পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in 8 V8 মানিক রচনাসমগ্র পরানের গলার ঘা শশী যত পরীক্ষা করে ততই তার মুখ গভীর হইয়া আসে। বলে টোক গেলো পরান, টোক গেলো। কেন পারিছ না? পারা তো উচিত। আচ্ছা, একটু জল খাও তবে । টোক গিলতে না পাবার মতো অবস্থা তোমার হয়নি। পরান, ভয়ে পারছি না। জল খাইয়া পরান একটু সুস্থ হয়। টোকিও গেলে। একটু হাসিবার চেষ্টা করিয়া বলে, হঠাৎ কেমন ভয় হল ছোটোবাবু, প্ৰাণটা কেমন আঁকুপাকু করে উঠল। শশী বলে, না খেয়ে না খেয়ে যা শুকিয়েছ প্ৰাণটাকে, আঁকুপাকু করবে না ? রোজ একবার এসে দেখিয়ে যেও গলাটা, আজ ঠিক বুঝতে পারলাম না। একটা ওষুধ লাগিয়ে দিচ্ছি, বিকালে আর একবার নিজে লাগিয়ো। তুলিতে করিয়া পরানের গলায় ওষুধ লােগাইয়া বলে, পারবে দিতে নিজে ? না পার তো কাজ নেই, ও বেলা একবার খাবখন তোমাদের বাড়ি, লাগিয়ে দিয়ে আসব। পরান বিদায় নেয়। খোলা জানালায় দাড়াইয়া শশী তার লম্বা পা দুটির ছোটাে ছোটাে পদক্ষেপ চাহিয়া দেখে। তারপর টেবিলেব সামনে চেয়ার টানিয়া বসিয়া মোটা একটা ডাক্তারি বই খুলিয়া নিবিষ্টচিত্তে পড়িতে আরম্ভ করে। মাঝে মাঝে মুখ তুলিয়া ভাবে, অন্য বই টানিয়া পাতা উলটায, কী একখানা বই খুজিয়া লইতে সমস্ত বইয়ের নামের উপর চোখ বুলায়। তারপর অসময়ে ব্যস্তভাবে শশী আজ বাড়ি ফেরে। আলমাবি খুলিয়া একখানা বই লইয়া পড়িতে বসে। বেলা পড়িয়া আসিলে হাসপাতালে যাওয়ার আগে সে পরানের বাড়ি গেল। অনেক দিন যায নাই। অনেক দিন আর কত, দিন কুড়ি। অবস্থা বিশেষে তাও দীর্ঘকাল হইযা উঠে। পবান বাড়ি ছিল না। মাঠে গিয়াছে। এখন রবিশস্য বুনিবার সময় দুর্বল শরীরেও মাঠে না গেলে তার চলে না। কুসুম বলিল, বললাম যেও না, তবু গেল। বলে গেছে। শিগগির আসবে। শশী বলিল, শিগগির আসবে। শিগগির আসবে বলে হা করে বসে থাকব নাকি আমি ? আমাব কাজে নেই ? কাজের মানুষ বুঝি একটুও বসে না ? দুদণ্ড আয়েস করতে বসলে মনে খুঁতখুঁতনি ধবে, এ রোগ ভালো নয় ছোটােবাবু। চাকর তো নন কারও, আঁ্যা ? শশী বলিল, বাডি খালি দেখছি? পরানের মা কই ? কুসুম উদাসভাবে বলিল, কে জানে কোথায় গেছে! বুড়ি যা পাড়া-বেড়ানি! শশী সন্দিগ্ধভাবে বলিল, তুমি পাঠাওনি কোথাও, ছল করে ? আমি ? আমি পাঠাব?-লজায় মুখ লাল করিয়াও কুসুম একটু হাসিল, বলিল কী মানুষ বাবা! যদি পাঠিয়েই থাকি ছল করে, এমন স্পষ্ট করে সে কথা বলতে হয়! কী রকম বিচ্ছিবি লাগে শুনলে ? শশী বলিল, আজ তোমার কথা কিন্তু ভারী মিষ্টি লাগছে বউ ! মিষ্টি খেয়ে মুখটা আজ মিষ্টি হয়ে আছে। শশী খুশি হইয়া বলিল, তোমার হাসি দেখলে প্ৰাণ জুড়িয়ে যায় বউ। লোকজনের ভিড়ে জ্বালাতন হই, তুমি ছাড়া এমন করে আমার কাছে আর কেউ হাসে না। আমার একটিও বন্ধু নেই বউ। বউও নেই!-কুসুম নিখুঁত পরিপূর্ণ হাসি হাসিল। তারপর সে জিজ্ঞাসা করিল, ওর গলায় কী হয়েছে? শশী বলিল, আজ বলব না, পরশু শুনো। কেন, আজ বলতে দোষ কি? নিজে আগে জেনে নিই ভালো করে, তবে তো বলব? দুধ ছাড়া ওকে আর কিছু খেতে দিয়ো भी वठ ।