতে দেখিলে গাওদিয়ার চেনা লোকের কথা মনে পড়ে। এখানকার আকাশে যে চিল ভাসিয়া বেড়ায়, তাদেবও গাওদিয়ার আকাশের চিলের মতো দেখায়। আকাশে মেঘ ঘনাইয়া বৃষ্টি নামাও গাওদিয়ার চির-পরিচিত বর্ষার নিখুঁত নকল। একদিন সত্যসত্যই মতির গহনা লইয়া কুমুদ বেচিয়া আসে। কিছুক্ষণের জন্য মতির যে একটু খারাপ লাগে না তা নয়, প্রথমবার হারের জন্য যে রকম কান্না আসিয়াছিল। সে রকম দুঃখ মতির একেবারেই হয় না। কুমুদ ফিরিয়া আসিতে আসিতে মৃদু অশান্তিটুকুও তাহার মন হইতে মুছিয়া যায়। আবদাবি করিযা বলে, গয়না বেচলে আমার, কী আনলে শুনি আমার জন্যে ? কুমুদ বলে, কিছু আনিনি। তা আনবে কেন, আনবে তো না-ই! অভিমানে কুমুদেব গলা জড়াইয়া ধরে মতি, বুকে মুখ লুকাইয়া ছলনাভরে মৃদু মৃদু হাসে। বিরাট শহবের কয়েক ফিট উধের্ব এই ছোটাে শহুরে ঘরখানায় অভিনেতা স্বামীর কণ্ঠালগ্ন মতিকে দেখিয়া কেহ চিনিবে না। সে গাওদিয়ার সেই মতি। বিপজ্জনক মানুষ কুমুদ, বাঁধন কাটিয়া কাটিয়া তার এতকাল জীবন কাটিল, দায়িত্ন-জ্ঞানহীন নির্মম মানুষ সে, তারই পরে আজ মতির নিশ্চিন্ত নির্ভর দেখিলে চমক व्र6 ।। তখন কুমুদ বলে, তোমার জন্যে একটা জিনিস। এনেছি মতি। কই, দাও। কুমুদ তাহাকে পকেট হইতে সেই হার বাহির কবিয়া দেয়, আজ যে গয়না বেচিতে গিয়াছিল। তাও ফেরত দেয। নাটক করিয়া কবিয কী নাটকই কুমুদ করিতে শিখিয়াছে! সহজভাবে সরলভাবে কোনো কাজ কবা কুমুদের কুষ্ঠিতে লেখে না। আহ্বাদে মতিব কথা জড়াইয়া যায়। এ তো শুধু গািযন পাওযা নয। আরও কত কী কুমুদ এই সঙ্গে তাহাকে দিয়াছে, তাহার অবোধ বালিকা বধূকে। টাকা পেলে কোথায় ? বড়োলোক বন্ধুর কাছে ধার করলাম। মতি হি হি করিযা হাসে, ধার না ধার, ফেরত যা দেবে তা জানি! কুমুদও হাসিয়া বলে, তার ঢের টাকা আছে। না দিই না দেব ফেরত, তার কিছু এসে যাবে At অনা লোক দিয বিনোদিনী অপেরার অধিকারীর কাছে কুমুদ একটা খবর পাঠাইয়াছিল। দুদিনেব মধ্যে কুমুদের ঘরে তাহার আবির্ভাব ঘটিল। ঘরে ঢুকিয়াই বলিল, আচ্ছা লোক বটে তুমি যা হােক কুমুদ ! কী বলে আমন করে পালিয়ে গেলে শুনি ?—একেবারে পাত্তা নেই তোমার! কুমুদ হাসিয়া বলিল, বসুন ঘোষমশায়, বসুন। ভালো আছেন? দলটা চলছে কেমন ? খাসা চলছে। তুমি যাবার পর দলের আরও উন্নতি হয়েছে। কুমুদ বলিল, বেশ বেশ, শুনে বড়ো সুখী হলাম। বড়ো রেগেছেন আমার পরে না ? এ কথার জবাবে কুমুদকেই মধ্যস্থ মানিয়া অধিকারী বলিল, রাগ হয়। কিনা তুমিই ভেবে দ্যাখে। আগাম অতগুলো টাকা নিয়ে কোথায় যে পালিয়ে গেলে—