পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOOkS. in পুতুলনাচের ইতিকথা 8GS না, তুমিই লেখো। মতি গভীব মুখে বলে, তুমি তবে ঠিকানা লিখে দিয়ে, অ্যা? মতির এই চিঠির জবাবে পরান ও শশী দুজনেই কলিকাতা আসিল। শশীর আগমনটা শুধু মতিকে দেখিবার জন্য নয, কাজ ছিল। কুমুদকে শশী অনেক কথা বলিবে ভাবিয়াছিল, কিছুই বলা হইল না। মতিকে দেখিযা সে বাক্যাহারা হইয়া গেল। এই মতি কি তার চোখের সামনে বডো হইয়াছিল। গাওদিয়াব গ্রাম্য আবহাওয়ায? এ যেন শশীর অচেনা মেয়ে, অজানা জগতে এতকাল বাস কবিঘা আজ প্রথম তাৰ সামনে আসিয়া দাডাইয়াছে। ফ্যাল ফ্যাল করিয়া হবার মতো যে চাহিয়া থাকিত, জলে ধোয়া আলোেব মতো কী স্নিন্ধোেজজুল তার চাহনি এখন! কী ভারী চলন মতির কী রমণীয় তাব ভঙ্গিমা। মাতিব অঙ্গুলি-হেলনও আজ যেন মধুর, অর্থময়। মনে হয়, তার দেহ মন যেন অহরহ কার আকর্ষণ ও আহ্বানের জন্য প্রতিটি মুহূর্ত উদ্যত, উৎকৰ্ণ হইয়া আছে। কুমুদ একান্তে বলিল, কী রকম দেখছিস শশী মতিকে ? ওকে তুই কী করেছিস কুমুদ ? কিছুই কবিনি। শুধু কথা বলেছি আর চুপ করে থেকেছি। বিন্দুরও পরিবর্তন হইয়াছিল, এও পরিবর্তন। শশী ভাবিত হইয়া বলিল, গাওদিয পাঠাচ্ছিাস, সেখানে ব্ৰ’ন্সতে পাববে। কিনা ভাবছি কুমুদ। এ তোর কী বকম ভাবনা শুনি ? গাওদিয়ায় বড়ো হল, সেখানে গিয়ে থাকতে পারবে না ? বিন্দুও গাওদিয়ায় বড়ো হইয়াছিল, সেখানে গিয়া থাকিতে পারে নাই। কিন্তু শশী আর কিছু বলিল না। সারাদিন সে বিমনা হইযা রহিল। মতির চোখে যখন বিদ্যুৎ চমকিয়া যায়, কুসুমের চােখের সঙ্গে তখন সে তুলনা করে। এ আলো তাহার চোখে নাই। কুমুদের কাছে আজ আবার নিজেকে শশীর ছোটো মনে হইতে থাকে। মতির সুখে আনন্দে উজ্জ্বল মুখচ্ছবি, মতির পুলকমন্থর গতিশ্ৰী দেখিয়া মাঝখানে কুমুদের সম্বন্ধে যতটুকু অবজ্ঞা মনে আসিয়াছিল সব যেন আজ মুছিয়া যায়। কুমুদের জীবনের যা মূলমন্ত্র তাব সন্ধান শশী কখনও পায় নাই ; আজ ওই বিষযেই শশী চিন্তা করে। কী আছে কুমুদেব মধ্যে, দুর্বোধ্য গোপন সম্পদ, জীবনকে আগাগোড়া ফাকি দেওয়া সত্ত্বেও যাহা জীবনকে তাহার ঐশ্বর্ষে ভবিয়া রাখিয়াছে ? এতকাল খবর না দেওয়ার জন্য পরান ও শশীব কাছে মতি প্রথমটা একটু সংকোচ বোধ কবিতেছিল, ও বিষয়ে কেহ অনুযোগ না দেওয়ায় অল্পক্ষণের মধ্যেই সে কথাটা ভুলিয়া গেল। পরান খুব রোগ হইযা গিয়াছে, তাহার বিষন্ন শূন্ধ মুখ দেখিয়া বড়ো মমতা হইতে লাগিল মতিব। বারবার সে জিজ্ঞাসা করিলা কী অসুখ হইয়াছে পরানের। তারপর খুঁটিয়া খুঁটিয়া গ্রামের কথা, মোক্ষদা। ও কুসুমের কথাও জানিয়া লইল। একটু সলজ্জ মতি, একটু সাহসী! একজনের বউ হিসাবে দাদা ও শশীর কাছে ধরিতে গেলে এই তার প্রথম দাঁড়ানো, নিজের বাড়িতে নিজের সংসাবে বাপেব বাড়ির সংবাদ জানিতে একটু গৃহিণীর মতো ভাব দেখানোর অধিকারও তার ন্যায্য। ভাদ্রমাসের গবম, পাখা লইয়া মতি ওদের বাতাস করিল, তৃষ্ণায় জোগাইল শীতল জল। মতির কাজ আজ কত নিখুঁত, কত কোমল তাহার সামান্য সেবা। অনেক যত্ন করিয়া মতি আজ রান্না করিল। খাইতে বসিয়া শশী ংসা করিল রান্নার, পরান। কিন্তু এক রকম কিছুই খাইল না। মতি অনুযোগ দিলে বলিল, গলায় একটা ঘা হয়েছে মতি, ঝোল তরকারি খেতে কষ্ট হয়। গলায় ঘা হয়েছে? কেন ?